সকল মেনু

‘বাংলার মানুষের সংবর্ধনা প্রাপ্য’- শেখ হাসিনা

Sheikh_hasina_051432910359 নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকের সংবর্ধনা আমার প্রাপ্য নয়। এটা বাংলার মানুষের প্রাপ্য। আমি চাই, সবকিছু বাংলার মানুষের জন্য উৎসর্গ করতে।’

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরনো স্মৃতি স্মরণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘দেশে ফেরার পর আমি খুঁজেছিলাম আমার স্বজনদের। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমি এই বাংলার মানুষের কাছে পেয়েছিলাম সেই স্নেহ, যে স্নেহ-মমতা দিয়েছিলেন আমার মা-বাবা।তখনই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যারা আমাকে স্বজনহারা করেছে তাদের বিচার করব।’

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের কালরাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মর্যাদা ধূলিস্মাৎ করে বাঙালিকে পরাজিত করতে চেয়েছিল তারা। আমি সেই মর্যাদা ফেরাতে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বাবা মন প্রাণ দিয়ে বাংলাদেশ ও এদেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। দেশে ফিরে আমি তার দেখানো পথে মানুষের কল্যাণে ও দেশ গঠনে নেমে পড়ি।

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি। এরপর ২০০৯ সালে আবারও সরকার গঠন করি। আবারও দেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করি। তারপর দেশের মানুষ আবারও আমাকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি বাংলার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাই এ সংবর্ধনা কেবল আমার প্রাপ্য নয়, এ সংবর্ধনা বাংলার মানুষের প্রাপ্য। তাই আমি এ সম্মাননা বাংলার জনগণকে উৎসর্গ করছি।

ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটি এ সংবর্ধনার আয়োজন করে । নাগরিক কমিটির সভাপতি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক এতে সভাপতিত্ব করেন।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দলে দলে মিছিল নিয়ে এই নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন।

বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠান শুরুর পর জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক লেখক সৈয়দ শামসুল হক সূচনা বক্তব্য দেন। এর পর সৈয়দ শামসুল হকের রচিত ‘মর্ম সংগীত’ এবং নৃত্য পরিবেশিত হয়। নৃত্যাঞ্চলের সদস্যরা দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অভিজ্ঞানপত্র পাঠ করেন। এর আগে, শেখ হাসিনার হাতে নৌকার প্রতিকৃতির স্মারক তুলে দেন নাগরিক কমিটির সভাপতি সৈয়দ শামসুল হক। আর অভিজ্ঞানপত্র পাঠের পর কাঠের উপর শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি সম্বলিত একটি স্মারক আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর হাতে তুলে দেন আনিসুজ্জামান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অনুপম সেন, অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান, ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন।

বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে সংগীত পরিবেশনা। মিতা হক ও মহিউজ্জামান চৌধুরী গেয়ে শোনান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি, তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!’

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যে বৈদেশিক নীতি আমাদের শিখিয়েছেন ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- সেই নীতিতেই আমরা সরকার পরিচালনা করছি। তাই যখনই প্রতিবেশিদের সঙ্গে মিলিত হই, তখন আমরা বলি- আমাদের সবার একটিই শত্রু, দারিদ্র্য। এই দারিদ্র্য দূর করতে হবে। সেটা আমরা সম্মিলিতভাবে করবো। এই সম্মিলিত কাজের মানসিকতার সুফলে আমরা গঙ্গা চুক্তি করেছি। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে যে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়। আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি।

দেশ আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের ‘বটমলেস বাস্কেট’ বলে কটূক্তি করা হয়েছিল, এখন আমরা বলতে চাই, বটমলেস ‍বাস্কেট আর নেই, বাস্কেট এখন ভরপুর। বাঙালিরাও ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একসময় মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছিল। ওই দুঃসময়ের পর দেশে কেবল দুর্নীতি আর সন্ত্রাস এসব ছিল। এসবে মুষ্টিমেয় কিছু লোক লাভবান হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটা কথাই চিন্তা করি, জাতির পিতার নেতৃত্বে যে দেশ ‍স্বাধীন করেছি, সে দেশের প্রতিটি মানুষ নিজের অধিকার ভোগ করবে। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমি শাসন করতে আসিনি, জনগণের সেবা করতে এসেছি। এক মুহূর্তের জন্য ভুলি না আমার পিতা এ দেশের মানুষকে ভালবেসেছেন। যে মাটির মানুষকে ভালবেসে আমার পিতা মৃত্যুবরণ করেছেন, কারাবরণ করেছেন, সে মাটির মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা দিতে হবে, ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য সেবা দিতে হবে, জীবনকে মানসম্মত করতে হবে। সেভাবে আধুনিক শিক্ষা দিতে হবে। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, আত্মপরিচয় দিয়েছেন। তাদের বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে হবে।

বহুল প্রতীক্ষিত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসায় প্রধানমন্ত্রী ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কেবল স্থল সীমান্ত চুক্তি নয়, এ ধরনের আরও অনেক সমঝোতা ও চুক্তি করে এই অঞ্চলকে উন্নত করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিত করতে হবে। এ কারণেই ২০২১ সালের ভিশন নেওয়া হয়েছে। ২০৪১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। সে সময় ক্ষুধার্ত জাতি হিসেবে নয়, উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়াবো আমরা।

শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়ে গেছে। এই বিচার শেষ করতে আমি দেশবাসীর সহযোগিতা চাই যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আমরা সমুন্নত রাখতে পারি।

দারিদ্র্যই বাংলাদেশের একমাত্র শত্রু উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই দারিদ্র্য থেকে আমাদের দেশকে মুক্ত করতে হবে। দেশের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সরকার দারিদ্র্য নির্মূলে সফল হবে বলে আশাবাদও ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির জন্য যেকোনো আত্মত্যাগে প্রস্তুত এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মৃত্যুভয় করি না। জন্মেছি যেহেতু একদিন মরতে হবে। বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আরো অনেক দূর পথ চলতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top