সকল মেনু

ঝুঁকি ধারণাতীত , গর্ত ভরাতে লাগবে ১৫০০ ট্রাক বালু

Sundarbon-Hotel-dos-5 মেহেদি হাসান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: রাজধানীর পান্থপথে হোটেল সুন্দরবন সংলগ্ন রাস্তার পশ্চিমপাশে নির্মাণাধীন ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের বহুতল ভবনের পাইলিংয়ের জন্য খোঁড়া গর্তে দেবে গেছে পার্শ্ববর্তী রাস্তার একটি অংশ। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে হোটেল সুন্দরবনের আট তলা ভবনটি। এতে ধারণার চেয়েও বেশি ঝুকিপূর্ণ ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকাগুলো। এমনটাই মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।

বুধবার বিকেল ৪টায় বুয়েট ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গে পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন।

আনিসুল হক বলেন, ‘বুয়েট ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমাকে জানিয়েছে- ঘটনাস্থলের আশপাশের সড়কগুলো বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন সেখানে প্রচুর বালু ভর্তি করা দরকার। এজন্য প্রায় ১৫শ ট্রাক বালি দরকার।’

তিনি বলেন, ‘সকালে আমার যে ধারণা ছিল তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।’

কাজ করছে একাধিক প্রতিষ্ঠান
গর্তের কারণে রাস্তা ধসে পড়ার ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন, ডেসকো, ওয়াসা, তিতাসসহ বেশকয়েকটি প্রতিষ্ঠান পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করছে। সকালে হোটেল সুন্দরবনের একটি ভবনে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মিটিং করেছেন উত্তরের মেয়র আনিসুল হক।

বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনা এতোই ঝুকিপূর্ণ যে সেটা স্বাভাবিক করতে প্রচুর বালু প্রয়োজন। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তার এই সহযোগিতা চাওয়ার পরই দুই সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ কয়েকটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রচুর বালু নিয়ে এগিয়ে আসে।

থানায় জিডি
নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ম্যাম ইনটেক্স ও এম এক্স কন্সট্রাকশন লি. নামের দু’টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে হোটেল সুন্দরবন কর্তৃপক্ষ। বুধবার বেলা ১১টায় এ জিডিটি করা হয়।

জিডিতে বলা হয়েছে, এ কাজের জন্য হোটেল সুন্দরবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোনো সময় ধসে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আগেই এ ব্যাপারে নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান দু’টিকে বারবার তাগিদও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এসবের কোনো তোয়াক্কা না করেই কাজ চালিয়ে গেছে। ফলে এমন দুর্ঘটনা ঘটলো।

হোটেল সুন্দরবন ফাঁকা
এদিকে বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কায় খালি করা হয়েছে হোটেল সুন্দরবন। বুধবার সকালে পাশের নির্মাণাধীন ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের বহুতল ভবন এনবিএল টাওয়ারের পাইলিংয়ের জন্য খোঁড়া গর্তে সুন্দরবন হোটেলের কিছু অংশ ও এর পাশের সি আর দত্ত রোডের কিছু অংশ ধসে পড়ে।

এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ লোকজন এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। পরে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হোটেলে অবস্থানরত সবাইকে সরিয়ে নিতে পরামর্শ দেন।

এরপর ফায়ার সার্ভিস সবাইকে স্থান ত্যাগ করতে নির্দেশ দেয়। এতে পুরো হোটেল ফাঁকা হয়ে যায়। হোটেলটিতে বেশকিছু বিদেশিও ছিলেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক মেজর শাকিল নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটু ভারী বৃষ্টি হলে এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে। তাই বুয়েট বিশেষজ্ঞ টিমের পরামর্শক্রমে হোটেল খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

প্রয়োজনে সেনা সহায়তা
প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন। বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে দুই মেয়র সাংবাদিকদের এক কথা জানান।

আনিসুল হক বলেন, ‘আমি খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে চলে এসেছি। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগও করেছি। রাজউক চাইলে তারা অতিদ্রুত ঘটনাস্থলে চলে আসবে।’

সাঈদ খোকন বলেন, ‘বড় ধরনের যে কোনো ঝুঁকি এড়াতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’

এদিকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর একটি দল, র‌্যাব ও পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বলছে- রাতের মধ্যে স্থানটিকে ঝুঁকিমুক্ত করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তদন্ত কমিটি গঠন
দুর্ঘটনার কারণ জানতে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রাজউক, দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড এবং সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে।

নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য
নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ম্যাম ইনটেক্সের নির্মাণ পরামর্শক প্রকৌশলী আবদুল বারী  হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের অনুমোদিত নকশা ও প্রতিষ্ঠিত ডিজাইনারদের ডিজাইন মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। তারপরও কেন ধসে পড়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। আমরা খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত স্থান মেরামতের কাজ করছি।’

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আখতারুজ্জামান হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘রাতের মধ্যে এ স্থানটিকে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করতে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও আছে। প্রয়োজন হলে তাদের সহায়তা চাইবো। আমাদের পাইলিংয়ে কোনো ত্রুটি ছিল না।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top