সকল মেনু

মহাপরিকল্পনায় বিদ্যুতের পরিবর্তন

  electricity1-1427374275 মেহেদি হাসান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: ২০১০ সালে প্রণয়ন করা ২০ বছর মেয়াদী বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় (পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান) বেশকিছু পরিবর্তন আসছে। এতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বৃদ্ধির দিকে সরকার বেশি মনোযোগী হচ্ছে বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊধ্বর্তন এক কর্মকর্তাহাসান,হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতের প্রণয়ন করা মহাপরিকল্পনা পাঁচ বছর পর পর পর্যালোচনা করার বিধান রয়েছে। সে মোতাবেক এ বছর তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার মেগাওয়াট। যার ১১ হাজার মেগাওয়াট দেশের কয়লা এবং নয় হাজার মেগাওয়াট আমদানি করা কয়লা দিয়ে উৎপাদন করার কথা। তবে এখন পর্যন্ত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া কয়লা আমদানি প্রক্রিয়াও চলছে ঢিমেতালে। আর দেশি কয়লা উত্তোলনেও কার্যকর কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। ফলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার মেগাওয়াট থেকে কমিয়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট এবং বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে তিন হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট করার কথা চিন্তা করছে সরকার। এছাড়া পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে চার হাজার মেগাওয়াট, নবায়নযোগ্য জ্বালানি তিন হাজার মেগাওয়াট এবং তরল জ্বালানি থেকে উৎপাদন করা হবে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

বিদ্যুৎ আমদানি প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘গ্যাস সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি সংকটের কারণে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এছাড়া বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে যেভাবে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে লক্ষ্যে পৌঁছতে লাগবে ২০০ বছর। তাই তুলনামূলকভাবে কম দামে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভারত-নেপাল থেকে আরো ৬-৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা আমদানি করব।’

তিনি বলেন, `২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য এ খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এ খাতকে যত দ্রুত উন্নত করতে পারব, তত দ্রুত বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে।’

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাতটি দেশের জোট বিমসটেক বিদ্যুতের একটি অভিন্ন সঞ্চালন লাইন স্থাপন করতে যাচ্ছে। আর এটি হলে বিমসটেকের সদস্য বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ আমদানি ও রফতানি করতে পারবে। কেননা, হিমালয়ে উৎপত্তি হওয়া নদ-নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে ভারত এক লাখ ২৬ হাজার মেগাওয়াট, নেপাল ৪৪ হাজার মেগাওয়াট ও ভুটান ২৪ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আর লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে এরই মধ্যে হিমালয় থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদীর ওপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে ভারত, পাকিস্তান, চীন, ভুটান ও নেপাল। এ জন্য বিভিন্ন নদীর ওপর মোট ৫৫৩টি বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ভারত নির্মাণ করবে ৪২৯টি, পাকিস্তান ৪৮টি, ভুটান ২১টি, নেপাল ৫৪টি ও চীন একটি।

তাদের মতে, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিনিময় গ্রিড লাইন রয়েছে ভারতের। এ ছাড়া ভারত থেকেও বাংলাদেশ ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এখন সাতটি দেশের একটি অভিন্ন সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হলে প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি অনেক সহজ হবে।

বিদ্যুৎ ভবনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ভারতের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ২৬ হাজার ৫৮৮ মেগাওয়াট জলবিদ্যুতের মধ্যে অরুণাচল থেকে প্রায় ৪৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে আসাম থেকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া হয়ে দেশটির পশ্চিবঙ্গে যাবে। আর এজন্য গ্রিডলাইন সংযোগের বিষয়ে দুই দেশ সম্মতও হয়েছে, সেখান থেকে বাংলাদেশ পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে। এছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। একইসঙ্গে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গেও জলবিদ্যুতের বিষয়ে আলোচনা চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top