সকল মেনু

কোনটি প্রধান্য পাবে আবেগ না বিবেক ?

 মুহাম্মদ আবদুল কাহহার: আবেগ ও বিবেক ছোট ছোট দু’টি শব্দ, কিন্তু এর পরিধি ব্যাপক। প্রত্যেক মানুষের জীবনে আবেগ ও বিবেক এ দু’টি সত্ত্বা কমবেশী বিরাজ করছে। আবেগের সংজ্ঞা দেয়া খুব সহজ নয়। অনেকে আবেগকে অনুভূতির সমার্থক ধরে নেয়। কিন্তু আবেগ মানসিক, আর অনুভূতি শারিরীক ও মানসিক দু’টোই হয়ে থাকে। শারীরিকভাবে বলতে গেলে মসৃন পেশি এবং বিভিন্ন গ্রন্থির কারণে শরীরের অন্তর্নিহিত পরিবর্তনই হল আবেগ বা অনুভূতি। সামগ্রিকভাবে চেতনার যে অংশ অনুভূতি ও সংবেদনশীলতার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত তাকে আবেগ বলা হয়। মাানুষের অজান্তেই আবেগ তড়িৎ গতিতে প্রবেশ করে। আবেগ থাকতে পারে তবে তা অতিরিক্ত হওয়া জীবনের জন্য অমঙ্গল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবেগ মনের শক্তি হিসেবে কাজ করে। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারা একটা মুখোমুখি যুদ্ধের চেয়ে কঠিন। যে সব আবেগ মানুষকে বাস্তবতা থেকে দূরে রাখে তা হলো : অতিরিক্ত ভালবাসা, হতাশা, রাগ, হিংসা /ঈর্ষা, লোভ-লালসা ইত্যাদি। আবেগ কারো বেশি আর কারো কম। সবই বুঝে আবেগের বশীভূত হয়ে কোন কাজ করা ঠিক নয় তবুও মানুষেরা আবেগকেই বেশী কাছে টেনে নেয়। এর মাধ্যমে মানুসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। আবেগ থেকে অস্থিরতা বাড়ে যা মানসিক অশান্তিসহ ক্রোধের দিকে ধাবিত করে। যার শেষ পরিণাম অমঙ্গল বা নেতিবাচক। নানা রকম মানুষের মধ্যে সুখ, ভয়-ভীতি, রাগ, দুঃখ, কষ্ট, বেদনাসহ অসংখ্য প্রকার আবেগ বিদ্যমান। ‘মটিভেশন এন্ড ইমোশন ’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত বেলজিয়ামের লিউভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে, মানুষের যে কোন আবেগ অন্যান্য যে কোন আবেগের চেয়ে দুঃখের আবেগ ২৪০ গুণ বেশি সময় স্থায়িত্ব হয়। আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সবার এক নয়। জ্ঞানের পরিচয় দিয়ে এর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। প্রায়ত লেখক হুমাযুন আহমেদ নারীদের আবেগ সম্পর্কে বলেছেন, ‘তরুণী মেয়েদের আবেগ হঠাৎ চলে যায়। আবেদকে বাতাস না দিলেই হলো। আবেগ বায়বীয় ব্যাপার, বাতাস পেলেই তা বাড়ে। অন্য কিছুতে বাড়ে না। (যখন নামিবে আঁধার [২০১২] : পৃষ্ঠা ০৯-১০)। ব্যক্তি বিশেষে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যে ব্যক্তি যত বেশি বাস্তবতার মুখোমুখি সে ততবেশি সমস্যার সমাধান দিতে পারেন। কারণ বাস্তবতার আলোকে বিবেক পরিচালিত হয়। আবেগ দিয়ে সমস্যা তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি আর বাস্তবতার নিরীখে বিবেক দিয়ে সমস্যার সমাধান ও সফলতার পথ বেশি। জাপানের গবেষক প্রফেসর ‘হিরোতাকা ওসাওসা’ আবিষ্কার করলেন ‘সাইব্রগ গ্লাস’। এটি দেখতে চশমার মতো। এটি চোখে দিলে একজন মানুষ তার সব আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। (ইন্টারনেট)। আবেগ কর্মের দিকে ধাবিত করে আর বিবেক উপসংহারের দিকে ধাবিত করে। নিয়ন্ত্রিত আবেগ ও সুস্থ বিবেক সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। শুধু আবেগ দিয়ে সফলতা আসে না। নেতিবাচক দিকগুলো পরিহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অনেক চেষ্টা করেও যখন হতাশা থেকে মুক্ত হতে পারেন নি, আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় নি। কিংবা কোন কাজে মনোযোগ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছেন তখন কোরআন তেলাওয়াত করুন বা তেলাওয়াত শুনুন। পেছনের কোন সমস্যার সমাধানের কথা চিন্তা করুন। দীর্ঘ শ্বাস নিন। মুক্ত বাতাসে একটু বসুন। বিগত দিনে যে সকল কাজে সফল হয়েছেন তা মনে করতে চেষ্টা করুন। এছাড়া উত্তম চরিত্রের গঠনের জন্য ভাল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বইগুলো সর্বাগ্রে পড়া ও সৎসঙ্গ দেয়া দরকার। বই পড়া মানসিক অশান্তি ও হতাশা দূর করার চমৎকার পদ্ধতি। তবে কিছ’ বই আছে যা পড়লে মানসিক অশান্তি, হতাশা ও আবেগ বেড়ে যায় সে বইগুলো সর্বদা বর্জনীয়। যারা মানসিকভাবে দূর্বল তাদের পক্ষেই ঘর পালানো ও আত্মহত্যার মতো জঘন্য সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব। সকল পরিস্থিতিতে মনের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সঠিক সিদ্ধান্তের পথে সবচেয়ে বেশী বাধা দেয় অতিরিক্ত আবেগ। আবেগ ক্ষতিকর নাকি অতিরিক্ত আবেগ ক্ষতিকর এটি নিয়েও রয়েছে অনেকের ভিন্নমত। আবেগ সেখানে উত্তম যেখানে তার প্রয়োজন। আবেগ আমাদের পরম বন্ধু কখনো আবার পরম শত্রু। ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’ধরণের আবেগ নিয়েই মানুষ বেড়ে ওঠে। পরিকলপপনা অনুযায়ী সফল হতে হলে বিবেকের মাধ্যমে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top