সকল মেনু

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের কবলে শিক্ষার্থীরা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ইকবাল হোসেন, রংপুর : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ফলে ক্লাসরুম তালাবদ্ধ থাকলেও খোলা  মাঠে বসে ক্লাস করলেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের বাইরে থাকা নীলদলের শিক্ষকরা তাদের ক্লাস নিয়েছেন। নীলদল ধর্মঘটের সাথে নেই। অপরদিকে, আন্দোলনকারিরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। উপাচার্যের অপসারণ ও প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন দাবিতে সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ। এতে সমর্থন জানিয়েছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবীকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসা ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। পরিষদের আহবায়ক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমান শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
সোমবার সকাল থেকেই ধর্মঘটপালনকারিরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনসহ সব ভবনেই তালা ঝুলিয়ে দেয়। ধর্মঘটের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু তারা ধর্মঘটকারিদের বাধায় তালা ভাঙ্গতে না পেরে মাঠের মধ্যে বসে পড়েন ক্লাস করার জন্য। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা কবি হেয়াত মাহমুদ ভবনের সামনে মাঠে ঘাসের মধ্যে বসে পড়েন। সেখানেই ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারি অধ্যাপক গোলাম রব্বানী ক্লাস নেন। সেখানে ক্লাস করা মাস্টার্স-এর শিক্ষার্থী এসএম শাহ জামিল জানান, আমরা কোন আন্দোলন ধর্মঘটে নেই। আমরা এখানে লেখ্পাড়া করতে এসেছি, আন্দোলনের কতে নয়। ফাল্গুনি রায় নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, এমনিতেই আমরা এক বছর পিছিয়ে পড়েছি। আরো যদি পিছিয়ে যাই তাহলে কি হবে ? ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি করে যে আন্দোলন তা আমরা চাই না। তাই মাঠে বসেই ক্লাস করছি। শিক্ষার্থী লাল বাবু ও মিমি জানান, আন্দোলনের ফলে এক বছর আমাদের কোন ক্লাস হয়নি। এক বছর পর আমরা ক্লাস করছি। তারা জানান আমরা সাধারন ঘরের সন্তান। বাবা মা তাদের ঘাম ঝরানো টাকা আমাদের পিছনে খরচ করছেন। এভাবে আর কতদিন আমাদের টাকা দেবেন। তাই আমরা কোন আন্দোলন চাই না। বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদও তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠে বসে ক্লাস নিয়েছেন। হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আপেল মাহমুদ ক্লাস নিয়েছেন তার ভবনের সামনের মাঠে। ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ করে আন্দোলন চাই না। আগে শিক্ষার্থীদের ক্লাস তারপর আন্দোলন। অগণতান্তি ও অযৌক্তিক ওই ধর্মঘটের সাথে  আমরা নেই।
অপরদিকে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের ডাকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারণ করে অবিলম্বে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণসহ বিভিন্ন দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট পালন করে। এতে সমর্থন জানিয়েছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবীকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসা ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। পরিষদের আহবায়ক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমান ও সদস্য সচিব ও  শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ।
সকাল থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট শুরু করে। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিন করে। এরপর প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’ আহবায়ক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমান, সদস্য সচিব ও শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণসহ কর্মককর্তা-কর্মচারি এবং শিক্ষার্থীরা। তারা তাদের দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন।
এদিকে, শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ করে আন্দোলনের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল।
নীল দলের সভাপতি আপেল মাহমুদ জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় চার মাস ধরে গুটিকয়েক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজস্ব দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে আসছে। প্রায় দুমাস ধরে প্রশাসনিক ভবনে তালাবদ্ধ করে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। গতকাল তারা সকল একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়েছে। তারা আন্দোলনের নামে  ধারবাহিকভাবে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করা কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভয়াবহ সঙ্কটে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, এ বিশ্বদ্যিালয়ে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষের ৯০ হাজারের বেশি আবেদনকারী শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষাও বন্ধ রেখেছে। বেগম রোকোয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দল শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করা এসকল কর্মসূচির প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছে। তাদের ওই অগণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ধর্মঘটের সাথে নীলদল নেই। ধর্মঘটের ফলে ভবন তালাবদ্ধ করলেও আমাদের শিক্ষকরা খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নিয়েছেন। নীল দল শিক্ষাকার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে যে কোন ন্যায্য দাবি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য আন্দোলনকারী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top