সকল মেনু

নীলফামারীর ধানকাটা শ্রমিকরা ট্রেন ও বাসযোগে যাচ্ছেন বাইরের জেলায়

unnamed মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী  ২২ এপ্রিল: নীলফামারী জেলার সর্বত্র এখন কাজের সংকট চলছে। কাজকর্মের অভাবে কৃষি শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ায় তারা কাজের সন্ধানে হন্যে হয়ে ছুটছেন শহর কিংবা বাইরের জেলায়। এই সময়টায় কৃষি শ্রমিকের হাতে কোন কাজ না থাকায় তারা চরম সংকটে পড়ে। তার উপর ঋনের কিস্তির জ্বালায় পরিবার- পরিজন নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন। জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সদর ও সৈয়দপুর উপজেলার কৃৃিষ শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষের হাতে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন। এদের নিজস্ব কোন জমিজমা না থাকায় প্রতিদিন অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি ছাড়া কোন পথ খোলা থাকে না। কিন্ত্র এখন প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায়না। গোটা নীলফামারী জেলার  ধান কাটা শ্রমিকরা স্ত্রী- সন্তান ফেলে ছুটে চলেছেন বাইরের জেলায়। ফলে বাস ও ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব শ্রমিকরা আগাম জাতের ইরি-বোরো ধান কাটার জন্য সান্তাহার, বগুড়া, ঈশ্বরদী, আত্রাই, জয়পুরহাট, আক্কেলপুর, প্রভৃতি এলাকাসহ দূরবর্তী কুমিল্লাতেও ছুটে চলেছেন। তাদের হাতে কাস্তে, বাংকুয়া (ভার বহনের জন্য) আর দড়ি সাথে নিয়ে বাস ও ট্রেনে ঠাসাঠাসি হয়ে কাজের সন্ধানে ছুটছেন। এই অঞ্চলে  চৈত্র- বৈশাখ মাসে কৃষি শ্রমিকের কোন কাজ থাকে না। এছাড়া এখানে ইরি-বোরো কাটা মাড়াইয়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০দিন দেরি আছে। ফলে তারা কর্মহীন না থেকে স্থানীয় লোকদের কাছে ধার-দেনা করে বাইরের জেলায় পাড়ি জমাচ্ছেন। এই মূহূর্তে সরকারের কর্মসৃজন ও কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে আসায় ওইসব শ্রমিকও কাজের সন্ধানে ছুটছেন। সৈয়দপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে চিলাহাটি, ডোমার, নীলফামারী, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ ও তরণীবাড়ী থেকে আসা হাজার হাজার মজুররা ভিড় করছেন। সবার হাতে ধানকাটা কাস্তে, বাংকুয়া, রশি ও কাপড়ের পোটলা। সৈয়দপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে গিয়ে খুলনা মেইল রুপসা আর রাজশাহীগামী তিতুমীর আন্ত:নগর এক্সপ্রেস ট্রেনে ভিড় চোখে পড়ার মত। ইঞ্জিন থেকে ট্রেনের ছাদের উপর পর্যন্ত পা ফেলার জায়গা নেই। ঈদে বাড়ী ফেরার চেয়েও বেশী ভিড়। ষ্টেশনে কথা হয় চিলাহাটি মাষ্টার পাড়ার মজুর ফজলু এর সাথে।  তিনি জানান, এ সময়ে আমাদের হাতে তেমন কোন কাজ নেই তাছাড়া ধান কাটাকাটি এখনও প্রায় মাস খানেক বাকী তাই আমরা ২০ জনের টিম নিয়ে যাচ্ছি নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায়। নীলফামারী জেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দিন মজুর ইলিয়াস, রবিউল ও ফকির জানায়, তাদের দলে আছে ২৪জন যাবেন সান্তাহারে। প্রতি বছর ওই এলাকার গৃহস্থরা ইরি ধান কাটার সময় মোবাইলে খবর দেয়। মাত্র ১৫ থেকে ১৮ দিনে এক একেক জন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার কাজ করে আবার আমরা বাড়ি ফিরে এসে ধান কাটার কাজ করবো।
জানা যায়, এই এলাকার প্রায় সকল কৃষি শ্রমিক এনজিও’র ঋনের জালে আটকা পড়েছে। প্রতি সপ্তাহে তাদের বিভিন্ন এনজিও’র কিস্তি ও পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্থ ব্যয়ের কারণে পরিবারের মায়া ত্যাগ করে কেউ কেউ দলগতভাবে কেউবা এককভাবে কাজের সন্ধানে বাড়িঘর ছাড়ছেন। জেলার সৈয়দপুর, জলঢাকা, ডোমার, কিশোরীগঞ্জ ও সদর উপজেলায় চলমান কর্মসৃজন কাবিটা প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া প্রকল্পের বাইরে প্রায় হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক কর্মহীন থাকায় তারা বাধ্য হয়ে আগাম জাতের ইরি-বোরো ধান কাটার জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন বাইরের জেলায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা বাস ও ট্রেনে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন।  এ কারণে বাস টার্মিনালের ধান কাটা শ্রমিকরা অল্প টাকায় বাসের ছাদে চড়ে ছুটছেন দক্ষিণের জেলাগুলোতে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top