সকল মেনু

দেশের ই-কমার্স খাত প্রস্তাবিত বাজেটে বিপাকে

basis1433844025 বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রতিবেদক : ২০১৫-১৬ সালের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে অনলাইনে পণ্য ও সেবা বিক্রয় ও সরবরাহে বা ই-কমার্স খাতে ৪ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে সম্ভাবনাময় ও বিকাশমান এ খাতটি হুমকির মুখে পড়বে বলে আশংকা করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ই-কমার্স অ্যালায়েন্স।

৯ জুন মঙ্গলবার, বেসিস সভাকক্ষে দেশের ই-কমার্স সেবার প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্স’ আয়োজিত ‘বাজেট প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ঠরা এই আশংকার কথা প্রকাশ জানান।

ই-কমার্সের ওপর ভ্যাট আরোপ হলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে এবং কী কারণে ভ্যাট প্রত্যাহার করা উচিত সে সম্পর্কে অনুষ্ঠানে জানানো হয়:

* আমাদের দেশে অনলাইন কেনাবেচা বা ই-কমার্স একটি নতুন ব্যবসা। এখনো এই খাত একটি লাভজনক ইন্ডাস্ট্রি হিসাবে দাড়াতে পারেনি। এই খাতে বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই বয়সে তরুণ এবং ‘ফার্স্ট জেনারেশন’ উদ্যোক্তা যারা নিজস্ব তহবিল থেকে এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে। বেশিরভাগ উদ্যোগই ক্ষুদ্র বা মাঝারি পর্যায়ের। ই-কমার্স ব্যবসার একটি বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে এই ব্যবসার প্রথম দিকে প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। অন্যান্য দেশের মত এই দেশেও এই ব্যবসায় প্রথম পর্যায়ে অনেক সময় ও বিনিয়োগ প্রয়োজন হয় নতুন অনলাইন ক্রেতা তৈরি করতে। আমাদের দেশের ই-কমার্স সাইটগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতামূলক দামে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করা। যেহেতু দেশে এখনো ই-কমার্সের জন্য পণ্য পরিবহন এবং অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম পুরোপুরি তৈরি হয়নি, সেহেতু প্রতিটি ই-কমার্স সাইটকে বড় অংকের ভুর্তুকি দিতে হয় প্রতিটি ট্রানজেকশনের জন্য (গড়ে ১,০০০ টাকার পণ্য বিক্রির জন্য পরিবহন ও পেমেন্ট কালেকশন বাবদ অতিরিক্ত খরচ হয় ১৫০ টাকা)। তদুপরি, প্রতিটি ই-কমার্স সাইট নতুন অনলাইন ক্রেতা-ভিত্তি তৈরির জন্য এই পরিমান ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে ৪% ভ্যাট আরোপ হলে সেটিও উদ্যোক্তাদেরকেই বহন করতে হবে এবং ফলশ্রুতিতে এই নতুন খাত বেড়ে উঠার আগেই হুমকির মধ্যে ফেলবে।

* দেশের ই-কমার্স সাইটগুলো যে সকল পণ্য বিক্রি করে তার প্রায় সবই দেশের যেকোনো স্থানের মার্কেটে অথবা ছোটো বা মাঝারি দোকানগুলোতে বিক্রি হয়। কিন্তু এই সকল দোকানে প্রযোজ্য ভ্যাট-এর প্রকৃত হার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নগন্য (বেশির ভাগ সাধারণ দোকানে প্যাকেজ ভ্যাট প্রযোজ্য যা বছরে ১৪ হাজার টাকার বেশি না)। এ ছাড়াও ঢাকা বা চট্টগ্রামের মত বড় শহরের বাহিরে পর্যাপ্ত ভ্যাট আদায় পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (Supervision System- যেমন ECR সিস্টেম) না থাকার কারণে বেশিরভাগ দোকানেই সঠিকভাবে ভ্যাট হিসাব প্রযোজ্য হয় না। এই প্রেক্ষিতে অনলাইন কেনাবেচায় ৪% ভ্যাট প্রয়োগ হলে ই-কমার্স সাইটগুলো কোনোভাবেই প্রতিযোগিতামূলক দামে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। অনলাইন ক্রেতাদের বড় অংশই ঢাকা ও চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন অঞ্চলের বাহিরে সারা দেশে অবস্থিত।

* ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর অন্যতম অনুসঙ্গ ডিজিটাল কমার্স এবং ক্যাশ-লেস/ডিজিটাল পেমেন্ট। যত বেশি ট্র্যানজেকশন অনলাইনে হবে তত বেশি অর্থনৈতিক ও ব্যবসা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসবে। বিগত কয়েক বছরে দেশে ব্যাংকিং সেবার প্রসার (বিশেষ করে মোবাইল পেমেন্টের উন্নতি) অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে ইনফরমাল থেকে ফরমাল পর্যায়ে উত্তরণের বিশাল সম্ভবনা সৃষ্টি করেছে।

ই-কমার্স সাইটগুলো তাদের নিজেদের সকল হিসাব ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে। প্রতিটি কেনাবেচা বা পেমেন্ট ট্র্যাক করা যায়। এই প্রেক্ষিতে যদি ই-কমার্স সাইটগুলো দোকান বা ব্যবসার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারে এবং দেশে অনলাইন বাণিজ্য প্রসার লাভ না করে, তাহলে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বানিজ্য ইনফরমাল (নগদ লেনদেন ভিত্তিক) থেকে ফরমাল পর্যায়ে উত্তরণের সম্ভবনা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে (উদাহরণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ব্যবসা লেনদেনকে ডিজিটাল (ক্যাশলেস ও স্বচ্ছ) করার প্রণোদনা দিতে অনলাইন কেনাকাটাকে ভ্যাট বা সেলস ট্যাক্স এর আওতা বহির্ভূত রাখা হয়েছে।

* বর্তমানে প্রতি বছর যেই পরিমান ই-কমার্স/অনলাইন লেনদেন হচ্ছে তার পরিমান বছরে ১০০ কোটি টাকার বেশি না। এই প্রেক্ষিতে ৪% ভ্যাট সরকারের রাজস্ব তহবিলে বছরে ৩-৪ কোটি টাকার বেশি যোগ করবে না।

অপর দিকে এই সেক্টর কয়েক হাজার তরুণ উদ্যোক্তার নতুন আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ইতিমধ্যেই কয়েকশ ই-কমার্স সাইটের উদ্যোক্তা যেমন তৈরি হচ্ছে, এর পাশাপাশি এই সাইটগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে পণ্য বিক্রি হবার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় কয়েক হাজার নতুন ক্ষদ্র ও মাঝারি পণ্য উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়াও এই খাতে আগামী কয়েক বছরে চাকরির আরো বিশাল বাজার (সফটওয়্যার, আইটি, কাস্টমার সাপোর্ট, অনলাইন মার্কেটিং, গ্রাফিক্স/ফটোগ্রাফি, লজিস্টিকস, ডেলিভারি ইত্যাদি) সুযোগ সৃষ্টি হবে। পরিপূর্ণ বিকাশ হবার আগেই ‘অনলাইন লেনদেনে ৪% ভ্যাট উদ্যোক্তা’ সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের এই বিশাল সম্ভাবনাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলবে।

বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুরের সভাপতিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেসিস সভাপতি শামীম আহসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, মহাসচিব উত্তম কুমার পাল, কোষাধ্যক্ষ ও বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্সের সহ-আহ্বায়ক শাহ ইমরাউল কায়ীশ, পরিচালক সামি আহমেদসহ বেসিস কার্যনির্বাহী কমিটি ও বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top