হট নিউজ ডেস্ক : মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশে পরিণত হয়েছে কম্পিউটার। জরুরি কাজ ও বিনোদনের জন্য সবাইকে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয় এই যন্ত্রের সামনে। কম্পিউটার মনিটরে নিয়মিত ও অনেকক্ষণ ধরে কাজ করলে চোখের নানা সমস্যা ও উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ অবস্থাকে বলা হয় কম্পিউটার ভিশন সিনড্রম।
চোখে ব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া করা, চোখের ক্লান্তি বোধ করা, ঝাপসা দেখা, মাঝেমধ্যে দুটি দেখা এবং মাথাব্যথা এ রোগের উপসর্গ।সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী যাঁরা প্রতিদিন কম্পিউটারে কাজ করে থাকেন, তাঁদের ৮৮ শতাংশ লোকেরই সামান্য থেকে বেশিমাত্রার নান ধরনের চোখের উপসর্গ রয়েছে। সুতরাং কম্পিউটার ভিশন সিনড্রম একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাই হয়ে গেছে।কম্পিউটার অক্ষরগুলো ছাপার অক্ষরের মতো নয়। ছাপার অক্ষরগুলোর মধ্যভাগ এবং পার্শ্বের ঘনত্ব একই রকম। এগুলো দেখার জন্য সহজেই চোখের ফোকাস করা যায়, অন্যদিকে মনিটরের অক্ষরগুলোর মধ্যভাগ ভালো দেখা যায় কিন্তু পার্শ্বভাগের ঘনত্ব কম হওয়ায় পরিষ্কার ফোকাসে আসে না। মনিটরের অক্ষরগুলোর এই ফোকাসের অসমতার জন্য চোখের নিকটে দেখার যে প্রক্রিয়া বা অ্যাকোডোমেশন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এভাবে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করলে চোখের নানা উপসর্গ দেখা দেয়।সাধারণ লেখাপড়ার সময় ১৪ থেকে ১৬ ইঞ্চি দূরে পড়ার জন্য যে পাওয়ারের চশমা লাগে, কম্পিউটারে কাজ করার সময় ১৮ থেকে ২৮ ইঞ্চি দূরে মনিটর রেখে সে পাওয়ার দিয়ে ভালো দেখা যায় না। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা কম্পিউটারে কাজ করার জন্য বিশেষ পাওয়ারের চশমা দিয়ে থাকেন, যার নাম কম্পিউটার চশমা। ৩৫ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের ইউনিফোকাল বা শুধু একটি পাওয়ারের চশমা দিলেই চলে কিন্তু পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য কোনো কোনো সময় ওই ইউনিফোকাল চশমা দিয়ে তুলনামূলক কাছে কপি পড়তে অসুবিধা হতে পারে। তাঁদের জন্য মাল্টি ফোকাল চশমা দিলে কপি পড়া এবং মনিটরে কাজ করার সুবিধা হয়।
এখন জেনে নেই কিভাবে কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা চোখের পরিচর্যা করবেন :
চোখ পরীক্ষা : কম্পিউটারে কাজ করার আগে চোখ পরীক্ষা করা জরুরি। চশমা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা থাকলে অবশ্যই তা করতে হবে। চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কম্পিউটার আই গ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
সঠিক আলোর ব্যবহার : ঘরের ভেতর বা বাইরে থেকে আসা অতিরিক্ত আলো চোখের ব্যথার কারণ হতে পারে। বাইরে থেকে আলো এসে চোখে না লাগে বা কম্পিউটার পর্দায় না পড়ে সে জন্য পর্দা, ব্লাইন্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের আলো—টিউবলাইট বা ফ্লোরেসেন্ট বাল্বের আলো হলে এবং স্বাভাবিক অফিসের আলোর চেয়ে কিছুটা কম হলে চোখের জন্য আরামদায়ক।
গ্লেয়ার কমানো : কম্পিউটার মনিটরের আন্টি গ্লেয়ার স্ক্রিন ব্যবহার করে এবং চশমায় অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ প্লাস্টিকের কাচ ব্যবহার করলে গ্লেয়ার কমানো যায়।
এক টানা কাজ করবেন না : গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা যারা কম্পিউটারে কাজ করেন তাদের চোখের সমস্যা হয় বেশি তাই প্রতি ৩০ মিনিট কাজ করার পর চোখকে কিছুক্ষণ রেস্ট দিতে হয়। কম হলেও ৫ মিনিট মনিটরের সামনে থেকে চোখ সরিয়ে নিন। ঘন ঘন পলক ফেলুন। পারলে সবুজ গাছ পালার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকুন।
অপলক তাকিয়ে না থাকা : মনিটরে কাজ করার সময় পলকহীন তাকিয়ে থাকা ঠিক নয়। এতে চোখ ড্রাই আই হয়ে যেতে পারে। তাই কাজ করার সময় বার বার চোখে পলক ফেলবেন। একটানা মনিটরে তাকিয়ে থাকা হতে বাঁচতে মাঝে মাঝে মনিটরের বাইরেও চোখ রাখুন।
চোখের ব্যায়াম : চোখের ব্যায়াম খুব সোজা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চোখ কিছুক্ষণ বন্ধ রাখুন। তারপর ঘন ঘস পলক ফেলুন কয়েকবার। এবার বন্ধ চোখ চক্রাকারে ঘুরান একবার যেদিকে ঘুরিয়েছেন পরের বার উল্টোদিকে ঘুরান। এতে চোখের ব্যায়ম হয়।
কাজের অবসরে চোখ ম্যাসাজ : কাজের অবসরে চোখ বন্ধ করে দুইহাতের তালু দিয়ে চোখে ঢেকে রাখুন এক মিনিট। এবার ছেড়ে দিন। প্রতি অবসরে অন্তত একবার এটা করুন।
চোখে পরিস্কার পানির ঝাপটা : কাজের ফাঁকে চোখে পরিস্কার পানির ঝাপটা দিন। অনেকেরই চোখ জ্বালা করে তখনই এই কাজটা করা উচিত। কাজের সময় চোখের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এটা করা উচিত।
কাজের ফাঁকে একটু হাটুন : কাজের বিরতিতে বসে থেকে রেস্ট না নিয়ে একটু হাটুন। হাটলে চোখের উপকার পাবেন। বসে থাকা অবস্থায় চোখের অবস্থান একরকম থাকে আর হাটার সময় চোখ অন্যরকম পরিবেশ পাবে।
স্কিন প্রটেক্টর : মনিটরের গায়ে স্কিন প্রটেক্টর ব্যবহার করুন অথবা চোখে জিরো পাওয়ার চসমা ব্যবহার করুন। কম্পিউটারে কাজ করতে চোখের জন্য উপকারি এমন চসমা পাবেন বিভিন্ন সানগ্লাসের দোকানে।
মনিটর হতে নিরাপদ দুরত্ব : মনিটর হতে চোখের দূরত্ব কম হলেও ২ ফিট বা ১.৫ ফিট হওয়া উচিত । মনিটর হতে এক ধরনের আলোর রস্নি বের হয় যা ২ ফিট দূর হতে প্রভাব ফেলতে পারে না । ভালো হয় যদি এলসিডি মনিটর ব্যবহার করেন অথবা এলইডি প্রযুক্তিও ভালো।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।