সকল মেনু

ভোলায় ২শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বুড়ির মেলা

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলায় প্রতি বছরের মত এবারও ২শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বুড়ির মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা গ্রামের প্রায় দুইশো বছরের পুরনো একটি সৃষ্টি গাছের তলায় দুই দিনব্যাপী এ মেলা হয়। প্রতি বছর এখানে স্বরসতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর বুড়ির মেলা ওই পূজারই একটি অংশ। স্থানীয়রা জানায়, গ্রায় ২শ’ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে এ পূজা। আর এ পুজাকে ঘিরে সৃষ্টি তলা বাজারে দুই দিন ধরে চলে বর্ণাঢ্য লোকজ মেলা। পূজার সাথে সাথে মেলায় কেনা-কাটা করতে সকাল থেকে জড়ো হয় হাজার হাজার নারী-পুরুষ। মেলায় শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মাটির তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র, মেয়েদের প্রসাধনী ও চুড়ি-মালার দোকানের পসরাও সাজিয়ে বসে দোকানিরা। দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে। বিকেলের মধ্যে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো এলাকা। এ সময় মেলায় গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশা-পাশি শহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভির জমায়। চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। পুরো এলাকা জুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। অপরদিকে চলে পূজা। পূজার পাশেই সৃষ্টি গাছের নিচে মায়ের নামে ভক্তদের মোমবাতি আর ধুপকাঠি দেয়ার ধুম পরে। এ সময় ভক্তদের উদ্দেশ্যে ছিটিয়ে দেয়া হয় বাতাসা। এ ছাড়াও স্থানীয় গ্রামবাসীর ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পায়েশ খাওয়ার উৎসব।
এ উৎসবকে ঘিরে প্রতি বাড়িতেই দুর-দুরান্তের স্বজনরা ছুটে আসে পিঠা খেতে এবং মেলা দেখতে। তাছাড়াও বাঙ্গালির ঐতিহ্য ধরে রাখতে পূর্ব পুরুষদের রেওয়াজ অনুযায়ী গ্রামের মানুষ ভোরে উঠে হলুদ ও সর্ষে বাটা দিয়ে গোসল করেন। অপরদিকে বাড়ির মেয়েরা ব্যস্ত থাকে পিঠা-পায়েস তৈরিতে। দিন ব্যাপী চলে অতিথি আপ্যায়ন এবং বিকেলে ছুটে যায় গ্রামের মেলার মাঠে। শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী ও বৃদ্ধরাও মেলায় এসে উপভোগ করার পাশা-পাশি মেলায় বসা বিভিন্ন দোকান থেকে কেনা-কাটা করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ, সুমন, দীলিপ কুমার, গোপাল মাষ্টার জানান, পূর্ব পুরুষদের কাছে শুনেছেন প্রায় ২শ’ বছর আগে এক বুড়ি মা এখানে স্বরসতী পূজা শুরু করে। সৃষ্টি গাছের তলায় এ পূজার আয়োজন করা হতো। সেই স্থানে কালের বিবর্তনে আশ্রম গড়ে তোলা হয়। আর এ পূজাকে ঘিরে বসে জমজমাট মেলা। লোকজ ঐতিহ্যের হরেক রকম পসরা সাজিয়ে দোকানিরা বেচা-কেনা করেন দুই দিন ধরে।
পূজা ও মেলা কমিটির সদস্য টিটু পাল জানান, তারা স্বরসতী পুজা নানা আনুষ্ঠানিকতায় মধ্যদিয়ে সম্পন্ন করেছেন। তিনি আরো জানান, মেলা কমিটির পক্ষ থেকে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের নির্বিঘ্নে মেলায় আসতে রাস্তাজুরে পুলিশের বিশেষ নিরাপ্তা ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top