সকল মেনু

একটি ভালো কাজের জন্য আমি মুখিয়ে থাকি – কুসুম

Kusum 2নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘কুসুম নতুন প্রজন্মের একজন ভালো অভিনেত্রী। সে খুব মনোযোগ দিয়ে অভিনয় করে। ওর কাজ আমাকে আনন্দ দেয়। আমার পরিচালনায় কাজ করতে গিয়ে ওকে সব সময়ই দেখতাম ভালো কিছু করতে চায়। এই ভালো কিছু করার চেষ্টা—সেটা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে ওকেও হয়তো ওর পরের প্রজন্ম অভিনেত্রী হিসেবে আলাদা একটি সম্মানের জায়গায় দাঁড় করাবে। আমি ওর সাফল্য কামনা করি’—কুসুম শিকদারকে নিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বললেন অভিনেত্রী পরিচালক ঈশিতা। এটা কুসুমের জন্য একটা পজিটিভ দিক যে, তিনি তার কাজ ও আচার-আচরণ দিয়ে নিজের পূর্বসূরি কাউকে মুগ্ধ করতে পেরেছেন। নিজের কাজের ধরন নিয়ে কুসুম বললেন, ‘আমি ভালো কাজের কাঙাল। একটি ভালো কাজের জন্য আমি মুখিয়ে থাকি। আমি বিশ্বাস করি ভালো কাজ কম করেও দর্শকদের মধ্যে নিজেকে বড় করে আলোচনায় রাখা যায়। আমার কাছে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো নাটকে কাজের প্রস্তাব আসে। আমি এর মধ্য থেকে শুধু ভালো ভালো গল্প ও চরিত্রগুলোকে বেছে নেই। একটা সময় হয়তো গতানুগতিক কাজ বেশি করতে হয়েছে। যেহেতু আমি মঞ্চ থেকে আসিনি, তাই অভিনয় শেখার জন্য সে সময় কাজগুলো আমাকে করতে হয়েছে। কিন্তু সেই সময়টা এখন আর নেই। তাই আমি এখন আগের চেয়ে বেছে বেছে কাজ করছি। অভিনয় নিয়ে আমার আগের ভাবনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন কাজ করছি নিজের আনন্দের জন্য। আর আমার দর্শকদের কথা মাথায় রেখেও আমাকে কাজ করতে হয়। তারা আমাকে নতুন নতুন চরিত্রে দেখতে চায়। কোনো জায়গায় শপিং বা আউটডোর শুটিংয়ে গেলে যখন তাদের সঙ্গে দেখা হয়, তখন তারা আমার কাজ নিয়ে ইতি ও নেতিবাচক অনেক কথা বলেন। আমি তা খুবই মনোযোগ দিয়ে গ্রহণ করি। আসলে আমার দর্শকরাই আমার কাজের অনুপ্রেরণা।’
কুসুম শিকদার এরই মধ্যে ভালো কিছু নাটকে অভিনয় করে প্রমাণ করেছেন যে, তিনি অভিনয় অন্তঃপ্রাণ। ঘাটের কথা, নৌকাডুবি, মেঘবালকের গল্প, অন্ধকারের ফুল, জলপরী ইত্যাদি নাটকগুলোতে আমরা তাকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে রূপদান করতে দেখেছি। এসব চরিত্রে নিজেকে তুলে ধরার গল্প নিয়ে কুসুম শিকদার বললেন, ‘এই নাটকগুলোতে আমি আলাদা আলাদা চরিত্রে অভিনয় করেছি। এর মধ্যে সাহিত্যনির্ভর কাজগুলোতে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ এই চরিত্রগুলো বহুল পঠিত। গল্প বা উপন্যাস পড়তে গিয়ে একেকজন পাঠক একেকভাবে নিজের কল্পনায় চরিত্রের ছবি আঁকেন নিজের মতো করে। আর তাই এই ধারার কাজ করতে গেলে আমাকে অনেক সচেতন থাকতে হয়। সময়, পোশাক ইত্যাদিসহ সেই সময়কার মানুষের যাপিত জীবন চলাফেলা, আচার-আচরণ সবকিছু নিজের দখলে নিয়ে কাজ করতে হয়। তাছাড়া কালজয়ী এই চরিত্রে আমার সিনিয়রদের অনেকেই কাজ করেছেন, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে নৌকাডুবি নিয়ে। ফলে দর্শকরা আমার অভিনয়ের সঙ্গে অন্যের অভিনয়েরও একটা তুলনা করেন। তারপরও আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করেই সফল হয়েছি। আমি উপরোক্ত নাটকে কাজ করে দর্শকদের মাঝ থেকে প্রচুর সাড়া পেয়েছি। এই কাজগুলো আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে ও তৃপ্ত করেছে।’
Kusum 1অভিনেত্রী হিসেবে কুসুমের আজকে খানিকটা নামডাক হয়েছে। অথচ তিনি অভিনেত্রী হবেন এমন স্বপ্ন আগে কখনও দেখেননি। ছোটবেলা থেকেই ছিল নাচ ও গানের সঙ্গে তার দারুণ সখ্য। চার বছর বয়সেই তার মা কুসুমকে নাচ ও গানের ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। স্মৃতির পাতা উল্টাতে উল্টাতে তিনি বললেন, ‘আমি গান শিখতাম নজরুল একাডেমিতে। আর নাচ ধানমন্ডির সঙ্গীত ভবনে। এক সময় আমার মা বুঝতে পারলেন আমি নাচের চেয়ে গানের দিকেই বেশি মনোযোগী। এরপর তিনি আমার নাচ শেখা বন্ধ করে দিলেন। আমি একটানা ১৭/১৮ বছর গান শিখেছি। ক্লাসিক্যাল শিখেছি। পিয়ানোও বাজাতে পারি আমি। হঠাত্ এক সময় আমার মাথায় অ্যালবামে গান করার ভূত চাপে।’ প্রীতমের সঙ্গীত পরিচালনায় একটি মিক্সড অ্যালবামে গান করার মধ্য দিয়ে কুসুমের গায়িকা জীবন শুরু হয়। তারপর তিনি ইথুন বাবুর মিক্সড অ্যালবাম ‘অদলবদল’-এ গান করেন। অবশেষে বাজারে আসে ইথুন বাবুর সুরেই কুসুমের প্রথম সলো অ্যালবাম ‘তুমি আজ কত দূরে’। মূলত গায়িকা হিসেবে একটি পাক্ষিক পত্রিকায় সাক্ষাত্কার দিতে গিয়েই ‘লাক্স আনন্দধারা মিস ফটোজেনিক বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় কুসুম কাকতালীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। কুসুম বললেন, ‘লাক্স সুন্দরী নির্বাচিত হওয়ার চেয়ে আমি বেশি আনন্দ পেয়েছিলাম যখন আমি লাক্সের বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করি। কারণ সে সময় লাক্সের বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করতেন বড় বড় তারকারা। আমি একেবারে নতুন হিসেবেই এই সুযোগ পেয়েছিলাম।’ লাক্স থেকে বের হওয়ার পর প্রথম দিকে অভিনয়কে সিরিয়াসলি না নেয়া কুসুম এখন ছোট পর্দার পাশাপাশি বড় পর্দায় কাজ করেও আলোচিত। খালিদ মাহমুদ মিঠুর ‘গহীনে শব্দ’ চলচ্চিত্রে কাজের পর তিনি স্বপন আহমেদ পরিচালিত ‘লালটিপ’-এ কাজ করেও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। এই দুই চলচ্চিত্রে কাজ করা নিয়ে তিনি বললেন, ‘দর্শকদের অনেকেই আমার প্রথম চলচ্চিত্র গহীনে শব্দ নিয়ে আমাকে বেশ ভালো সাড়া দিয়েছেন। যেহেতু কাজটি আমার প্রথম ছিল, তাই আমি সাফল্য নিয়ে একটু টেনশনেই ছিলাম। তবে প্রিমিয়ার শোতে আমার কাজ নিয়ে দর্শকরা যখন আমাকে ইতিবাচক অনেক কমেন্টস করেন—সে সময় আমার মনে হয়েছিল কাজটি করে আমি ভুল করিনি। আমার বিশ্বাস ছিল মিঠু ভাইয়ের কাজ দর্শকরা গ্রহণ না করে পারবেন না। ছবিতে আমি একজন ভিক্ষুকের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। গল্পটি অনেক টাচি ছিল। তাই কাজ করেও মজা পেয়েছিলাম। ছবিটি রিলিজের পর আমি অনেকের কাছ থেকেই প্রশংসা পেয়েছি। আসলে ভালো ছবিতে কাজের বিষয়ে কখনই আমার কোনো দ্বিমত ছিল না। আমি পরিচ্ছন্ন চলচ্চিত্রে কাজ করতে বরাবরই আগ্রহী ছিলাম। আর লালটিপ ছিল গহীনে শব্দ থেকে একটু আলাদা প্যাটার্নের ছবি। এখানে কমার্শিয়াল অনেক উপাদান ছিল। ছবিটি ছিল বড় বাজেটের। দুটি ছবিতেই আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ইমন। লালটিপের জন্যও আমি দর্শকদের মধ্য থেকে অনেক কমপ্লিমেন্ট পেয়েছি।’
লাক্স তারকা হিসেবে বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজের মাধ্যমেই ছোট পর্দায় বিচরণ শুরু হয়েছিল কুসুম শিকদারের। এই অঙ্গনে কাজ করেও তিনি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তবে এখন অভিনয়ের কারণে এই মাধ্যমে তার উপস্থিতি চোখেই পড়ে না। এর কারণ উল্লেখ করে কুসুম বললেন, ‘আমি আসলে নতুন কিছু খুঁজি। আর এ কারণে এ মাধ্যমে আমার খুবই কম কাজ করা হয়। গতানুগতিক কাজ আমার একদমই পছন্দ নয়। মাঝে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু কনসেপ্টটা আমার ভালো লাগেনি বলে কাজটি করা হয়ে ওঠেনি।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top