সকল মেনু

মনিরামপুরে কথিত আসামি আটকের নাটক: জনতার প্রত্যাখান

unnamed যশোর প্রতিনিধি:  গত শুক্রবার রাতে যশোরের মনিরামপুরের কোনাকোলা বাজারে কথিত আসামি আটকের সময় জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষে এএসআই তৌহিদসহ তিনজন আহত হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য বলেছেন, পুলিশের ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।
পুলিশের দাবি আসামি আটকের সময় স্থানীয়রা তাদের উপর বোমা হামলা চালায় ও মারপিট করে। অন্যদিকে স্থানীয়দের দাবি দোকান থেকে এক দর্জিকে আটকের সময় পুলিশের মারপিটে ওই দর্জি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের উপর হামলা চালায়।
অভিযোগ রয়েছে ঐ রাতেই (১১ টা থেকে দুইটা পর্যন্ত) অভিযানের নামে পুলিশের উপস্থিতিতে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা কোনাকোলা বাজার ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে ১০ টি দোকানসহ মোট ২০টি বসতবাড়ি ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। অবশ্য এসময় পুলিশ আবদুল খালেক নামে এক নিরীহ ব্যক্তিকে আটক করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে ৫৩ জনের নাম উল্লেখ সহ কয়েক’শ অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলা করেছে। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কয়েকটি গ্রাম পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানায়. শুক্রবার রাত আটটার দিকে থানা থেকে সাদা পোশাকে এএসআই তৌহিদ একটি ভাড়ার মোটরসাইকেলের চালক (হেলিকপ্টার চালক) জয়পুর গ্রামের ইসলামকে সাথে নিয়ে উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের কোনাকোলা বাজারের দর্জি (ক্যান্সারে আক্রান্ত) দবির উদ্দিনের দোকান থেকে তাকে আটকের চেষ্টা করে। এসময় দবিরের সাথে পুলিশের কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে এএসআই তৌহিদ এবং মোটরসাইকেল চালক ইসলাম দোকান থেকে দবিরকে টেনে হেঁচড়ে বের করে মারপিট করে।এতে দবির জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে দবির মারা গেছে। আর এ খবরে মুহুর্তের মধ্যে বাজারের বিক্ষুব্ধ লোকজনসহ এলাকাবাসী ধাওয়া দিয়ে এএসআই তৌহিদ ও তার সঙ্গীয় মোটরসাইকেল চালক ইসলামকে আটকের পর বেধড়ক মারপিট করে। এতে তাদের মাথা ফেটে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, এর পর রাত ১১ টার দিকে ওসি মোল্যা খবির আহমেদ এবং সেকেন্ড অফিসার এসআই তাসমিমের নেতেৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এলাকায় অভিযানের নামে শুরু করে নারকীয় তান্ডব। এসময় বিভিন্ন এলাকা থেকে আলমসাধু ও মোটরসাইকেলযোগে মুখোশধারি ৩০/৩৫ জন সন্ত্রাসী গিয়ে পুলিশের সাথে যোগ দেয়। তারা কোনাকোলা বাজারের ইউপি সদস্য সিদ্দিকের আইসক্রিম ফ্যাক্টরী, ইছার উদ্দিনের মিষ্টির দোকান, শরিফুলের ওষুধের দোকান, রফিকুলের মুরগির দোকান, নুরুউদ্দিসের পাইপের দোকান, মোমিন ও আসাদের চায়ের দোকান, হামিদের কাপড়ের দোকানসহ মোট ১০/১৫টি দোকান ছাড়াও শ্যামনগরের আলতাফ, ইছার উদ্দিন, গফুর, জলিল, কোনাকোলার দবির, সিদ্দিক মেম্বার, শরিফুলসহ অন্তত: ১০/১২টি বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুরের পর লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
গতকাল শনিবার বেলা ১১ টার দিকে সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে কথা বলে পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসী হামলার ভিন্ন ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। কোনাকোলা গ্রামের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার সিদ্দিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা তার তিনটি বেডরুম, রান্নাঘর, টয়লেট, মুরগির ঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। সিদ্দিকের স্ত্রী শিরিনা খাতুন জানান, রাত ১১ টার পর কয়েকজন পুলিশের উপস্থিতিতে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে নারীশিশুসহ লোকজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা এসময় ঘরের আসবাবপত্র, টেলিভিশন, ফ্রিজ, রান্নাঘরের রান্নাকরা খাবারসহ হাড়িপাতিল, মুরগির ঘর এমনকি টয়লেটের দরজা, কমোট পর্যন্ত তছনছ করে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। শিরিনা খাতুন আরো অভিযোগ করেন মুখোশধারী হামলাকারীরা ঘরের আলমারি ভেঙ্গে গরু বিক্রি ও ধান তরিতরকারী বিক্রির নগদ প্রায় দুই লাখ টাকা এবং তিন ভরি স্বর্নালংকার ও অনেক দামি কাপড়চোপড় লুট করে নিয়ে গেছে।
শ্যামনগরের আলতাফ হোসেনের স্ত্রী আসমা খাতুন জানান, পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা মিলে তাদের ঘরের সবকয়টি কক্ষ তছনছ করে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, ফ্যান, আসবাবপত্র, হাড়িপাতিলসহ যাবতীয় মালামাল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এছাড়াও তারা আলমারি ভেঙ্গে নগদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও ৪ ভরি স্বর্নালংকার লুট করে নিয়ে গেছে। অপরদিকে গতকাল শনিবার কোনাকোলা বাজারে গিয়ে দেখা যায় সেখানে অঘোষিত হরতাল চলছে। সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা এই হামলার বিচার দাবি করেছেন। কথা হয় ওই বাজার কমিটির সভাপতি আজিম উদ্দিনের সাথে । তিনি জানান, পুলিশ এবং সন্ত্রাসীদের ভয়ে দোকানীরা দোকান বন্ধ করে রেখেছে। স্থানীয় দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের একটানা ৩৯ বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সরদার বাহাদুর আলী অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বলেন, পুলিশ যা করেছে সেটা অবশ্যই নিন্দনীয়। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নে এমনটি দেখিনি। আয়ামীলীগ নেতা স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, পুলিশের ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।
তিনি এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। তবে মনিরামপুর থানার ওসি মোল্যা খবির আহমেদ এই হামলা ও লুটপাটের ঘটনা অস্বীকার করেছেন। ওসি দাবি করেন, এএসআই তৌহিদের নেতৃত্বে কনষ্টেবল নজরুল, ইদ্রিস এবং মান্নান আসামি আটক করতে যায়। সে সময় বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর হামলা চালালে তার ৪ জন পুলিশ সদস্য জখম হয়েছেন। তবে এর মধ্যে কনষ্টেবল নজরুল সাংবাদিকদের জানান, তিনি এ অভিযানে অংশ নেননি। সে সময় তিনি থানার মধ্যে কেরাম বোর্ড খেলছিলেন। অপর কনষ্টেবল মান্নান ছিলেন থানায় কর্তব্যরত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top