সকল মেনু

রংপুরে শতাধিক শিক্ষক নাশকতার মামলায় পলাতক থেকেও বেতন ভাতা তুলছেন নিয়মিত

রংপুরইকবাল হোসেন, রংপুর প্রতিনিধি : জেলার অঞ্চলে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নাশকতার মামলায় পলাতক থেকেও বেতন-ভাতা তুলছেন নিয়মিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের না আশায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। এব্যাপারে পলাতক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশ নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, এ অঞ্চলে নাশকতার মামলার আসামী  ৫০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষক । মামলার পর থেকেই তারা পলাতক। তবে মাঝে মাঝে গোপনে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন ভাতা তুলছেন নিয়মিত। তারা পুলিশের খাতায় নাশকতার মামলার পলাতক আসামী। এসব শিক্ষকের বেশিরভাগই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মোবাশ্বের আহমেদ জামায়াতের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত। মানবতা বিরোধি অপরাধের মামলায় জামায়াতনেতা দেলোয়ার হোসাইন সাইদীর ফাঁসির রায়ের পর জামায়াত-শিবির মিঠাপুকুরে তান্ডব চালায়। তারা পুলিশ বিজিবি সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ভাংচুর ও লুটপাট চালায় ব্যাংক এবং দোকানপাটে। আগুনে পুড়িয়ে দেয় আওয়ামী লীগ অফিস। এসব ঘটনায় জড়িত থ্কাার অভিযোগে মোবাশ্বের আহমেদ এ মামলায় আসামী ছিলেন। দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। পলাতক থেকেও তিনি হাজিরা খাতায় নিয়মিত ছিলেন। এরপর মঙ্গলবার সকালে রানীপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে এসে গ্রেফতার হন তিনি। মিঠাপুকুর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান মোবাশ্বের বেতন ভাতা তোলার জন্যই কলেজে এসেছিলেন।
এ কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল্লাহেল কাফি জানান, শিক্ষক মোবাশ্বের পলাতক ছিলেন না। তিনি বিদ্যালয়ে আসতেন। তাই তিনি বেতন ভাতাও নিয়মিত তুলতেন। তার প্রতিষ্ঠানে মোবাশ্বেরসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত বলেও তিনি জানান।
এছাড়া রংপুরের পীরগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক নুরুল আমীন ও গোলাম মোস্তফা এবং একই উপজেলার মাদারগঞ্জ মাদ্রাসার শিক্ষক মোকসেদ আলী। দীর্ঘদিন থেকে পুলিশের খাতায় পলাতক আসামী। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতায় হাজিরা দিয়ে বেতনভাতা তুলছেন ঠিকই। পীরগাছা উপজেলা ডিগ্রী কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক মোতালেব হোসেন পুলিশ হত্যা মামলার আসামী হিসেবে পলাতক। কিন্তু বেতন ভাতা ঠিকই তুলছেন বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক সূত্র দাবি করেছে। মিঠাপুকুর উপজেলার রামরায়পাড়া ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারি সুপার মাওলানা এনামুল হক পলাতক অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বেতনভাতা তুলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব শিক্ষক জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত।  পীরগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রুবেল মিয়া ও আবদুস ছালাম জানান, অনেক শিক্ষক নিয়মিত মাদ্রাসায় আসেন না। তাই আমরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছি।
এদিকে গাইবান্ধা জেলায় ১৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার কুতুব উদ্দিন। জানা গেছে, পলাশবাড়ি মেরিরহাট ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম নাশকতা ও সহিংসতার ৭টি মামলায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু মাদ্রাসার হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে নিয়মিত বেতন ভাতা তুলছেন বলে অভিযোগ রযেছে।
শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলে কমপক্ষে ৫০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষক পলাতক রয়েছেন। তারা গোপনে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতনভাতা তুলছেন। এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে জামায়াত শিবিরের সাথে সংশ্লি¬ষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তারা নাশকতা ও সহিংতার মামলারও আসামী। এরই মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
মানবতাবিরোধি অপরাধে জামায়াতনেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর পরই রংপুরের মিঠাপুকুর ও পীরগাছা উপজেলায় ব্যাপক সহিংসতা চালায় জামায়াত-শিবির। তারা এসময় পুলিশকেও হত্যা করে। এসব ঘটনায় সে সময় ৫ হাজারের বেশি আসামী করে ৫টি  মামলা করে পুলিশ। এরপর সহিংসা হয় গত বছরের ৫ জানুয়ারী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে। নির্বাচন বানচালের দাবিতে বিভিন্ন স্কুলে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় জামায়াত শিবির বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের প্রায় ১০ হাজার নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সর্বশেষ সহিংসতা ঘটেছে গত ১৩ জানুয়ারী। ওই দিন গভীর রাতে দুবৃর্ত্তরা মিঠাপুকুর এলাকায় উলিপুর থেকে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহি বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করলে ঘটনাস্থলেই ৪ জন ও চিকিৎসাধিন অবস্থায় আরো ৩ যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যায়। দগ্ধ হয় কমপক্ষে ২৫ জন। এছাড়া ৬ ফেব্রয়ারি গাইবান্ধার তুলশিঘাটে যাত্রীবাহি বাসে পেট্রোল বোমা মেরে শিশু নারীসহ ৮ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এ ঘটনার সাথেও জামায়াত শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে পুলিশ প্রমান পেয়েছে। এসব ঘটনায় পৃথক মামলা হলে গ্রেফতার করা হয় জামায়াত-শিেিবরর শতাধিক নেতাকর্মীকে। তাদের বেশিরভাগই মাদ্রাসার শিক্ষক। বাকিদের  গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এব্যাপরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোস্তাক হাবিব সাংবাদিকদের জানান, বেতন তোলার বিষয়ে তাদের কাছে খবর রয়েছে। তাই উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। যারা পলাতক থেকে বেতনভাতা তুলছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে তিনি জানান।
রংপুরের জেলা প্রশাসক ফরিদ আহাম্মদ জানান, এরই মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে না এসে বেতন ভাতা তোমার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়ার জন্য। এছাড়া মামলায় যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়ে গেছে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্ধেশ দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top