সকল মেনু

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা; চিকিৎসকদের অনিদ্দিষ্ট কালের ধর্মঘট

unnamedগৌরাঙ্গ লাল দাস,গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর চিকিৎসক ও নার্সকে মারধরের প্রতিবাদে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার সকল সরকারী ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের ধর্মঘট চলছে। এ দিকে হাসপাতাল ভাংচুরের ঘটনায় টুঙ্গিপাড়া থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করেছে।
শনিবার সকাল থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে। জেলার চিকিৎসকরা গোপালগঞ্জ হাসপাতালের হলরুমে এক জরুরী বৈঠকে বসেন। এ সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ডা.সামিউল ইমলাম সাদি গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সভায় চিকিৎসকরা হাসপাতালে সামনের অবৈধ স্থাপনা অপসারন, হাসপাতাল এলাকায় পুলিশবক্স স্থাপন, হামালাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। পরে এ ঘটনার বিচারের দাবিতে চিকিৎসক ও নার্সরা শনিবার দুপুর দেড় টা থেকে গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেড জেনারেল হাসপাতালের সামনে ১ ঘন্ট মানব বন্ধন  কর্মসূচী পালন করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ডা.সামিউল ইমলাম সাদি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স  সূত্রে জানাগেছে, গত ১৯ মে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের ননী গোপাল বালার মেয়ে মনা ভারতী  অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। অতিসম্প্রতি সে হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে খাদিজাতুল কোবরা নাম ধারন করে। সে টুঙ্গিপাড়ার উপজেলার গহরডাঙ্গা গ্রামের আকবার হোসেনকে ধর্ম পিতা ডাকে।
শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে  সে হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স  কাকতী রানী পাল তার শরীরে ইনজেকশন পুশ করেন। এর পরপরই সে মারা যায়।
একজন নও মুসলীম রোগীকে হাসপাতারের হিন্দু নার্স ইনজেশন পুশ করে মেরে ফেলেছে -এ খবর গুজব আকারে এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে  হাজার হাজার ক্ষুদ্ধ জনতা ও স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্ররা সংঘবদ্ধ হয়ে হাসপাতালে হামলা ও ভাংচুর চালায়।
এসময় তারা  ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের বেধড়ক  মারপিট, অফিস, ডাক্তার-নার্স  ও কর্মচারীদের বাসভবন ভাংচুর -অগ্নিসংযোগ চালিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় ভয়াবহ তান্ডব সৃষ্টি করে। তাদের এ হামলায় ডাক্তার , নার্স ও সাধারন রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। জীবন রক্ষায় তারা হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এসময় তাদের হামলায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা  কর্মকর্তা ডাঃ পবিত্র কুমার কুন্ডু, নার্স কাকতি লতা পালসহ অন্ত:ত ৪০ জন আহত হয়। মারাতœক আহত ওই কর্মকর্তাকে সংকট জনক অবস্থায়  ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার থেকে ওই হাসপাতালের সব ধরনের কর্মকান্ড বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে সামনের গেট বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ সেখানে অবস্থান নিয়েছে।
এঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার সকাল থেকে পুরো জেলায় চিকিৎসক নার্সদের ধর্মঘট চলছে। এতে হাসপাতালের ইনডোরেরর রোগীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। তার চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা।। তবে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া, এ ঘটনার প্রতিবাদে কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ধর্মঘট চলছে। জেলা গ্রাম ডাক্তার কল্যান সমিতির চিকিসকরা প্রাকটিস বন্ধ করে দিয়েছে।
গোপালগঞ্জ আড়ই শ’ বেড জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা গ্রামের সাঈদুল শেখ (২৮) বলেন সড়ক  দুর্ঘটনায় আহত হয়ে গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হই। শনিবার কোন ডাক্তার চিকিৎসা দেয়নি। এখন যন্ত্রনায় খুব কষ্ট পাচ্ছি। ডাক্তর এলে চিকিৎসা দিলে কষ্ট একটু কমত।
গোপালগঞ্জ আড়ই শ’ বেড জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খোকা কাজীর মেয়ে পারভীন আক্তার  বলেন, আজ আমার বারার পায়ে অপারেশন করার কথা ছিল। কিন্তু চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারনে ডাক্তাররা অপারেশন করেননি। আমার আব্বা পায়ের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। সকাল থেকে কোন ডাক্তারওয়ার্ডে আসেনি।
নাম প্রকশে অনিচ্ছুক এক নার্স জানান,টুঙ্গিপাড়া হাসপাতালে প্রতিটি কক্ষ,  ষ্টাফ কোয়ার্টার তান্ডব চালিয়ে তছনছ করা হয়েছে। এখানে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর মতো অবস্থা নেই। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পবিত্র কুন্ডুকে মারপিট করে ৪ হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে। তাকে মৃত মনে করে হামলাকারীরা ফেলে রেখে চলে যায়। গুজবকে কেন্দ্র করে এ বর্বোরিত হামলার ঘটনা ঘটেছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসিত মল্লিক বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্তদেরগ্রেফতার করে বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমাদের  অনিদ্দিষ্ট কালের ধর্মঘট চলবে।
গোপালগঞ্জ বিএমএ এর সভাপতি ডা. শেখ আবিদ হাসান বলেন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে আমরা হাসপাতালে সামনের অবৈধ স্থাপনা অপসারন, হাসপাতাল এলাকায় পুলিশবক্স স্থাপন, হামালাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি। বোরবার সকাল ৯ টায় আমরা প্রেস কন্সারেন্স করে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষনা করব।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ইনডোরে ভর্তি মারাত্নunnamedক আসুস্থ রোগীদের ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন। অমরা বিষয়টি মিমাংসা করা চেষ্টা করছি। পাশাপাশি হাসপাতালে হামলা,ভাংচুর চিকিৎসক ও নার্সকে মারপিটের বিচার চাই।
গোপালগঞ্জে জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। দোষীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top