সকল মেনু

সরকার চাইলে একদিনেই সঙ্কটের অবসান

83707নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, এর ভিত্তিতে আলোচনা সম্ভব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। বিরোধী জোটের সঙ্গে সরকার সংলাপে রাজি হলে এক দিনেই সঙ্কটের অবসান হতে পারে।

গতকাল রোববার বিকেলে নিউউয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে খাবার বাড়ি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

সরকার দলীয় ক্যাডার ও গোয়েন্দাদের দিয়ে পেট্রোলবোমা মেরে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে অভিযোগ করে খোকা বলেন, ‘দেশের সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে এবং দলীয় অনেক নেতাকর্মীর অনুরোধ উপেক্ষা সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তুলে দিয়ে শেখ হাসিনা দেশকে গভীর সঙ্কটে ফেলে দিয়েছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি আর সঙ্কটের দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘দেশের সকল রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, বিশিষ্টজনেরা এমনকি শেখ হাসিনার নিজের দল আওয়ামী লীগও তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে অভিমত দিয়েছিল। কিন্তু সবার মত উপেক্ষা করে তিনি একক সিদ্ধান্তে একটি মীমাংসিত ব্যবস্থা ধ্বংস করার মাধ্যমে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। সুতরাং আজকের পেট্রোল বোমা ও কথিত ক্রসফায়ারে সকল হত্যাকাণ্ডের দায় তাকেই নিতে হবে।’

খোকা অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশের বিরোধী দলসমূহকে নিশ্চিহ্ন করতেই ভয়াবহ গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে হাসিনা সরকার। কোনো জনসমর্থন না থাকলেও শুধুমাত্র পোশাকধারী বাহিনীর কারণেই এখন পর্যন্ত ক্ষমতা আকড়ে ধরে রেখেছেন শেখ হাসিনা, যারা তারই নির্দেশে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পোশাক পড়া খুনি ও সন্ত্রাসীদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ এবং তাদের ব্যাপারে সময়মতো ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশের জনগণ।’

দেশের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে তিনি সকল পর্যায়ের সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাসহ দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতন আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাদেক হোসেন খোকা প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের মতো আপনারাও বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন এবং বিচলিত। মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবন, অগণিত মা-বোনের ইজ্জত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত প্রিয় বাংলাদেশ আজ এক ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে। গত বছরের ৫ জানুয়ারি ইতিহাসের নজিরবিহীন এক প্রতারণামূলক ভোট-নাটকের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা জবরদখলকারী বর্তমান অবৈধ সরকার তাদের দানবীয় ক্ষমতা-ক্ষুধা মেটানোর জন্য দেশবাসীকে এই বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার অবৈধ ক্ষমতার দাপটে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় গত দেড়মাস ধরে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। একইভাবে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ওই দপ্তরের বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ এমনকি মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নির্বিচারে গুলি, ক্রসফায়ার, পেট্রোল বোমার সন্ত্রাস ও গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে দেশজুড়ে এক বিভিষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে সরকার। সে কারণেই আজ এই দূরদেশে বসে আপনাদের মাধ্যমে দেশ নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।

খোকা বলেন, ‘অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টা বাস্তবায়ন করার জন্য বর্তমান অস্ত্রবাজ সরকার এমন কোনো অপকর্ম নেই যা করছে না। চলমান আন্দোলন-লড়াইয়ের মুখে তারা গণদাবি মেনে ক্ষমতা ছাড়ার পরিবর্তে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করার এক ভয়াবহ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে উদ্যত হয়েছে। এ জন্য তারা প্রয়োজনে দেশকে সিরিয়া বা ইরাক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়ার হুমকিও প্রকাশ্যেই দিয়ে চলেছে।’

খোকা অভিযোগ করেন,’বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সরকার একদিকে দলীয় ক্যাডার ও দলবাজ গোয়েন্দা এজেন্টদের দিয়ে পেট্রোল বোমা মেরে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে, অন্যদিকে বিরোধী দলের নিরীহ নেতাকর্মীদেরকে প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের নামে সরাসরি গুলি চালিয়ে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চলমান আন্দোলন-লড়াইয়ে র‌্যাব-পুলিশের গুলিতে ও পেট্রোলবোমায় নিহত মানুষদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং তাদের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এছাড়া গুলি ও বোমায় আহত যেসব মানুষ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দুঃসহ যন্ত্রণায় ছটফট করছেন, তাদের প্রতিও আমাদের গভীর সহানুভূতি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বর্বরোচিত এসব হত্যাকাণ্ড ও হামলার প্রকৃত হোতাদের অচিরেই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং প্রত্যেক অপরাধীই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। এছাড়া জুলুমবাজ অবৈধ সরকারের বিদায়ের পর জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গ ও পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।’

সাদেক হোসেন খোকা বলেন, ‘স্বয়ং অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার জোটের নেতারা প্রকাশ্যে আন্দোলনকারীদের বুকে গুলি চালানোর উসকানি দিচ্ছেন। তাদের নির্দেশে প্রতিদিনই নিরপরাধ তরুণ ও যুবকদেরকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। নৃশংস কায়দায় গুলি চালিয়ে ঝাঁজরা করে দেয়া হচ্ছে তাদের বুক। এরপর সেই ছবি আবার গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে বিরোধী দল সমর্থকদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে, কোথাওবা বুলডোজার চালিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এমনকি মহিলাদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো পেশাচিক ঘটনাও সংঘটিত হচ্ছে। এসব ঘটনা কেবলমাত্র মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার কথাই মনে করিয়ে দেয়।’

তিনি বলেন,’আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে আমাদের প্রশ্ন, আপনারা কার বুকে গুলি চালাচ্ছেন? গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেওয়াটাই তাদের অপরাধ? এভাবে নিষ্ঠুরতা দেখিয়ে আপনাদের কি লাভ? আপনারা তো কোনো দখলদার বাহিনীর সদস্য নন। দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসলে আপনাদের ভবিষ্যত বংশধরেরাই উপকৃত হবে। সুতরাং এসব নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে নিবৃত্ত হওয়ার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানাই।’

সাদেক হোসেন খোকা বলেন, ‘দেশে জনগণের চলমান আন্দোলন-লড়াইকে জঙ্গি তৎপরতা হিসাবে প্রতিপন্ন করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে নিরীহ জনসাধারণের ওপর চালানো হচ্ছে বর্বরোচিত পেট্রোল বোমা হামলা। ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে অসংখ্য খবর বের হয়েছে যে, র‌্যাব-পুলিশের প্রহরায় মূলত আওয়ামী লীগের ক্যাডাররাই এসব হামলা চালাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ হাতেনাতে ধরাও পড়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে আন্দোলনের নামে নিরীহ জনগণের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর সংস্কৃতির জন্মদাতা আওয়ামী লীগ এবং ক্ষমতায় বসেও তারা এই সংস্কৃতি লালন করছে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ১৯৯৬ সালে আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগ কিভাবে ঢাকার শনির আখড়ায় বাসে পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়ে ১৭ জন নিরীহ যাত্রীকে পুড়িয়ে মেরেছিল। এরপর ২০০৪ সালে শেরাটন হোটেলের পাশে বিআরটিসির বাসে গান পাউডার হামলা চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করা হয়। সে সময় তারা আন্দোলনের নামে বোমা-সন্ত্রাস চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে হতাহত করেছিল।’

পরে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাদের মধ্যে আব্দুল লতিফ সম্রাট, জিল্লুর রহমান জিল্লু, গিয়াস আহমেদ, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, গিয়াস উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান চৌধুরী, ড. নূরুল আমীন পলাশ, এবাদ চৌধুরী, আব্দুস সবুর, মোশাররফ হোসেন সবুজ, উত্তম বণিক, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ আহমদ, পেনসিলভেনিয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর খান হারুন, যুবদল নেতা মামুন চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের দুই অংশের সভাপতি যথাক্রমে এম এ বাছিত ও আতাউর রহমান আতা, ছাত্রদলনেতা সোয়েব আহমেদ চৌধুরী, তারেকুল মারুফ, দেওয়ান রকি চৌধুরী প্রমুখ ছাড়াও খোকার ব্যক্তিগত সহকারী সিদ্দিকুর রহমান মান্না উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ক্যান্সারে আক্রান্ত বিএনপি নেতা খোকা চিকিৎসার জন্য বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top