সকল মেনু

হাজার কৃষক স্বাবলম্বী সবজি চাষ করেই

 শেরপুর (বগুড়া): আগের সেই অভাবের ঘানি আর টানতে হয় না। শুনতে হয় না অপরের গালমন্দ। দু’মুঠো অন্নের জন্য আর অন্যের দুয়ারে ছুটতে হয় না। যেতে হয় না অন্যের বাসাবাড়ি আর ক্ষেতখামারে কাজ করতে। এখন তারাই অন্যকে কাজ দেয়। তাদের বাগানেই কাজ করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে। সবজিই তাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। রকমারি সবজি চাষ করে আজ তারা স্বাবলম্বী। হায়দার আলী, সাইফুল ইসলাম ও গাজিউল ইসলাম —-এরা সবাই। আছে আরো অনেকেই।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তাদের বসবাস। তারা থেমে দিন দিন বাড়িয়ে চলছেন তাদের সবজিবাগানের পরিধি। চাষ তালিকায় যোগ করছেন নতুন নতুন জাতের সবজি। এর মধ্য দিয়ে গড়ে উঠছে কর্মসংস্থানের নিত্যনতুন সুযোগ। আর এভাবেই তাদের ভাগ্যের চাকার সঙ্গে ঘুরছে দেশের অর্থনীতির চাকাও।

তাদের দেখাদেখি এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষক পরিবারগুলো অন্য ফসল চাষের পাশাপাশি সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন জমিকে সবজি চাষের আওতায় নিয়ে আসছেন।

কেবল তারা তিনজনই নন, এই তিনজনের অনেক আগেই গাড়ীদহ ইউনিয়নের ছোট ফুলবাড়ী গ্রামের মাহবুবুর রহমান, নূরুল ইসলাম, ফুলবাড়ী গ্রামের আবদুস সালাম, আবদুল করিম ও চণ্ডিপুরের আমজাদ হোসেনসহ শতশত পরিবার সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। সবজি চাষই তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে।

উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের গুয়াগাছী গ্রামের সফল সবজিচাষি হায়দার আলী বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে প্রথমে বাড়ির আঙিনায় ছোট পরিসরে টমেটো চাষ শুরু করেন।

টানা তিন মাস পরিশ্রম শেষে গাছে ফল আসে। হাতে আসতে শুরু করে নগদ টাকা। মাত্র ৬শতক জায়গায় লাগানো গাছ থেকে প্রায় ১৬হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেন তিনি। এ দফায় নিজের শ্রম ও জৈব সার বাদে হাজার খানেক টাকাও ব্যয় করতে হয় তাকে।

সেটা ২০০৯সালের কথা। সে-বছর তিনি ১৫হাজার টাকা ব্যয়ে ১বিঘা জমিতে আগামজাতের টমেটো চাষ করেন। উক্ত জমি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেন। একইভাবে ৭মণ ধানের বিনিময়ে অন্যের কাছ থেকে ৩মাসের জন্য ১বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সেখানেও আগামজাতের ফুলকপি চাষ করেন।
এই জমি থেকেও তিনি প্রায় ১লাখ ২০হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেন। পাশাপাশি সব খরচ বাদে প্রায় ২৭হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেন।

সবজি চাষ করেই তিনি এ পর্যন্ত গ্রাম ও শহরে বেশ কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। এছাড়াও অন্যের কাছ থেকে বেশ কয়েক বিঘা জমি বন্ধকও নিয়েছেন। এসব জমিতে তিনি মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন সবজির চাষ করেন।

উপজেলার ভাটরা গ্রামের সবজিচাষি সাইফুল ইসলাম  জানান, কয়েক বছর ধরে তিনি বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। এ-বছর তিনি হাইব্রিড জাতের বেগুন চাষ করেছেন। এই বেগুন নিয়ে ব্যাপক আশাবাদীও তিনি।

এর আগে তিনি হাইব্রিড জাতের মরিচের চাষ করেছেন। সেই মরিচের সাথী-ফসল হিসেবে বেগুন চাষ করেছেন। এছাড়া তার একটি নার্সারিও রয়েছে। যেখানে তিনি বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেন। আর রকমারি সবজি চাষই তার জীবনে সফলতা বয়ে এনেছে।

সুঘাট ইউনিয়নের চরবেলগাছি গ্রামের আরেক সফল সবজিচাষি কৃষক গাজিউল ইসলাম।  তিনি জানান, তিনি প্রায় ২০বিঘার মত জমি চাষ করেন। এর মধ্যে অধিকাংশ জমিতে সবজি চাষ করেন। কেননা সবজি তার জীবন ও সংসারকে স্বাবলম্বী করে তুলেছে।

একইভাবে গোপালপুরের কৃষক নুর মোহাম্মদ, আজিজুল হক, আলতাব হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক সবজি চাষ করেই আজ স্বাবলম্বী, স্বচ্ছল।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, এ উপজেলায় প্রায় ৬১হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার কৃষক কেবল সবজি চাষ করেই পুরোপুরি স্বাবলম্বী হয়েছেন। সময়ের ব্যবধানে এ সংখ্যা আরও বাড়ছে বলে এই কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top