সকল মেনু

ভৈরব খননে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও প্রণীত প্রকল্পের বাস্তবায়নের দাবি

আব্দুল ওয়াহাব মুকুল:২০০১ সালে ভৈরব নদ পুনঃখনন প্রকল্প প্রণয়ন ও ২০১০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এ নদ সংস্কারের প্রতিশ্রুতি প্রদানের কোনোটাই কার্যকর হয়নি। এই সুযোগে ভূমিদস্যুরা নদটি গিলে খাচ্ছে। ১৯২৬ সালের ভূমি জরিপে ভৈরব নদের প্রশস্থতা কোনোখানেই ৫০০ ফুটের কম ছিল না। কিন্তু ১৯৯২ সালের জরিপে সেই প্রশস্থতা ১২০ ফুটে নেমে এসেছে। বাকি ৩৮০ ফুট ওই সব ভূমিদস্যুদের পেটে গেছে। বাকি টুকু যাবার পথে।   ভূমিদস্যুদের পেট থেকে ঐ জমি উদ্ধার ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এ নদ সংস্কারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবীতে মুক্তিােদ্ধা, সাংবাদিক, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ নানান কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করে। তাদের এক আওয়াজ অবিলম্বে ভৈরব নদ সংস্কার করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিশ্রুত এই নন্দিত উদ্যোগ সফল করতে দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক একরামউদ্দৌলাহ, এম আর খায়রুল উমাম, ইকবাল কবির জাহিদ, এলাহাবাদ খান, গাজী গোলাম মোস্তফা, আইনজীবী সৈয়দা মাসুমা বেগম, মুক্তিযোদ্ধা রশিদুর রহমান রশিদ প্রমুখ যশোরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় ভৈরবের উৎসমুখ মাথাভাঙ্গা নদে বাঁধ দেয়ায় ভৈরব নদে ১৫০ বছর ধরে পদ্মার পানি আসে না। উজান থেকে ভাটি পর্যন্ত নদের পুরোটাই পাঁচ থেকে আট ফুটে তলানী জমে একদিনের প্রমত্তা ভৈরব আজ ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নদটি এখন পানি ও বায়ু দূষণের পাশাপাশি মশা প্রজননের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। উৎসমুখ থেকে  খুলনায় শিবসা নদীর খুলনা হার্ডবোর্ড মিল ঘাট পর্যন্ত ভৈরব নদের দৈর্ঘ ১৩৩ কিলোমিটার। ভৈরব  স্রোতধারা হারিয়েছে বলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো নদ-নদীতে আর পদ্মার পানি আসতে পারে না। কারণ এই এলাকার সব নদ-নদী ভৈরব নদের শাখা। এর ফলে এই এলাকায় লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, আর্সোনিকের বিষক্রিয়া এবং সুন্দরবন ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। লবণাক্ততা ঠেকাতে ১৯৬০ এর দশকে এই এলাকায় পোল্ডার, স্লুইস গেট ও বেড়িবাঁধ দেয়া হয়। কিন্তু এতে কোনই সুফল আসেনি, বরং নদীর পাশের নিন্মভূমি নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে জোয়ারের সময় ভেসে আসা পলি   নিন্মভূমিতে প্রবেশ করতে না পেরে সব নদীর তলদেশে পড়ে নদী ভরাট হতে থাকে। এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে বর্ষার সময় অতিরিক্ত পানি নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ফলে এই এলাকা প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে। দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক একরামউদ্দৌলাহ ও বিশিষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইকবাল কবির জাহিদ জানান, ২০০১ সালে ভৈরব নদ পুনঃখনন প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। সাড়ে ৮১ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ এই প্রকল্পের মধ্যে ছিল বসুন্দিয়া থেকে রাজারহাট পর্যন্ত ড্রেজার দিয়ে খনন, রাজারহাট থেকে তাহেরপুর পর্যন্ত ৭৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার শ্রমিক দিয়ে খনন, ৫০ কিলোমিটার সংযোগ খাল পুরঃখনন, ২০ টি ব্রিজ নির্মাণ ও পাঁচটি পানি নিয়ন্ত্রক অবকাঠামো নির্মাণ। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরিকরণের সুযোগ সৃষ্টি হতো। পলি অপসারিত হওয়ায় নৌ চলাচল শুরু হওয়ায় পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের সুযোগ সৃষ্টি হতো। জলাবদ্ধতা দূর হয়ে ফসল রক্ষা পেতো এবং লবণাক্ততা রোধ  হওয়ায় পরিবেশের উন্নয়ন ঘটতো। একই সাথে এই এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্বাভাবিক স্তর বজায় থাকতো। কিন্তু পরিকল্পনাটি অজ্ঞাত কারণে আজো বাস্তবায়িত হয়নি। তারা বলেন ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যশোর সফরকালে ভৈরব সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশও প্রদান করেন। গত ১৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ভৈরব খননের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে নির্দেশ পাঠান। কিন্তু এর বেশী আর কাজের অগ্রগতি হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top