সকল মেনু

খুলনায় নিষিদ্ধ গাইড-নোট বইয়ের ছাড়াছড়ি

বইখুলনা প্রতিনিধি : বছরের শুরুতেই খুলনায় বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট-গাইড, সহায়ক ও নকল পাঠ্যবই। নগরীর কেডি ঘোষ রোড, ক্লে রোড ও দৌলতপুর বিএল কলেজ সংলগ্ন বুক মার্কেটসহ বিভিন্ন বইয়ের দোকানে প্রকাশ্যে চলছে নোট গাইড বিক্রি। এছাড়াও দোকান মালিকদের সাথে কমিশন চুক্তিতে শিক্ষকদের পরামর্শে শিক্ষার্থীরা নোটগাইড কিনছে বলে জানা গেছে। ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি নগরীর হেলাতলা মার্কেটে নূর লাইব্রেরীতে সর্বশেষ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ বই উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এরপর আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নোট বই প্রকাশনা নিষিদ্ধ করে ১৯৮০ সালে একটি আইন করা হয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নোট বই ছাপা ও বাজারজাতকরণ বন্ধের উদ্যোগ নেয়। ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর সরকারের অননুমোদিত নিম্নমানের বই, নোট ও গাইড বই বাজারজাত বন্ধ করতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের সাহায্য নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়। এ নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রয় সমিতির তৎকালীন সভাপতি আবু তাহের ২০০৮ সালের ফেব্র“য়ারিতে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। ওই বছরের ১৩ মার্চ ১৯৮০ সালের নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইনের আওতায় গাইড বই বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধের আদেশ বহাল রাখেন। এরপর আপীল বিভাগে আবেদন করলেও ওই আবেদন খারিজ হয়। এই পরিস্থিতিতে নিষিদ্ধ নোট-গাইড, নকল পাঠ্যবই কেনা ও বিক্রি প্রতিরোধে ফের জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ২০১৩ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্দেশনাপত্র সব ডিসির কাছে পাঠানো হয়। এর অনুলিপি জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ওসিদের দেয়া হয়েছিল। সেই পত্রে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের নোট-গাইড, নিম্নমানের বই মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিক্রি ও বিতরণ করার উদ্দেশ্যে মজুদ রাখা অবৈধ বলা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, লেকচার পাবলিকেশন্স, কাজল ব্রাদার্স লিমিটেডের অনুপম সিরিজ, পাঞ্জেরী, পপি গাইড, প্রজাপতি, একের ভেতর সব, আশার আলো, ক্যাপ্টেন, অক্সফোর্ড ইংলিশ, পুথি নিলয়, জুপিটার, কম্পিইটারসহ বিভিন্ন নামের নোট বই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। স্কুলের শিক্ষকদের চাপে অনেকটা বাধ্য হয়ে এসব নোট গাইড কিনছেন অভিভাবকরা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর কেডি ঘোষ রোড, ক্লে রোড ও দৌলতপুর বিএল কলেজ সংলগ্ন বুক মার্কেটসহ প্রায় সব বুক দোকানেই এসব নোট বই মজুদ করে রাখা হয়েছে। নোট গাইড মজুদ রাখতে নেয়া হয়েছে বিশেষ কৌশলের আশ্রয় পাশাপাশি দোকানের ওপরেই পাটাতন করেও সেখানে রাখা হয়েছে নিষিদ্ধ নোট বুক। এছাড়াও আশে পাশের বিভিন্ন হোটেলের রুম গোডাউন হিসাবে ব্যবহার করতে ভাড়া নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা এসে বই চাইলে তবেই গোপনে সেখান থেকে সরবরাহ করা হয়। উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি নূর লাইব্রেরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিক্রয় নিষিদ্ধ গাইড বই জব্দ করেছিল জেলা প্রশাসন। এতে ওই লাইব্রেরীর ম্যানেজার শওকাত আলী মোড়লকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর আর তেমন কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। বাজারে নোট বই বিক্রির ব্যাপারে জানতে সমিতির জেলা সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশ না করে একাধিক দোকান মালিক বলেন, বর্তমান সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা বুঝে উঠতে পারে না কিভাবে প্রশ্ন আসবে। এজন্য তাদের সহায়ক বই প্রয়োজন হয়। তবে ১৯৮০ সালের আইনের ম্যাধমে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে। হয়রানি রোধে আইন প্রত্যাহার ও পুস্তক প্রকাশনা সেক্টরকে সম্মানজনক পেশা হিসাবে স্বীকৃতি দানের দাবি জানান তারা। খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ স্তেফা কামাল বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top