সকল মেনু

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা ও চিকিৎসা

cancer20150505133422স্তন ক্যান্সার হচ্ছে সেই ক্যান্সার যা স্তনের কোষের মধ্যে তৈরি হয়। স্তন ক্যান্সার অনেক ধরনের হয়ে থাকে, কিন্তু অধিকাংশ সময়ই স্তনের Duct / নালীর মধ্য থেকে এই ক্যান্সার শুরু হয় (Duct cell carciroma)। গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের মহিলাদের মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে  স্তন ক্যান্সারের  অবস্থান তৃতীয়। স্তন ক্যান্সার নারী ও পুরুষ উভয়ের হতে পারে। স্তন ক্যান্সার মোকাবেলায় সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আগাম সচেতনতা এবং সময়মতো চিকিৎসা। তাই অনেক আগে থেকেই নিজের শরীরের নেওয়া শুরু করুন। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনার সবচেয়ে বড় সঙ্গী আপনার মনের জোর। কাজেই মানুষের সাহচর্যে আপনিও জয়ী হতে পারেন এই যুদ্ধে।
কারণ :
স্তন ক্যান্সার বৃদ্ধির মূলে রয়েছে মানুষের বদলে যাওয়া জীবনযাত্রা। মোটামুটি ৬০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে জীবনধারা দায়ী। মেয়েদের ৩০ বছরের বেশি বয়সে বিয়ে হওয়া, স্বেচ্ছায় মা না হওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অত্যধিক জন্মনিরোধক নেওয়া যেমন দায়ী তেমনি ধূমপান, মদপান, ফাস্টফুড খাওয়া, বসে বসে কাজ করাও একইরকমভাবে দায়ী। এছাড়া স্তন ক্যান্সারের জন্য ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে জন্মগত কারণ দায়ী। মা-দাদীর স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে পরিবারের পরের প্রজন্মের মধ্যে এটি সঞ্চারিত হতে পারে। পরিবেশ দুষণকে অনেক ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে দায়ী করা হয়। বাকী ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারের কারণ এখনও অজানা।
লক্ষণ :
স্তনে কোনোও পিণ্ড দেখা গেলে (ব্যথা নাও থাকতে পারে) আপনি কিন্তু সন্দেহভাজন। ব্যথা না থাকায় অনেকেই এই ধরনের পিণ্ডকে অবহেলা করে থাকে। এর ফলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়েই যায়। স্তন আকারে পরিবর্তন, স্তনের বোঁটা থেকে রক্তরণ, বোঁটা কুঁচকে যাওয়া ইত্যাদিও ক্যান্সারের লণ। সাধারণত অবিবাহিতা, সন্তানহীনা বা যারা সন্তানকে বুকের দুধ পান করান না, তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ৪০ বছর বয়সের পরে রিস্ক ফ্যাক্টর বেশি থাকে। তবে বর্তমান জীবনধারার কারণে বয়সসীমা ক্রমশ কমছে। ১৫ থেকে ৪০ বছরের মহিলারাও আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন। কোনো কারণে যখন আমাদের শরীরে কোনো একটি কোষের ছন্দময় বৃদ্ধি না হলে সেটি অসমভাবে বাড়তে থাকে। এর থেকে অসংখ্য কোষ উৎপন্ন করে তৈরি হয় টিউমার। টিউমার দুই ধরনের : অবিপজ্জনক (যা ছড়িয়ে পড়ে না, একই জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে) ও মারাত্মক। আর দ্বিতীয়টি মানেই ক্যান্সার।
চিকিৎসা :
স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে পুরোপুরি সেরে ওঠা সম্ভব। ক্যান্সার প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে সার্জারির পরে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা হরমোনাল থেরাপি করা হতে পারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে প্রথমে কেমোথেরাপি দেয়া হয়। পরে সার্জারি করা হয়। চতুর্থ পর্যায়ে সার্জারির কোনো সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে কেমোথেরাপি ও পরে রেডিওথেরাপি দিয়ে ক্যান্সার কিছুদিনের জন্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। সার্জারির আগে যে কেমোথেরাপি দেয়া হয় তাকে বলে নিওঅ্যাডজুভেন্ট থেরাপি। আর সার্জারির পরে হলে তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় অ্যাডজুভেন্ট থেরাপি।
কার জন্য কোন থেরাপি যথাযথ, সেটি নির্ভর করে তার ক্যান্সার ঠিক কোন পর্যায়ে আছে তার উপর। আবার যাদের বয়স অপোকৃত কম, তাদের ক্যান্সার প্রথম বা দ্বিতীয় পর্যায়ে ধরা পড়লে পুরো স্তন বাদ না দিয়ে শুধুমাত্র ক্যান্সারাস টিউমারটিকেই অপসারণ করে দেয়া হয়। একে বলে অঙ্গ সংরণ সার্জারি। অনেকের প্রশ্ন, সার্জারির পরে আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব কিনা। এর উত্তর হ্যাঁ, আর পাঁচজন মহিলার মতোই আপনিও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। এমনকি দু’বছর পর মা-ও হতে পারবেন। স্তন বাদ দিয়ে দেওয়া হলে একধরনের বিষন্নতা দেখা দেয়। তখন প্লাস্টিক সার্জারি করার কথা ভাবা হতে পারে। আর বিষন্নতা কাটানোর জন্য কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে।
যা খাবেন :
১. অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অকালবার্ধক্য রোধ করা। স্তনও এর ব্যতিক্রম নয়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সবুজ চাও শরীরে অকালবার্ধক্য আসতে দেয় না। ব্রকোলি, ফুলকপি, চীনা বাধাকপি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে সেইজন্যে নিজের ডায়েট থেকে এগুলোও একেবারে বাদ দেবেন না।
২. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার পেশী দৃঢ় করতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরের জন্য উপকারি কোলাজেনও প্রোটিনে থাকে। নিটোল স্তনের জন্যে প্রত্যেকটি মিলেই কিছু না কিছু প্রোটিন উপাদান থাকা জরুরি।
৩. বাদামী চাল, সম্পূর্ণ গমের আটার রুটি, সম্পূর্ণ গমের সিরিয়ালে আঁশ উপাদান বেশি, সেজন্যে শরীরের ইস্ট্রোজেন লেভেল কমিয়ে এনে স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমিয়ে আনে।
৪. দিনে অন্তত ৫-৭ বার ফল খান। ফলে থাকে ফাইটোকেমিক্যাল, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৫. স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খান। চর্বিজাতীয় ও মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।
৭. স্তন ক্যান্সারে যারা ভুগছেন তাদের জন্য ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার, কমলালেবু, মুসাম্বি, আঙুর, ভিটামিন সি যুক্ত ফল, পাকা আম, পাকা পেঁপে, হলুদ, রসুন ইত্যাদি উপকারি।
৮. সবুজ সবজি প্রচুর পরিমাণে খাবেন, তবে সবজিগুলো গরম পানিতে আধঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। রঙিন সবজি যেমন কুমড়া, গাজর, বরবটি, শিম, লাউ খাবেন।
৯. কমলা এবং হলুদ রঙের খাবারে বেশি মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা সুঠাম, সুন্দর স্তন গঠন করতে সহায়ক।
১০. প্রচুর পানি খান। কাঁচা লবণ, প্রিজারভেটিভ যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। শরীরের ওজনের অনুপাতে চর্বি ও আমিষ খাওয়া উচিৎ। যত কেজি ওজন তত গ্রাম চর্বি ও আমিষ নিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top