সকল মেনু

দল গোছানো তাগিদে এবার নড়েচড়ে বসেছেন এরশাদ

Ershad-Photo-1-02.04ঢাকা: বেশ নড়েচড়েই বসেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দল গোছানো তাগিদ অনুভব করছেন তিনি। নতুন মহাসচিবকে নিয়ে বিতর্ক, সিটি নির্বাচন নিয়ে কর্মীদের মাঝে দ্বন্দ্ব, প্রার্থীদের পক্ষে কাজ না করা, বহিষ্কার নেতাদের আবার দলে ফেরানো, প্রেসিডিয়ামরা সদস্য চাঁদা নিয়মিত না পরিশোধ করাসহ নানা কারণে দু’একদিনের মধ্যেই একটি জরুরি প্রেসিডিয়াম বৈঠক ডাকা হচ্ছে। এ নিয়ে মহাসচিবকে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। এ বৈঠকের মাধ্যমেই চূড়ান্ত হতে পারে কে হবেন পার্টির আগামীর মহাসচিব।
এমন কথাই জানিয়েছেন জাপার একাধিক নেতা ও এরশাদের কাছের একটি সূত্র।
জাপার একটি সূত্র জানায়, গত শনিবার সন্ধ্যায় পার্টি অফিস থেকে এরশাদ মহাসচিব বাবলুকে ফোন করেন এরশাদ। তিনি ফোনে বাবলুকে বলেন, ‘দ্রুত প্রেসিডিয়িাম বৈঠক ডাকো। নির্বাচনে প্রার্থীদের অর্থ দিতে হবে এবং সিটি নির্বাচনে কর্মীরা কীভাবে কাজ করবে এ সংক্রান্ত আলোচনা করতে হবে।’ তার এ কথার প্রতিত্তরে বাবলু ফোনের অপর পাশ থেকে বলেন, ‘স্যার এখনতো নির্বাচন চলছে। আর এ সময় বৈঠক ডাকা ঠিক হবে না। কারণ এখন পার্টির মধ্যে অনেক সমস্যা আছে। তাছাড়া আমার পক্ষে আজ ঢাকায় ফেরা সম্ভব নয়। কারণ আমি এখন চট্টগ্রামে আছি।’
বৈঠক না ডাকার জন্য ফোনে মহাসচিব যুক্তি দিয়ে আরও বলেন, ‘স্যার সিটি নির্বাচনের পর এ বৈঠক ডাকলে ভালো হয় এবং পার্টির মধ্যে এখন নানা সমস্যা আছে। ফলে এ বৈঠকটি পরে করলে ভালো হবে।’

এরপর থেকে গড়িমসি শুরু করেছেন বাবলু। তবে তার কোনো কথাকেই পাত্তা দেননি জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। তিনি শুধু বাবলুকে বলেছেন, ‘তুমি যে করেই হোক দু’একদিনের মধ্যেই প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ডাকো।’ আর এই বলেই ফোন রাখেন এরশাদ।

এর আগে গত রোববার চট্টগ্রামে জাপার মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছিরের পক্ষে কাজ করেন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। আর এ প্রচারণার একটি ভিডিও চিত্র এরশাদের কাছে এলে তার প্রতি বেশ চটেন তিনি। শুধু তা-ই নয় তাকে তার বাসায় পরদিন সকালে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন। তবে এবার তাকে দল থেকে সরিয়ে একবারেই সরিয়ে নতুন কাউকে মহাসচিব করার কথাও ভাবছেন এরশাদ।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের ভিডিওটি দেখে এরশাদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘যারা আমার সুখে দুঃখে কাছে থেকেছে আজ আমি তার কথায় তাদের বহিষ্কার করলাম আর সেই বাবলু দলের পক্ষে কাজ না করে সরকারের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে।’ বাবলুর এমন ব্যবহারে তিনি বেশ কষ্ট পেয়েছেন বলেও জানান উপস্থিত নেতাকর্মীদের।
এরশাদের একটি কাছের সূত্র জানায়, যারা দীর্ঘদিন ধরে দল করছেন সম্প্রতি তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে খুব মনোকষ্টে আছেন এরশাদ। সদ্য বহিষ্কৃত ও এর আগে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদেরও আবার দলে ফেরানোর বিষয়টিও জোরালোভাবেই ভাবছেন তিনি। আর এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও উঠতে পারে ওই আগামী বৈঠকে।
তবে সূত্রটি আরও জানায়, ওই বৈঠকে কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য মহাসচিব পরিবর্তনের পক্ষে প্রস্তাব দেবেন। আর এর মাধ্যমেই নতুন খবর আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা। তবে শুধু তারাই নন এরশাদও এবার কাছের মানুষকে মহাসচিব করার কথা ইতোমধ্যে শুরু করেই দিয়েছেন। কেননা চট্টগ্রামের ঘটনার পর থেকেই তিনি ভীষণ কষ্ট পেয়েই এমন চিন্তা করছেন।
চট্টগ্রাম জাপার একটি সূত্র জানায়, গত শনিবার বাবলু চট্টগ্রামে পৌঁছে রাউজান যাওয়ার চেষ্টাকালে পথিমধ্যে মুরাদপুর মহাসড়কে তার পথ অবরোধ করেন চট্টগ্রাম জাপার বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা। বাধ্য হয়েই আবার চট্টগ্রামে ফিরে যান বাবলু। এসময় নেতাকর্মীরা তার কুশপুত্তলিকা পোড়ান এবং তাকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ ঘটনার পর থেকেই পদ থাকে কি না তা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছেন সরকারের একান্ত অনুগত হিসেবে পরিচিত জাপার মহাসচিব বাবলু।

এদিকে আবার জাপার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক আবু হাসান আহমেদ জুয়েলের ‍বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাকরি না দেয়ার অভিযোগ ওঠায় দল থেকে বহিষ্কারের জন্য এরশাদ তার প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায়কে নির্দেশ দিয়েছেন। এমন খবরের আভাস পেয়েই জুয়েল মহাসচিবকে ম্যানেজ করতে না পেরে নিজেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে পার্টির একটি সূত্র জানায়।

এ ব্যাপারে পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top