সকল মেনু

রাজনীতি নির্বাচনী ট্যানেলে

   Election_Commission-1427279962নিউজ ডেস্ক: নির্বাচনী ট্যানেলের মুখেই এখন সরব দেশের রাজনীতি। স্থানীয় প্রশাসনের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণে এই নির্বাচন গানিতিক সূত্রের মতো কাজ করছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি ও সরকার বিরোধী আন্দোলন ফিকে হয়ে এখন সরব অবস্থানে চলে এসেছে দেশের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরেই এখন রাজনৈতিক দলগুলো নানা হিসেব মেলাতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক সংকটের বিহরাগমন পথ হিসেবে কাজ করতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী নেতা লিয়াকত আলী ভূইয়া বলেছেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আর বেশি বিষোদগার করার সুযোগ পাবে না। আর অংশ না নিলে ফের রাজনৈতিক ক্ষমতায় যাওয়ার পথ হারাবে। যে ভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছে এবং যার মাশুল দিতে হচ্ছে প্রতিটি পদক্ষেপে।

এদিকে সিটি নির্বাচনকে রাজনৈতিক মোর ঘুরানোর জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে সরকার।

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নিলে ফের পস্তাবে। রাজনৈতিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনায়ও ব্যর্থ হতে পারে দলটি। তবে তার ধারণা বিএনপি দলীয়ভাবে মনোনীত না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কৌশল বেছে নিতে পারে।

তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটায় বিএনপির পরামর্শদাতা ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাত অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, ড. মাহবুব উল্লাহ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছেন। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমান সুযোগ থাকছে কিনা সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন তারা। যদি নির্বাচন কমিশন থেকে সে রকম কোন আশ্বাস দেওয়া হয় তাহলে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকার বাইরেও বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারে।

নির্বাচনে অংশ নিতে বেগম জিয়ার দ্বিমত নেই এমন খবর মিডিয়ায় বেশ কয়েকদিন থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী ব্যবসায়ী নেতা সাবেক এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট আনিসুল হকের বিপরীতে আরেক সাবেক এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করে রেখেছে বিএনপি। এমনকি দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সাঈদ খোকন কিংবা হাজী সেলিমকে টেক্ক্ াদিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আব্দুল সালাম পিন্টুকে।

রাজনৈতিক সমালোচক সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেছেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিএনপিকে দুটি গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করবে। এক, নির্বাচনে অংশ নিলে এই সরকারকে আর অবৈধ আখ্যা দিতে পারবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে আন্দোলনের নামে নাশকতা বন্ধ করতে হবে। দুই, বিগত সব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতে হবে।

তবে এই নির্বাচন সরকারকেও চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছুঁড়ে দিয়েছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে না পারলে জনসমর্থন হারাতে পারে সরকার। এছাড়া ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা দেওয়ার কঠিন দায়িত্ব নিতে হবে। সন্ত্রাস, অরাজকতা, বোমাবাজি বন্ধ করতে হবে। নয়তো গণতন্ত্র রক্ষার যে উদ্দেশ্যে নিয়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা সরকারের জন্য বুমেরাং হতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শুধু বিএনপি বা আওয়ামী লীগ নয়, নতুন মেরুকরণের মধ্যে ফেলে দিয়েছে জাতীয় পার্টি, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং বাসদ-জাসদ ও অন্য দলগুলোকে।

এই দলগুলো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাঝারি ও বড় দলগুলোতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, মনোনয়ন নিয়ে দলীয় কোন্দল, এমনকি নেতাদের বহিস্কার ও যোগদানের মতো নানা ঘটনায় সরব হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। নির্বাচনী ট্যানেলের মধ্যে ঢুকতে প্রস্তুত সবগুলো দল । তবে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে এবং সরকারের কাছ থেকে সেই ওয়াদা আদায় করতেই কৌশলগত আলোচনা, মতবিনিময় এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে।

এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং সুশৃঙ্খল ভাবে সম্পন্ন  করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচনকে সরকার তার ‘ক্লিন ওয়ে’ চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top