সকল মেনু

এবার সুন্দরবনে ডুবল সারবাহী জাহাজ

jahaj21430838651 বাগেরহাট  প্রতিনিধি : পূর্ব সুন্দরবনে এবার একটি সারবাহী জাহাজ তলা ফেটে ডুবে গেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে শরণখোলা রেঞ্জের মরা ভোলা এলাকার ভোলা নদীর চরে আটকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জাহাজটি সার বোঝাই করে মংলা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মংলা থেকে ৫০০ টন পটাশ (লাল সার) নিয়ে ‘এমভি জাবালে নূর’ নামে একটি জাহাজ রোববার পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মরা ভোলা এলাকার ভোলা নদী অতিক্রম করছিল। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জাহাজটি চরে আটকে যায়। মঙ্গলবার বিকেলে তলা ফেটে পানি উঠে ধীরে ধীরে জাহাজটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় পরিবেশের  ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

বন বিভাগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মেসার্স আল এহসান শিপিং লাইনসের এম-৬৯৪৩ নম্বরের জাহাজটি গত ৩ মে মংলার হারবাড়িয়া থেকে সার বোঝাই করে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হয়। ছেড়ে আসার পর ওই দিন পথিমধ্যে শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদীর বিমলের চর এলাকায় এলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি জাহাজকে সাইড দিতে গিয়ে জাহাজটি প্রথমে ডুবোচরে আটকে পড়ে। পরে জাহাজটির তলা ফেটে ডুবে যায়।

ইতিমধ্যে জাহাজটি উদ্ধারে মংলা থেকে এমবি নূসরাত-ই-হক ও এমবি তছির উদ্দিন নামের দুটি জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এবং অতি গোপনে মালিকপক্ষ গলিত সার পানিতে ফেলে জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সার বোঝাই জাহাজডুবির এলাকা ডলফিন ও শুশুকের বিচরণক্ষেত্র হওয়ায় সুন্দরবন আবারও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শরণখোলা স্টেশনের সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ডুবে যাওয়া জাহাজটিতে ৫০০ মেট্রিক টনের মতো লাল রঙের এমওপি সার রয়েছে। জাহাজটির পেছনের কিছু অংশ ছাড়া সম্পূর্ণটাই পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। সারের লাল রং পানিতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। ওই জাহাজের সংরক্ষিত তেলও পানিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

তবে, ডুবোজাহাজের মাস্টার ও নাবিক কাউকেই এ সময় ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো টেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর সরদার সরিফুল ইসলাম জানান, সার গলে পানির গুণগত মান ও জলজ প্রাণির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সারবাহী জাহাজডুবির ঘটনাটি সুন্দরবন বিপর্যয়ের আরেকটি প্রধান কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘ডুবে যাওয়া পটাশ (এমওপি) জাতীয় এ সারের বিষক্রিয়ায় গাছপালার চেয়ে জলজ প্রাণির ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। জাহাজটি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চলছে বলে তাকে মালিকপক্ষ জানিয়েছে। তবে, গলিত সার পানিতে ফেলা হলে জাহাজটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডুবে যাওয়া জাহাজের মালিক বাবুল হাওলাদার জানান, জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি খবর পেয়ে জাহাজ উদ্ধারের জন্য এমভি নুরুল হক ও এমভি সাদি নামে দুটি জাহাজ ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন বলে জানান।

নুরুল হক জাহাজের মাস্টার আ. মালেক মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় জানান, ঘটনাস্থলে বিশাল চর থাকায় জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তাই তারা সেখান থেকে ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন জানান, জাহাজটি কিছুটা ডুবে কাত হয়ে গেছে। জাহাজে সার থাকায় পরিবেশের কিছু ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে ফার্নেস তেলবাহী ‘সাউদার্ন স্টার সেভেন’ নামের একটি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। সেই জাহাজের ক্ষতিকর তেল সুন্দরবনের সমস্ত নদ-নদীতে মিশে বনে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে।  সেই থেকে এক মাস সুন্দরবনের অভ্যন্তর থেকে সব ধরনের জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। বিকল্প পথ না থাকায় পুনরায় জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ওই ঘটনার পাঁচ মাসের মাথায় সারবাহী জাহাজডুবির ঘটনা ঘটল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top