সকল মেনু

রংপুরের মিঠাপুকুরে আরো ৮ শিবিরকর্মী গ্রেফতার, এলাকা ছেড়ে চরাঞ্চলে আত্নগোপনে শিবিরকর্মীরা

রংপুরইকবাল হোসেন, রংপুর প্রতিনিধ : রংপুরের মিঠাপুকুরে বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে শিশু নারীসহ ৬জনকে পুড়িয়ে মারার মামলায় আরো ৮ জামায়াত-শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হলো জামায়াতের নুরুজ্জামান, শহিদুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান, এমদুদুল হক, আনছার আলী, শিবিরকর্মী বিপুল মিয়া, মনারুল মিয়া ও মমিন মিয়া।
মিঠাপুকুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে মিঠাপুকুরের প্রত্যন্ত এলাকা ফতেপুর ও নিশ্চিতপুর এলাকায় ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার পর থেকেই এরা আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি জানান, এনিয়ে এ মামলায় মোট ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হলো। এছাড়া মামলায় অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তিনি আরো জানান, এই নাশকতার পরিকল্পনাকারিদেরও গ্রেফতারে মাঠে রয়েছে গোয়েন্দা সদস্য এবং পুলিশ।

১৩ জানুয়ারী ঐ ঘটনার পর থেকে রংপুরে শিবির নিয়ন্ত্রিত এলাকা ও ছাত্রাবাসগুলো ফাঁকা পড়ে রয়েছে। জামায়াত ও শিবির ক্যাডাররা গ্রেফতার আতংকে বাড়িঘর ও ছাত্রাবাস ছেড়ে আস্তানা গেড়েছে চর গ্রামগুলোতে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। এছাড়া জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পর বহিরাগত ও শিবির ক্যাডারদের গ্রেফতারে বেসরকারি ছাত্রাবাসগুলোতে অভিযান চালালো অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
২০ দলীয় জোট অবরোধ আর হরতালের নামে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে মিঠাপুকুরের বাতাসন এলাকায় কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে ঢাকাগামি খলিল এক্সক্লুসিভ নামে একটি যাত্রীবাহি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীরা। এতে ঘটনাস্থলেই শিশু নারীসহ ৪ জন পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। অগ্নিদগ্ধ হয় আরো ২০ জন। এদের মধ্যে চিকিৎসাধিন অবস্থায় আরো ২জন মারা যায়। ওই ঘটনার পর পুলিশের এসআই আবদুর রাজ্জাক বাদি হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অঞ্জাত আরো ৫০ জনকে আসামী করে মামলা করেন। ওই ঘটনার পর থেকেই পুলিশ জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত মিঠাপুকুর এবং রংপুর কারমাইকেল কলেজ ও এরআশেপাশের ছাত্রাবাস এবং জামায়াত-শিবিরের এলাকার আস্তানাগুলোতে অভিযান শুরু কবে। এরপর থেকেই জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা আত্মগোপনে চলে যায়। নাশকতা ঘটনার পর থেকেই পুলিশ জামায়াত অধ্যুসিত এলাকা ও বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালায় শিবির ক্যাডারদের গ্রেফতারে। এরপর থেকেই শিবির ক্যাডারসহ নেতাকর্মীরা ছাত্রাবাস ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। তারা এখন নগরীর বাইরে গ্রামগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। সেখানে দিনের বেলায় তাদের আনাগোনা না থাকলেও রাতের বেলায় তারা বিচরণ করছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে তামপাট এলাকার মীরগঞ্জ, নব্দিগঞ্জ, বড়দরগা, কাজীটারি, মীরবাগ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা তিস্তা নদীর চর এলাকায় এদের অবস্থান বলে এলাকাবাসি ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে জানা গেছে। ওইসবস্থান থেকেই হরতালের দিনগুলোতে এসে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করে তারা। জামায়াতের নেতাকর্মীরাও এখন বাড়ি ছাড়া। তারাই দুর এবং চর গ্রামগুলোতে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করছেন। এব্যাপারে মহানগর জামায়াতের আমীর মাহবুবুর রহমার বেলালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এছাড়া নাশকতা ঠেকাতে ছাত্রাবাসে বসবাসকারি শিক্ষার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ অভিযান শুরু করে আইন প্রয়োগকারি সংস্থা। দেড় হাজার ছাত্রাবাসের মধ্যে অর্ধেক ছাত্রাবাসের মালিক শিক্ষার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত পুলিশের কাছে জমা দিয়েছে। গত জুনে এ অভিযান শুরু করেছিল পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্বেও তেমন একটা কাজ হয়নি। যেসব ছাত্রাবাসের মালিক তাদের ছাত্রাবাসে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দেয়নি সেসবের অধিকাংশই ইসলামী ছাত্র শিবির নিয়ন্ত্রিত বলে পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছেন।  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের আশপাশসহ শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল¬ায় শিক্ষার্থীদের বসবাসের জন্য দেড় হাজার ছাত্রাবাস রয়েছে। ছাত্রাবাসগুলোতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত দেওয়ার জন্য গত বছর জুন মাসে প্রতিটি ছাত্রাবাস মালিকদের একটি ফরম সরবরাহ করা হয়। ওই ফরমে শিক্ষার্থীর ছবিসহ ঠিকানা ও কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন বিভাগে পড়ছেন তা উলে¬খ থাকবে। সেই সাথে ছাত্রাবাসে নতুন শিক্ষার্থীর আগমন হলে তাও জানা যাবে। এতে করে মেসগুলোতে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের অবস্থান সম্পর্কে মেস কর্তৃপক্ষসহ পুলিশের জানা থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আশেপাশের এলাকায় এবং হরতাল আর অবরোধে তারা যাতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে না পারে সেজন্য পুলিশ এ সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া এ পদ্ধতিতে পুলিশের তালিকা অনুযায়ী প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে পাওয়া কিছুটা সহজ হবে। গতকাল সরেজমিনে ওইসব এলাকায় গিয়ে কথা হয় শিক্ষার্থী ও ছাত্রাবাস মালিকদের সাথে। চকবাজার এলাকার সুমন ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম ও আউয়াল মিয়া জানান, এসব এলাকায় পুলিশী নজরদারি বেড়ে গেছে। তারা অভিযানও চালাচ্ছে যখন তখন। সর্দারপাড়ার রুবি ছাত্রাবাসের মালিক কবিরুল শিক্ষার্থীদের তালিকা দেননি স্বীকার করে বলেন, এই তালিকা দেওয়া হলে ছাত্রাবাসে কেউ থাকবে না। তিনি বলেন, আমার বাড়িতে কারা অবস্থান করছে এটা আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। পার্কের মোড় এলাকার সুমন ছাত্রাবাসের মালিক শাহীনুল ইসলাম জানান, পুলিশী অভিযানে এখন অনেকটাই ফাঁকা পড়ে রয়েছে ছাত্রাবাস। ভয়ে পালিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক(এসআই) শরিফুল ইসলাম জানান, জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। চর এলাকা বা গহীন গ্রামে যেখানেই থাক না কেন তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে। অমাদের লোকজন সবস্থানেই তৎপর রয়েছেন এবং অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।   তিনি আরো জানান, শুধুমাত্র কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালযের চারপাশে রয়েছে এক হাজারেরও অধিক ছাত্রাবাস। আর বাকি পাঁচশ ছাত্রাবাস শহরের অন্যান্য স্থানে। তবে এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারপাশের ছাত্রাবাসগুলোই শিবিরের আস্থানা ছিল। এসব এলাকা হলো, কলেজ পাড়া, দর্শনা মোড়, আশরতপুর, চকবাজার, পার্কের মোড়, মডার্ণ মোড়, কেডিসি রোড, চুুিড়পট্টি, খামার, কলেজ রোড, বনানীপাড়া, আদর্শপাড়া, বালাপাড়া, তাজহাট, বাবুপাড়া, স্টেশন, বাবুখা, কামারপাড়া এলাকা।
এব্যাপারে কোতয়ালি থানার ওসি আবদুল কাদের জিলানী জানান, সন্ত্রাসীরা যেখানেই থাক না কেন তাদের গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা হবে। কোন সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না। সে যে দলেরই হউক না কেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top