সকল মেনু

১০ জন ডাক্তার দিয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতাল চালানো হচ্ছে

 এস,আই মল্লিক, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ডাক্তার সংকট । চিকিৎসা সেবা ব্যাহত। ১০জন ডাক্তার দিয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতাল চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন বহিঃবিভাগে ৭৮০ থেকে ৮০০ রোগী চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্মরত ডাক্তাররা। রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে নানা ভাবে ভোগান্তির স্বীকার  হচ্ছে প্রতিদিন। ৫টি এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ৩টি এবং ৬টি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে ২টি বিকল হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ১৫ জুন  ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নিত করণ করে কার্যক্রম শুরু করা  হয়। তবে এর জন্য কোন জনবল বাড়ানো হয়নি। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ২০১৪ সালে ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে দুই ধাপে ২৯ জানুয়ারী কর্মচারী ও ১১ সেপ্টেম্বর ডাক্তারদের পদ সৃষ্টি করা হলেও নার্সদের কোন পদ সৃষ্টি করা হয়নি। ৫০ শয্যার জনবল (নার্স) দিয়ে হাসপতালে রোগীদের সেবাদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। হাসপাতালের কাগজপত্রে সৃষ্টপদের ৪০ জন ডাক্তারের মধ্যে ১৫ জন ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাকি ২৫ জন ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে। উল্লেখ্য নিয়োগকৃত ১৫ জন ডাক্তারের মধ্যে ২০০৭ সালের ৭ মে আকাশ নামে সাড়ে ১০ বছরের এক শিশু সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভুল চিকিৎসায় মারা যায়। এ ঘটনায় ততকালিন বর্তমান সাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ স্বপন কুমার কুন্ডু ও ডাঃ রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। ২০০৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই দু’জন ডাক্তারকে বরখাস্ত করেন। বর্তমানে মামলাটি নিস্পত্তি হয়ে গেলেও নিয়োগ জটিলতার কারনে তারা কর্মস্থলে যোগদান করতে পারছেন না। এছাড়া ডাক্তার ফারজানা পারভীন নুপুর ও ডাক্তার রোকসানা পারভীন উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য চলতি মাসের ২মার্চ বদলি হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেছেন। কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ এ.কে.এম কামাল কারাগারে আটক রয়েছেন। আটকের বিষয় জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুস্ সালাম জানান, ডাঃ এ.কে.এম কামাল হৃদরোগের একজন ভালো চিকিৎসক। তার মুক্তির ব্যাপারে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলাপ করেছি। এছাড়া বি.এম.এ ঝিনাইদহ জেলা শাখার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক,সিভিল সার্জন ও পুলিশ সুপার বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ১০০ শয্যার হাসপাতালে ডাক্তারসহ জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রতি মাসে ডাক্তার নিয়োগের জন্য চিঠি পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ডাক্তার বা জনবল নিয়োগ দিতে পারছেননা। বর্তমানে হাসপাতালটিতে মাত্র ১০ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। অপর দিকে ১০০ শয্যার হাসপাতালে সৃষ্টপদের ২০ জন সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট এর মধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে  মাত্র ৫ জন। বাকি ১৫ জনের পদ শূন্য রয়েছে। প্রায় ৫ থেকে ৭ বছর যাবৎ সিনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, শিশু, মেডিসিন,সার্জারী, নাক,কান,গলা (ইএনটি) এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক,কার্ডিওলজি,রেডিওলজি,ইএনটি,এ্যানেসথেসিয়া,মেডিসিন,গাইনী,চক্ষু,শিশু,প্যাথলজী এবং চর্ম/যৌন ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে।  যে কারনে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ রেজা সেকেন্দার জানান, ভৌগলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে এ জেলায় মোট জন সংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ। খুলনা-ঢাকা  ভায়া যশোর মহা সড়কের পাশে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল অবস্থিত হওয়ায় হাসপাতালটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। প্রত্যেক দিন বহিঃবিভাগে প্রায় ৮শ’ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। ১০০ শয্যার হাসপাতালে প্রায় ১৮০ জন ভর্তি রোগী থাকে। ডাক্তার স্বল্পতার কারনে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্মরত ডাক্তারদের। এতে করে সাধারন রোগীদেরও  ভোগান্তির স্বীকার হতে হয় । এছাড়া হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় রোগীরা ভালো চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালে ৫টি এ্যাম্বুলেন্স এর মধ্যে ৩টি এবং  ৬টি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে ২টি মেশিন দীর্ঘদিন যাবত বিকল হয়ে পড়ে আছে। এতে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তিনি। অর্থোপেডিকস্ সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ এ.এস.এম শাহাবুল করিম জানান,হাসপাতালে ঢ়ৎড়ংঃযড়ংরং লাগানোর কোন যন্ত্রপাতি না থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ডাক্তার জানান, বর্তমানে হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারদের মধ্যে কয়েক জন ডাক্তারের পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে তাদের পদোন্নতি বা সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হচ্ছেনা। এদিকে ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল  ১০০ শয্যা থেকে উন্নিত করণ করে ২৫০ শয্যার ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন। যার কোন কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। রোগীদের দুরভোগ লাঘবে ঝিনাইদহ বাসি ১০০ শয্যার হাসপাতাল জরুরী ভিত্তিতে ২৫০ শয্যায় উন্নিত করনের কার্যক্রম ও হাসপাতালে জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তার নিয়োগ দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top