সকল মেনু

রাজনৈতিক অস্থিরতায় মংলায় আটকে পড়েছে আমদানি পণ্যের ১২শ’ কন্টেইনার

মংমাহমুদ-হাসান, মংলা প্রতিনিধি : দেশব্যাপী চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরুপ প্রভাব পড়েছে মংলা বন্দরের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে। নির্ধারিত সময় সড়ক পথে বন্দরে পৌঁছাচ্ছে না রফতানিযোগ্য পণ্য। আর আমদানি পণ্যও ডেলিভারি নিতে হচ্ছে সড়ক পথে নানা বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে। টানা ১৮ দিনের অবরোধ ও হরতালে আমদানি পণ্যের ১২শ’ এ বন্দরে আটকে আছে। এছাড়া বন্দর জেটিতে রফতানি পণ্যের ১৩শ’ কন্টেইনার রয়েছে। অপরদিকে বিদেশে রফতানিযোগ্য পণ্যবাহী কন্টেইনারও নির্ধারিত সময় আসছে না বন্দরে। এ অবস্থায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের আমদানি ও রফতানি পণ্য নিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। এতে দিনকে দিন তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের এ সংকট মোকাবেলায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ চব্বিশ ঘন্টাই বিশেষ ব্যবস্থায় চলছে বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম। বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা দেশব্যাপী অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি এ বন্দরে। টানা অবরোধের মাঝেও বন্দরে অবস্থানরত জাহাজ ও জেটিতে যথারীতি পণ্য ওঠানামার কাজ চলছে। স্বাভাবিক রয়েছে দাপ্তরিক কাজকর্মও। তবে মংলা বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সড়ক পথে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েনে বন্দর ব্যবহারকারীরা। হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান লখপুর গ্র“প অব ইন্ডাস্ট্রিজের উপ-মহা-ব্যবস্থাপক মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, মংলা বন্দরে সড়ক পথে কন্টেইনার পাঠানোটাই এখন অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে তাদের হিমায়িত চিংড়ি বোঝাই একটি কন্টেইনার গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। ভাঙচুরের ভয়ে কন্টেইনার গাড়ি মংলা বন্দরে পাঠাতে সম্ভব হচ্ছে না। সাউদার্ণ সী ফুডসের নির্বাহী পরিচালক মোঃ সফিউল্লাহ খান বলেন, বর্তমান সাড়ে ৮ কোটি টাকার ৪ কন্টেইনার হিমায়িত চিংড়ি স্টোরে মজুদ পড়ে আছে। এই চিংড়িগুলো গত ৮ জানুয়ারি শিপমেন্ট করার কথা ছিলো। কিন্তু রাস্তায় ভাঙচুরের ভয়ে কন্টেইনারবাহী গাড়ি বের করা সম্ভব হয়নি। এতে প্রতিদিন লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। এদিকে খুলনা অঞ্চল বিপুল পরিমাণ কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য মংলা, চট্টগ্রাম নৌ-বন্দর ও বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে রফতানি করা হয়। কিন্তু টানা অবরোধে বন্দর পর্যন্ত পাট পৌঁছানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ রফতানিযোগ্য পাট গুদামে পড়ে আছে। এতে ব্যাংক সুদের পরিমাণ বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাট ব্যবসায়ীরা। মংলা বন্দর ব্যবহারকারী শিপিং ব্যবসায়ী শেখ বদিউজ্জামান টিটু বলেন, রফতানিযোগ্য বিপুল পরিমাণ পাট গুদামে মজুদ আছে। কিন্তু ট্রাকে করে মংলা বন্দরে পাঠানোর সাহস হচ্ছে না। ব্যাংকগুলো ঝুঁকি নিয়ে বন্দরে পাট পাঠাতে নিষেধ করছে। এতো কিছুর মধ্যেও কয়েকজন রফতানিকারক সুযোগ বুঝে কিছু পাট বন্দরে পাঠাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স নুরু এ্যান্ডসন্স এর মালিক এইচ এম দুলাল জানান, সড়ক পথে পণ্য পরিবহনে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। জ্বালাও পোড়াও এবং হামলার ভয়ে ব্যবসায়ীরা এখন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। মংলা বন্দর সূত্র জানায়, চলতি মাসের ১৯ তারিখে এ যাবতকালে মংলা বন্দরে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক জাহাজ এসেছে। এ দিনে বিভিন্ন পণ্যবাহী ৬টি জাহান বন্দরে নোঙ্গর করেছে। বর্তমানে বন্দরে ইউরিয়া সার, ক্লিংকার, এলপিজি গ্যাস, ম্যাশিনারিজসহ মোট ৮টি জাহাজ অবস্থান করছে। স্বাভাবিকভাবে চলছে পণ্য ওঠানামার কাজ। মূলত মংলা বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের বেশির ভাগই নৌপথে পরিবহন হওয়াতে বন্দরে অবরোধ হরতালের তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে বন্দর জেটিতে বর্তমানে ২ হাজার ৫শ’ কন্টেইনার রয়েছে। এর মধ্যে আমদানি পণ্যের ১২শ’ কন্টেইনার রয়েছে স্থানীয়ভাবে ডেলিভারির অপেক্ষায়। আর ১৩শ’ কন্টেইনার ভর্তি পণ্য রয়েছে বাণিজ্যিক জাহাজে বোঝাই ও বিদেশে রফতানির অপেক্ষায়। সূত্রটি আরও জানায়, চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারনে এ বন্দরের আমদানি ও রফতানিযোগ্য পণ্যবাহী কন্টেইনার শতকরা ১০ ভাগ কমে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মোস্তফা কামাল ‘সময়ের খবরকে জানান, খুলনা, যশোর ও ঢাকা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা মূলতঃ এ বন্দর ব্যবহার করে থাকেন। তাদের রফতানিযোগ্য পণ্যের মধ্যে বন্দরে নিয়মিত পাট,পাটজাত দ্রব্য ও মাছ কন্টেইনার আসে। কিন্তু বর্তমানে সড়ক পথে এ সব পন্য পরিবহনে তারা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, বন্দরের কার্যক্রম ২৪ ঘন্টা চললেও ট্রান্সপোর্ট সমস্যার মধ্যে রয়েছেন বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। বেশি ভাড়া দিয়ে ক্যাভার্ড ভ্যান পাওয়া যাচ্ছেনা। আর দু’একটি পাওয়া গেলেও পরিবহন ভাড়াও দিতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। ফলে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আটকা পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা। এতে এক দিকে যেমন কোটি কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে আমদানি-রফতানিকারক। তেমনি লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top