সকল মেনু

পেট্রোল বোমায় পুড়ে একই পরিবারের ২ জনসহ নিহত ৪

 ইকবাল হোসেন, রংপুর: দুর্বৃত্তরা রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহি বাসে পোট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মেরেছে মহিলা শিশুসহ একই পরিবারের ২ জনসহ চারজনকে।এদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। এরা হলো উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণী ইউনিয়নের বিজয়রাম তবকপুর গ্রামের মৃত আনছার আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম(৬৫), তার ছেলে রহিম বাদশা(১২), একই ইউনিয়নের দড়িচর পাচপাড়া গ্রামের আবদুর জব্বারের মেয়ে জেসমিন আক্তার(১২)। জেসমিনও তাদের আত্মীয়। এছাড়া অন্য আরেকজনের নাম জানা যায়নি। অগ্নিদগ্ধ হয়েছে আরো ২২ জন। এদের মধ্যে একই পরিবারের ১১ জন রয়েছে। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা রয়েছে ১৮ এবং সিএমএইচএ চারজন। এদের মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক। তাদের শরীরেরর বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। মঙ্গলবার রাতে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকাগামি  খলিল এক্সক্লুসিভ বাসে  এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার  পরপরই পুলিশ ও দমকল বাহিনী গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় পুলিশ জামায়াত শিবিরের ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা হয়নি। ঘটনার পরপরই বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা রংপৃুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।পুলিশ ও আহত যাত্রী সুত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহি খলিল এক্সক্লুসিভ (ঢাকা মেট্টো ব-০১১-৬৮৬০) পরিবহনটি রাত ৮ টা ১০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বাসটি রাত আনুমানিক পৌণে একটার দিকে রংপুুরের মিঠাপুকুর উপজেলার  বাতাসন দুর্গাপুর এলাকা পৌছলে হঠাত রাস্তার দুদিন থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এর পরপরই বাসটিকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। মুহুর্তের মধ্যে পুরো বাসে আগুন ধরে যায়। বাচাও বাচাও বলে যাত্রীদের চিৎকার চেচামেচিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ ও দমকল বাহিনী এবং এলাকাবাসি গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন  নিয়ন্ত্রনে আনার পর পুলিশ ও দমকল বাহিনী বাসের ভিতর থেকে মা তার শিশুকে বুকে জড়ানো ২জন, আরো এক মহিলা ও এক পুরুষের  পুড়ে যাওয়া কংকাল উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেহ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। লাশগুলো চেনার কোন উপায় নেই। সেগুলো কয়লা হয়ে গেছে। আহত যাত্রীদের মধ্যে রয়েছে ভোগডাঙ্গা উলিপুরের ফজুলল হকের মেয়ে রশিদা বেগম(১৫), নীলফামারীর মহুবারের স্ত্রী শাহিদা বেগম(৩৫), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ফজুলল হকের স্ত্রী মিনারা বেগম(৩০), মনোয়ারা বেগম(৪০), হাসিনা বেগম(৩৫), উলিপুরের শাম্মী আক্তার(২৫), সুন্দগঞ্জের  লিয়াকতের মেয়ে  লাকী বেগম(২৫), ভুরুঙ্গামারির কুদ্দুস মিয়ার ছেলে সোলেমান মিয়া(৫০), উলিপুরের আলমগীর হোসেন(৩৫), উলিপুরের ধনিরাম গ্রামের মনসুর আলীর ছেলে মাহবুব আলী(৩২), উলিপুরের রাশেদ মিয়া(৩০), ময়মনসিংহের সাবানিয়া গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে আমির হোসেন(৩৮), রংপুরের পীরগঞ্জের ফজলুল হকের ছেলে আনোয়ার হোসেন(৩০), কুড়িগ্রামের রাজারহাট এলাকার আবদুল লতিফের ছেলে আনোয়ার হোসেন(৪০), উলিপুরের সোলেমান মিয়ার ছেলে আবু বক্কর(৪৫), রংপুরের মুন্সিপাড়া এলাকার সুমর মিয়ার ছেলে সালমান মিয়া(১৮)সহ ২২ জন। এছাড়া রংপুর সিএমএইচ-এ ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা সেনানিবাসে কর্মরত নুর আলমের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম(৩০), তার মেয়ে নুসরাত(১৩) ও নাদিয়া(৭)। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে  ৬০ ভাগ পুড়ে গেছে আনজুমান আরা বেগমের,  ৪০ ভাগ মিনারা বেগমের এবং ৯০ ভাগ  কছিমন নেছার বলে জানিয়েছেন বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. এমডি মারুফ হোসেন।

ওই বাসে থাকা ভাগ্যক্রমে বেচে যাওয়া উলিপুরের আফছানা বেগম জানান, তিনি গাড়ীপুরের ভাওয়াল সরকারি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করেন। তিনি তার ভাই আল-আমিনসহ পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে খলিল পরিবহনে ঢাকা যাচ্ছিলেন। তিনি জানান বাসটি তেমন একটা জোরে যাচ্ছিল না। আস্তে আস্তে যাচ্ছিল। মিঠাপুকুর পার হওয়ার পর আমি অনেকটা ঘুমিয়ে পড়ি। বাতাসন এলাকায় ইট পাটকেল নিক্ষেপের শব্দে ঘুম থেকে জেগে দেখি আগুন জ্বলছে বাসটিতে। দ্রুত ভাইকে নিয়ে জানালা দিয়েই। লাফিয়ে পড়ি নিচে। এরপর আর কিছু বলতে পারি না। তারা হাতপায়ে আঘাত পেযেছে  এবং সামান্য পুড়ে গেছে আগুনে।

আলমগীর হোসেন হোসেন নামে আগ্নিদগ্ধ যাত্রী জানান, আল্লাহ আমাদের বাহিয়েছেন। মুখশ পড়া লোকজন চারদিক থেকে বাসে ঢিল ছুড়ছিল। এরপর দেখি বাসের চারদিক থেকেই আগুন। দিগবিদিক না দেখে আগুনের মধ্যদিয়ে ঝাপ দিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ি। এরপর সকালে যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখি হাসপাতালে। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির এ ঘটনার ঘটিয়েছে।
বাতাসন এলাকার আউয়াল মিয়া জানান  যাত্রীদের চিৎকার শুনে আরা বের হয়ে  এসে দেখি বাসটি জ্বলছে। এরপর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। তিনি বলেন হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক এ ঘটনা  না দেখলে বলা যাবে না।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন, এরা হলো উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণী ইউনিয়নের বিজয়রাম তবকপুর গ্রামের মৃত আনছার আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম(৬৫), তার ছেলে ৫ম শ্রেণী পড়–য়া রহিম বাদশা(১২), একই ইউনিয়নের দড়িচর পাচপাড়া গ্রামের আবদুর জব্বারের মেয়ে জেসমিন আক্তার(১২)। জেসমিনের বাবা ঢাকায় রিকসা চালান। বাবার কাছে যাওয়ার জন্যই বাসে রওয়ানা দিয়েছিরেন তারা। তারা একে অপরের আত্মীয় বলে জানা গেছে। এছাড়া অন্য আরেকজনের নাম জানা যায়নি।
খলিল এক্সক্লুসিভ বাসের সুপারভাইজার শফি মিয়া জানান, ৩২ জন যাত্রী নিয়ে আমরা উলিপুর থেকে রওয়ানা দেই। এরপর বাসটি যাত্রী হয় ৫০ জনের মত। মিঠাপুকুর পার হওয়ার পর বাতাসন এলাকায় পৌছলে রাস্তার পাশে বাশ ঝাড়ের ভিতর থেকে বাসের উপর ইটপাটকেল মারতে শুরু করেন। এরপর পেট্রোল বোমা মারার পরপরই দেখি বাসটিতে আগুন জ্বলছে। পরবর্তীতে জঅবন রক্ষার্থে পালিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ি। তিনি বলেন, বাসটি মুহুর্তের মধ্যেই পুড়ে ছাই  হয়ে যায়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ সাড়াশি অভিযান শুরু করে। অভিযানে জামায়াত-শিবিরের শাহিনুর রহমান(৩২), মোকলেছার রহমান(৪৭), মোস্তাফিজার রহমান(৪৫), মাহবুব আলম(২২), আবদুর রাজ্জাক(৪৬), মিল্লাত হোসেন(১৮), মোবারক হোসেন(২০) এবং সাদিকুল ইসলাম(২৫) কে গ্রেফতার  করা হয়েছে বলে জানান মিঠাপুকুর থানার ওসি রবিউল ইসলাম।
লাশের কংকালগুলো  নিয়ে আসা মিঠাপুকুর থানার এসআই ওয়ালিউর রহমান জানান, গাছ পোগালো যে অঞ্জার হয় এবং পুড়ে অবশিষ্ট অংশ যেভাবে থাকে এগুলো ঠিক দেমননি হয়েছে। চেনার কোন উপায় নেই।
ঘটনার পরপরই বিভাগীয় কমিশনার মুহম্মদ দিলোয়ার বখত, জেলা প্রশাসক ফরিদ আহাম্মদ, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে ছুটে যান। তারা রোগিদের সাথে কথা বলেন এবং সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গের দায়িত্বে থাকা ডা. রবি শংকর জানান, ময়না তদন্তের পর লাশগুলো পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া ডিএনএ টেস্টের জন্য সেমপল রাখা হবে। তিনি বলেন, যেভাবে পুড়িযে মারা হয়েছে মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে তা বিশ্বাস করা যায় না।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ডা. আবদুর কাদের খান জানান, ঘটনার পরপরই আমরা রোগিদের চিকিৎসার যাতে কোন ধরনের গাফলতি না হয় সে জন্য আমি অন্যান্য ডাক্তারদের নিয়ে নজরদারি করছি। তবে তিনি জানান, তিনজনের অবস্থা ভাল নয়। এব্যাপারে ঢাকার বার্ন বিশেষঞ্জদের সাথেও কথা হযেছে।
পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক জানান, দুস্কৃতৃতিকারিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে । এরই মধ্যে আরা বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের জিঞ্জাসাবাদ তরা হচ্ছে। তবে তিনি বলেন এ ঘটনার সাথে জামায়াত-শিবির জগিত কি না তা এ মুহুর্তে  বলা যাচ্ছে না। তদন্ত চলছে এরপরই জানা যাবে কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত। তিনি বলেন এখনও মামলা হয়নি তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top