সকল মেনু

১২ কবির শীতের পঙ্‌ক্তি

আমি ছন্দের রাজা
আল মাহমুদ

5

কবিতার ধ্বনি তুলি আমি অকপটে
আশায় ভাষায় দুর্ঘটনাও ঘটে
মিলে ও মিছিলে আমি ছন্দের রাজা
কে বাজাবে ঢোল; আর শহরত বাজা।

আমি তো চারণ-বারণ মানিনে কারো
নিজের ছন্দে নিজের গন্ধে আরো-
বিমোহিত হয়ে বেরিয়ে পড়েছি মাঠে
কার হাত ধরি(!) রাত নেমে আসে ঘাটে।

রাত শুধু নয় হাত চাই একখানি
ঠাণ্ডা শীতল কাঁপছে শীতে না ভয়ে
আমি বেরিয়েছি শীর্ষ দুর্গ জয়ে
এইতো আমার নিশান সাগরতল
এইতো আমার চোখের অশ্রুজল
মুক্তার মতো ঝরে যায় পথে পথে
ঠাঁই দিবে নাকি তোমার বিজয় রথে।

স্বপ্ন ছুঁয়ে হাঁটা
আল হাফিজ

পাতা ঝরার ঝিম কুয়াশায় ঝিমায় রাখাল বাঁশি
রসের পিঠায় সরস তবু জোছনা মুখের হাসি।
সকালবেলায় হালকা রোদের প্রেমের স্মৃতি পোহাই
ঝুম শীতে আজ কাছে এসো দোহাই তোমার দোহাই।

নরম রোদের পরম সোহাগ ভাপাপিঠার মতো
কিংবা তুমি মিষ্টি পায়েস প্রণয় অবিরত।
ঠোঁটের ভেতর ঠোঁট ডুবিয়ে যেনো পাখির ছানা
খুঁটে খুঁটে নেবো দু’জন এই জীবনের দানা।

নকশি কাঁথার চেয়ে অধিক মোহন আদর দিতে
কাশ্মিরী শাল-কার্ডিগ্যানের মিলন হবে শীতে।
মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে তাই আরো কাছে এসো
বুকের ভেতর বুক জমিয়ে ফ্রিজ হয়ে বসো…

রঙিন মনের ঘুড়ির মতো গ্রহণ লাগা চাঁদে
প্রথম চুমো যেমন ছিল গোপন বাড়ির ছাদে।
পাটিসাপটা পিঠার ভাঁজে উষ্ণ পাশাপাশি-
মাফলারে মন জমিয়ে নিলে নিগূঢ় ঠোঁটের হাসি।

আমি তোমার লেপ যেনো সেই, তুমি আমার তোশক
সংসারি ঢেউ দেখে পালাক দুষ্টু গ্রহের শোষক।
পালাক ভুলের যাবতীয় সর্বনাশা কাঁটা
এই শীতে ফের নতুন জীবন স্বপ্ন ছুঁয়ে হাঁটা।

ঠিকানা
মাশুক শাহী

গ্রামে যাই, ঘাসফুল খাই
মেঠোপথে হাঁটি, পা ছুঁয়ে দেয় মাটি
সরষে ক্ষেতের মায়া, হৃদয়ে গভীর ছায়া
চাঁদের আলোয়, থাকি বেশ ভালই
বটবৃক্ষের তলে, নদী বয়ে চলে
বারোয়ারী মেলা, জীবনের খেলা
আকাশে-বাতাসে কথা, মানব যেথায় যথা
বকুলের তলায়, স্মৃতিগুচ্ছ পড়ে রয়
পানের পাতায়, শিশির লাফায়
চুলার ধোঁয়ায়, চোখ খাবি খায়
খেজুরগাছে ঠিলে, পাখি মেরেছি ঢিলে
সন্ধ্যার মায়ায়, মন ঘরে যায়।

মায়ের সাথে শীতস্মৃতি
রানা হামিদ

শীতের খুব সকালে মায়ের আঙ্গুল ধরে
হাঁটছি ধানের আইলে নানাবাড়ির পথে
শিশিরে ভিজে গেছে পা, মায়ের সূতিকাপড়;
মাইল কয়েক হাঁটতে হাঁটতে ঘামে ভেজা মায়ের
বিচলিত মুখ দেখেছিলাম ত্রিশ বছর আগে।
এখন শীত আমাকে মনে করিয়ে দেয় মায়ের সেই মুখ।

খেজুরের রস পাটকাঠিতে খাওয়ার লোভে
ফজরের আজানেই ঘুম ভাঙাতো।
গাছিদের ব্যস্ততায় ঘুম ভাঙা খেজুরের গাছ
কী বিস্ময়েই না তাকিয়ে থাকত। গৃহস্থ বউদের
গতর হতে বেরিয়ে আসত গুড়ের ঘ্রাণ। এখন শীত
আমাকে মনে করিয়ে দেয় খেজুরের রস, সেই সব গুড়ের ঘ্রাণ।

শীত আমাকে মনে করিয়ে দেয় গুল্মলতার মতো
জড়িয়ে থাকা স্মৃতিকথা।
শহরের নির্বাসিত জীবনে শীতটুকুই শুধু শেকড়ে নাড়া দিয়ে যায়।


শীতল সমীকরণ
অঞ্জন শরীফ

কনকনে থাবায় এখন আর কাবু হয় না পৃথিবী
সয়ে গেছে সব নিদারূণ আচরণ
জেনেছে বারংবার ঠাণ্ডা হাওয়ার শীতল সমীকরণ
খোলেনিতো জট ঘোচেনি কালের ব্যবধান
সারাটা সময় যেন কুয়াশার ঘোমটা পরা বধূ।
ঘোমটার ফাঁকে চেয়ে আছে অসংখ্য হায়েনার চোখ
পরীযায়ী পাখিরা কী সব বার্তা নিয়ে আসে
বোঝা যায় না কিছুই
বুঝতে গেলে নিজেই শীতল হয়ে যায় পৃথিবী।

শীতে ভেজা বিটপী মন
সৈয়দ আহসান কবীর

অবশেষে শুকায় ঘাম, শীতের ছোঁয়ায়
ধুয়ে যায় হৃদয়ের বাষ্পীয় ইঞ্জিন।
অক্সিজেনের বহতায় পিস্টন-চাপে
টিক্‌টিক্ শব্দ তোলে মনের কার্বলেটর।

ধোঁয়াশায় মরে যাওয়া মলিন পাতায়
ভরে থাকে কুয়াশায় লাউয়ের মাচা,
রসেতে ভেজে না আর যুবতী খেজুর।

পিপীলিকার খোঁজ নেই রসের ভাড়ে
ফরমালিনে গুঁড়িপোকা পচে-গলে শেষ
ফণা তোলা কালনাগ শান্ত এখন।

কমলা-সাদায় সাজা শিউলীর ডাল
নুয়ে আছে মাটি ছুঁয়ে, কাঁচা জলপাই
শুকায় গাছের ডালে, শখের বরইও।

অন্তর কুরে খায় শীত-পিপীলিকা
টিক্‌টিক্ বয়ে চলা কার্বলেটর
শরীরে ঘাম ছাড়ে যখন-তখন।

কংক্রিটে ফালি হওয়া কাব্যিক মন
ছুঁয়ে দেখে না আর শিশির-সকাল
শরীরে মাখে না রোদ, সোনালি বিকাল।

শীত আসে শীত যায়, শীত ভেজা পথে
আরও চলে যায় কুয়াশা-শ্রাবণ
অবহেলায় পড়ে থাকে ভেজা বিটপী
আরও থাকে স্মৃতিপট, মন-হাহাকার।

আপেল ও চাঁদ
ফাহাদ চৌধুরী

আপেলের কাঁচাঘুমের প্রলম্বিত সীবন সিঁধে মধ্যযামের সুচেতনা
নীল-নির্জনতায় চন্দ্রবালিকার নাকে রূপালী ফুল, কানে ঝুমকোদুল।

বালুকাবেলার টিকিট কেটে আলো ছড়ায় জলভ্রমণে, ডাঁসা আপেলের
লেবুপাতা ঠোঁটে চন্দ্রবালিকা হাসে, নির্লিপ্ততায় ভাসে উপল-কালো
লেগুনা।

সোমত্ত বালিকা তখন বধূ-চাঁদ, শরৎশুভ্র আরক্তিম আপেল এক,
ঝিঁঝিঁ পোকাদের গল্পকথায় অনায়াস নিঃশ্বাস, ঝলমল আকাশে ওড়ে
চাঁদের ফানুস।

টিকিট চেকিংয়ে আসে ভোর-পাখিরা, সূর্যদীপ্তির আড়ালে চাঁদ
তখন কেবলই হুইসপার, জলের বুকে ডোবে-ভাসে অমৃতার স্রোত।
ব্রহ্মক্ষণে নিষ্পত্র আপেলের শীতঘুম স্বপ্নবাজের কল্পচোখে আনে
গাঢ়তর ঝিম।
একই চাঁদ পৃথিবীর পরে হারায়ে ফিরে বারেবার, পরাজয়ের
অভিকর্ষে নিঃসাড় আপেল খুঁজে পায় সবুজাভ-লাল প্রত্যুত্তর।


শীতের আমেজ
রাবেয়া সুলতানা

এইতো এখন শূন্য বাগান
মনের ঘরে স্মৃতির উজান
হিমেল হাওয়া জড়িয়ে ধরে
কাঁপন ধরায় পথের পরে
ত্বকের মাঝে ভাঁজ যে পড়ে
গাড়ির চাকায় ধূলো ওড়ে
বিষণ্ন দিন উদাস করে
গাছে গাছে শিশির ঝরে
সূর্যটা সে মেঘের ঘরে
শুকনো পাতা, নাড়া পোড়ে
আগুন পোহায় রাত্রি ভোরে
আয়েশ করে শরীর জুড়ে
পিঠা পায়েস ঘরে ঘরে
লেপে মুড়ি ভরদুপুরে
দিনের শেষে সূর্য সরে
রাত্রি আসে বড় করে
শীতের আমেজ থরে থরে
মাঝে মাঝে অধীর করে।

আমি ও ফড়িং
নাফে নজরুল

রোদ ঝলমল সকাল আমার
রোদের নাচানাচি
সকাল মানে আমি উঠোন
রোদের কাছাকাছি
শিমের মাচায় ফড়িং এবং
শিশির জমা ফুল
আমি দেখি শিশির খেলে
ফড়িংও মশগুল-
অভিমানী দক্ষিণ হাওয়ার
শিশির জমা গায়ে
আমি ফড়িং পাশাপাশি
রোদের ডানে বায়ে।

কুয়াশার মিছিল
রাসেল ইশতিয়াক

বনমালী দেয় গালি
খোয়া গেছে কুয়াশা,
খুব ভোরে জেগে দেখে
শীত হল ধোঁয়াশা।

খেজুরের রস গুড়ে
মেতে আছে ছুঁকড়ি,
পৌষ মাসে পিঠে খাবে
দাঁতহারা বুকড়ি।

বনমালী শ্বাস ছাড়ে
পাতা ঝরা শীতকে,
মায়াজালে বেঁধে রাখে
হনুমানী গীতকে।

কিছুদিন আগে শীত
বল তুমি কী ছিলে?
বনমালী বেঁচে আছে
কুয়াশার মিছিলে।

বিস্মৃত প্রেমপ্রজাপতি
মিলন রহমান

কেটে যায় দিন জেগে থাকে স্মৃতি
বাড়ে শুধু ঋণ ধূসর সম্প্রীতি
ধূলো জমে মনে নিভু নিভু প্রেম
নিশিবধূ নে বিস্মৃত মেম।

ঝরে যায় পাতা কুয়াশার চাদর
বাঁশি হালখাতা বেনামী আদর
তবু চাই কিছু, মন ক্ষুধাতুর!
ছুটে চলি পিছু সীমান্ত সুদূর।

স্বপ্নেরা ডানা মেলে কামনার আগুন
প্রেমিকেরা যায় জেলে প্রেম হয় খুন
পৌষের বেলা শেষ, আঁধারের খেলা
উর্বশী ধরে বেশ প্রজাপতি মেলা।

চৌচির পোড়ামন বিষ মধুময়
জমে গেছে দিনক্ষণ শীতল সময়
ঠোঁটে ঠোঁট সন্ধি, তবু ব্যবধান
কামনায় বন্দি প্রেমিকের গান।

সুদীর্ঘ রাত্রি
আশীষ রহমান

রাত বাড়ে প্রেমভারে আবেগী মন
উষ্ণতায় মোড়া কাঁথা আবেগ ছোঁয়ায়
ভেঙে যায় হাতে পরা শখের চুড়ি
তীব্রতায় কাঁপে দেহ দেহতে মিশে।

কুয়াশায় চাঁদ যেন এক থেকে দুই
পূর্ণিমা ঢাকা পড়ে শীত-চাদরে।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top