সকল মেনু

চট্টগ্রামে দুর্গম পাহাড়ে বিপুল অস্ত্রসহ জঙ্গি আস্তানার সন্ধান, আটক ৫

RAbরোমান শেখ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার এক দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গিদের আস্তানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব ৭ এর সদস্যরা। বিপুল পরিমান দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের বিভিন্ন সারঞ্জামাদিসহ আটক করা হয়েছে পাঁচজনকে। আটক পাঁচজনই জঙ্গি সদস্য বলে দাবি র‌্যাবের।
শনিবার বিকাল থেকে রবিবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত নির্ঘুম টানা অভিযানের পর এ আস্তানার সন্ধান পায় র‌্যাব সদস্যরা।
অভিযানে আটক করা হয়েছে মোব্বাসের হোসেন, আবদুল খালেক, আমিনুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান ইসহাক ও তাসমীম নামের পাঁজনকে। এদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব।
র‌্যাব ৭ এর সিও কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি সন্দেহে ২৫ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে জঙ্গি সম্পৃক্ততার দায়ে ১২জনকে আটক রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আটক ১২ জনের স্বীকারোক্তিতে র‌্যাব শনিবার বিকাল থেকে শনিবার ভোররাত পর্যন্ত টানা অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে চট্টগ্রাম-বাঁশখালী মহাসড়কের আড়াই কিলোমিটার ভেতরে বাঁশখালী উপজেলার লটমনি দুর্গম পাহাড়ে পশু পালনের খামারের আড়ালে জঙ্গি আস্তানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া যায়।
পরে সেখান থেকে দেশি-বিদেশি বিপুল পরিমান অস্ত্র ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের বিভিন্ন সারঞ্জামাদিসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়।
আটককৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মাটির ভেতর গর্ত করে রাখা একে ২২ রাইফেল তিনটি, দেশিও তিনটি এলজি, ছয়টি বিদেশি পিস্তল ও একটি রিভালবার, আটটি চাপাতি, সাতশ’র অধিক তাজা গুলি ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের পোশাকসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে র‌্যাব।
উদ্ধার করা আলামতে র‌্যাব ধারণা করছে প্রশিক্ষণার্থীদের বিমান ছিনতাইয়ের কৌশল, গেরিলা যুদ্ধ, শারীরিক ও সামরিক প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
কর্নেল মিফতাহ আরো জানান, হাটহাজারীতে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে মূল সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়ে।  এক থেকে দুই মাস প্রশিক্ষণ শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের। সরকারি রিজার্ভ ফরেস্টের ভেতরে এই খামারে চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলা থেকে জঙ্গিরা প্রশিক্ষণের জন্য আসত। প্রশিক্ষণার্থীদের সাতকানিয়া উপজেলার চনকোলা ও কা নাবাদ এলাকা দিয়ে লটমণি পাহাড়ের গভীর জঙ্গলে নিয়ে আসা হতো। এটি একটি দীর্ঘ ও দুর্গম পথ যা সচারাচর জনসাধারন কম চলাচল করে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ শেষে এরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বোমা হামলার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটায়।
সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছমির উদ্দিন জানিয়েছেন, রিজার্ভ ফরেস্টের ভেতর ব্যক্তিগত দখলদারদের কাছ থেকে মৌলভী মুহাম্মদ মোবারক নামে এক ব্যক্তি ১২০ শতক জায়গা ক্রয় করে। পরে চকরিয়ার জনৈক আবদুল আজিনের অর্থায়নে লটমণি পাহাড়ে পশু পালনের খামারটি তৈরি করা হয়েছিল। ২০১০ সালে পাহাড়টি সংরক্ষিত বনা লের আওতায় আসার পর সেখানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত দৃশ্যত বন্ধ হয়ে যায়।
র‌্যাব সদর দপ্তরের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) কমান্ডার মুফতি মাহমুদ জানিয়েছেন, দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় তারা কয়েকটি ফায়ারিং রেঞ্জ ও বাংকার তৈরি করেছিল। এখান থেকে উদ্ধার করা আলামতে ধারণা করা হচ্ছে প্রশিক্ষণার্থীদের বিমান ছিনতাইয়ের কৌশল, গেরিলা যুদ্ধ, শারীরিক ও সামরিক প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
তিনি আরো বলেন, জঙ্গি প্রশিক্ষণসহ অস্ত্র যোগানে অর্থনৈতিক ও মদদে কারা সহায়তা করছে এ বিষয়ে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top