সকল মেনু

ওরা আকাশ জয়া

unnamed আব্দুল ওয়াহাব মুকুল: গন্তব্য ওর নীল আকাশ। আর প্রত্যয় ‘বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত’। নিজেদের দেশ সেবায় উৎসর্গ করার মহান বাসনায় দু:সাহসিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে চলেছে সে। বলছি দেশের প্রথম নারী বৈমানিক ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুৎফী এর কথা।  সকল প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে এ নারী এখন বাংলার গর্ব। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অহংকার। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রথম নারী বৈমানিক ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুৎফী। যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটিতে ১৮ নং স্কোয়াড্রনে বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভারসেশন কোর্সের মাধ্যমে এককভাবে উড্ডয়নের সক্ষমতা অর্জন করেছেন।
তামান্না-ই-লুৎফী
বাবা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক গ্রুপ ক্যাপ্টেন লুৎফর রহমানের চাকুরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই বিমানের খুব কাছাকাছি হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল যশোরের মেয়ে তামান্না-ই-লুৎফীর। আর বাবার অনুপ্রেরনায়ই বড় হয়ে বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের তাগিদ থেকেই লেখাপড়ায় ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। অবশেষে ২০১২ সালে পয়লা ডিসেম্বর তামান্নার স্বপ্ন পূরণ হলো। এদিন তিনি ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সে কমিশন লাভ করেন। এর আগে ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি তামান্না বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একাডেমীতে যোগদান করেন। যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটিতে দুই বছর প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সে কমিশন পান। এরপর ২০১৪ সালে বিমান বাহিনীতে বৈমানিকের জন্য আবেদন চাওয়া হলে আবেদন করেন তিনি। ভাগ্যক্রমে সকল যোগ্যতা পূরণ করে হয়ে যান বাংলাদেশের প্রথম সামরিক নারী বৈমানিক। গত বছরের ৩ আগস্ট তামান্না মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির ১৮ নং স্কোয়াড্রনে যোগদান করেন। আর প্রশিক্ষক পাইলটের সাথে ২৩ সেপ্টেম্বর তামান্না প্রথম উড্ডয়ন করেন। এরপর ২০ নভেম্বর বেলা ১১টায় প্রথমবারের মতো আকাশে উড়ে সলো ফ্লাইট পরিচালনা করার দক্ষতা দেখান তিনি। এরই মধ্যে বেসিক কনভারসেশন কোর্সের উড্ডয়ন সমাপ্ত করেছেন মেধাবী মেয়ে তামান্না।
তামান্না ১৯৯৩ সালের ৫ জুন যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্ট থানাধীন গাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন লুৎফর রহমান। মা আয়েশা সিদ্দিকা আদর্শ গৃহিনী। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। চিটাগং বিএএফ শাহীন কলেজে তার লেখাপড়া শুরু। এরপর বাবার চাকুরির বদলিজনিত কারণে তিনি বিভিন্ন স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। তবে ঢাকা বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি ও একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করেন।
আজকের এ গৌরবময় সাফল্য অর্জনের পেছনে বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণার পাশাপাশি প্রশিক্ষকদের অবদান অকপটে স্বীকার করেন তামান্না একই সাথে সহকর্মীদের ঐকান্তিক সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের প্রতি সম্মান জানান তিনি।
তামান্না মনে করেন, প্রবল ইচ্ছা শক্তির কাছে সকল প্রতিকূলতা হার মানতে বাধ্য। আর নারীরা কোন কিছুতে পিছিয়ে নেই বলে জোর দাবি তার। ভবিষ্যতে যারা বিমান চালানোর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় যারা আসতে চান, তাদেরকে ভালো লেখাপড়া করার পাশাপাশি আগে থেকেই যথাযথ প্রস্ততি নেয়ার পরামর্শ তামান্নার।
অবসরে গান শোনা ও প্রকৃতির ছবি তোলার শখ রয়েছে প্রকৃতি প্রেমিক তামান্নার। ভবিষ্যতে নিজ পেশায় থেকে দেশের সেবা করতে চান তিনি। সেই সাথে সততা ও দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উত্তরোত্তর সাফল্যে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন মেয়েটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top