নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের মানবপাচার পরিস্থিতি এখন বিশ্বব্যাপী আলোচিত। এ দেশের লাখো দরিদ্র বেকার মানুষ জীবিকার সন্ধানে ঝুঁকি নিয়ে দেশ ছাড়ছেন। সাগরের ভয়াল পথে তারা রওনা হচ্ছেন মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার পথে। ভয়াল মানবপাচারের ঘটনার অমানবিক এই চিত্র সম্প্রতি আরও স্পষ্ট হয়েছে, থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে ৩৬টি গণকবর, অনেক লাশ-কংকাল আর শতাধিক বন্দিশিবির উদ্ধারের ঘটনায়। এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সেখানকার পুলিশ, রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধিদেরও গ্রেপ্তার করেছে দেশটির সরকার। পাচার হয়ে যাওয়া ১২ শ’রও বেশি অসহায় বাংলাদেশী এখন আশ্রয় নিয়েছে, ইন্দেনেশিয়ার আচেহ বন্দর, মালয়েশিয়ার সীমান্ত এবং থাইল্যান্ডের শংখলা এলাকার বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে। পাচার হয়ে যাওয়া আরও কয়েক হাজার বাংলাদেশী নাগরিক এখনো অনাহারে ভাসছে আন্দামান সাগরে। সাগরের জেলেরা তাদের খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া কেউ তাদের আশ্রয় দিতে চাইছে না। বিবিসি, আলজাজিরা, সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্রে ফলাও করে অসহায় মানবেতর জীবনের চিত্র প্রকাশ করেছে। কিন্ত সরকারের উদ্বেগ নেই, পদক্ষেপ নেই। অভিবাসী হিসেবে তারা অবৈধ হতে পারে। কিন্ত বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে তো বৈধ। এ পরিস্থিতিতে আমরা নিরব থাকতে পারি না। তাই ভয়াল এই মানবপাচার বন্ধ এবং অসহায় ওই বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে রবিবার রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। আমরা অসহায় ওই নাগরিকদের জন্য মানবিক সাহায্য চাই। আমাদের দাবি হচ্ছে-
১. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত কথা বলেননি। বিপদে পড়া বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য তার হস্তক্ষেপ ও সরাসরি দিক নির্দেশনা
২. সাগরে ভেসে থাকা বা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনিশয়ার সীমান্ত ক্যাম্পে আশ্রিত বিপদাপন্ন বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে ওইসব দেশের সাথে রাষ্ট্রীয়ভাবে আলোচনা শুরু।
৩. আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম, ইউএনএইচসিআর, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানানো।
৪. আশ্রয় শিবিরগুলো পরিদর্শন ও বাংলাদেশীদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীদের সমন্বয়ে সরকারি প্রতিনিধি দল পাঠানো।
৫. সরকারি খরচে বিপদাপন্ন ওইসব মানুষদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া।
৬. এই সুযোগে যাতে বাংলাদেশীদের সাথে মিশে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা ঢুকতে না পারে তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
৭. বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মানবপাচারকারী চক্র নির্মূলে চর্তুদেশীয় শক্তিশালী স্কোয়াড গঠন।
৮. বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও টেকনাফসহ বিভিন্ন উপকুল থেকে নৌকা, ট্রলার ও জাহাজে মানবপাচার ঠেকাতে বিশেষায়িত একটি আলাদা বাহিনী গঠন।
মানববন্ধনে পূর্ব সমাবেশে বক্তৃতা করেন- রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি ঢাকা’র সাধারণ সম্পাদক কেরামত উল্লাহ বিপ্লব, সাংগঠনিক সম্পাদক গাউসুল আজম বিপু, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফিরোজ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী ও সিনিয়র সদস্য আবুল কালাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোকছুদার রহমান মাকসুদ, অর্থ সম্পাদক তরিকুল আহসান ডাবলু, দফতর সম্পাদক বাতেন বিপ্লব, সদস্য ওয়ারেছুন্নবী খন্দকার, ম. শাফিউল আল-ইমরান এম আর জান্নাত স্বপন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন অভিবাসী সংগঠন বিএমএফ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জয় এবং বমসা পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।