সকল মেনু

কুমিল্লার ১০ সহস্রাধিক মানুষ আর্সেনিকের বিষে ধুঁকছে

 নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা : আর্সেনিকের বিষে ধুঁকছে কুমিল্লার ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। সরকারি হিসেবে কুমিল্লার ১৬ উপজেলায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিশ্চিত ও সম্ভাব্য দুই হাজার ৯৯৭ জন মানুষের দেহে বইছে আর্সেনিকের বিষ। তবে এ সংখ্যা ১০হাজারেরও বেশি বলে মন্তব্য করেন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা। আর্সেনিকের ভয়াবহতার হার বেশি জেলার মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম উপজেলায়। পুরুষের তুলনায় আর্সেনিকোসিসে নারীর আক্রান্তের হার বেশি। আর্সেনিকবাহিত পানি পান করে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ নীরব এ ঘাতক প্রতিরোধে নেই কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা।

চিকিৎসকরা জানান, এ রোগে আক্রান্তদের হাত ও পায়ের তালুতে কালো কালো শক্ত দাগ দেখা যায়। একপর্যায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া ব্রংকাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুস, কিডনি ও লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। শেষ পর্যায়ে ক্যান্সারেরও সৃষ্টি হতে পারে।

আর্সেনিকের ভয়াবহতা এতটাই যে, আক্রান্ত মানুষ দীর্ঘদিন ভুগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তবে নীরব ঘাতক বলে তা চোখে পড়ছে না। আক্রান্তরা অনেকে সামাজিকভাবে হেনস্তা হচ্ছে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকজন এ রোগকে পাপের প্রায়শ্চিত্ত বলে প্রচার করছে।

আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্তের কারণে অনেক নারী বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নে এরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

লাকসামের ইরুয়াইন গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, রোগের কথা বললে শ্বশুর বাড়ি ছাড়া হতে হবে,তাই তিনি রোগের বিষয়ে তাদের কিছু জানাননি। পরে বাবার বাড়িতে এসে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্র মতে, মনোহরগঞ্জে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৮০ জন, লাকসামে ৫৬২, হোমনায় ৪৮, দাউদকান্দিতে ২২৮, মুরাদনগরে ৭২৪, দেবিদ্বারে ১২০, চান্দিনায় ৫৯৬, বরুড়ায় ৩২, চৌদ্দগ্রামে ১৩, নাঙ্গলকোটে ৯১ ও তিতাসে ৩৫ জন।

কুমিল্লার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হলদিয়া মহিলা উন্নয়ন সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী আবু তাহের রনি জানান, ধারণা করা হচ্ছে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি হবে। সমস্যা জটিল না হলে তৃণমূলের মানুষ চিকিৎসকের নিকট যাচ্ছেন না।যার কারণে সব রোগী শনাক্ত হচ্ছে না। যতদিন এনজিও ফোরামের প্রকল্প ছিলো ততো দিন তারা কিছু এলাকায় রোগীদের সেবা দিতে পেরেছেন বলে তিনি জানান।

লাকসামের চরবাড়িয়া গ্রামের ফারুক আহমেদ নামের এক রোগী জানান, আগে এনজিও থেকে ওষুধ দিতো। এখন তারা আসছেন না। তিনি তাদের এলাকায় আরো আর্সেনিক মুক্ত টিউবয়েল বসানোর দাবি জানান।

লাকসামের কান্দিরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান, এ ইউনিয়নের ইরুয়াইন,বাকড্ডা ও কান্দিরপাড় গ্রামে অনেক মানুষ আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত। এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকি পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়া গ্রামগুলোতে আর্সেনিকমুক্ত টিউবয়েল বসানো প্রয়োজন।

লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. মো. সালাউদ্দিন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। রোগী আসলে ওষুধ সরবরাহ করা হবে।

এনজিও ফোরাম কুমিল্লার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মীর মোস্তাক আলী জানান, এনজিও ফোরাম আর্সেনিক নিয়ে কাজ করেছে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাংলাইশ, ডুমুরিয়া,লাকসাম উপজেলার ইরুইয়াইন, ফতেপুর, চরবাড়িয়া ও রাজাপুর গ্রামে। বর্তমানে কাজ চলছে মেঘনা উপজেলায়।

আর্সেনিক মুক্ত নলকূপ স্থাপন, আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা, পুনর্বাসন এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে তারা কাজ করছেন। প্রকল্পের সীমাবদ্ধতার কারণে সব রোগীকে তদারকি করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না বলেও জানান তিনি।

সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, আর্সেনিকোসিস রোগীদের চিকিৎসার চেয়ে আর্সেনিক মুক্ত পানি পান করা জরুরি। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে মাঠ পর্যায়ে তাদের কর্মীরা কাজ করছে। শনাক্ত রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে জরুরি সেবা দেওয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top