সকল মেনু

বাড়িভাড়া আতঙ্কে ভাড়াটিয়ারা

15

হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: নতুন বছর দোরগোড়ায়। ইতিমধ্যেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে গেছে ঘরভাড়া বৃদ্ধির নোটিস। আর ঘরভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিবারই বছর শেষে রাজধানী ঢাকার বাড়ির মালিকরা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো ভাড়া বৃদ্ধি করেন। যদিও দেশে ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১’ আছে, কিন্তু এর কোনো কার্যকারিতা নেই। কোনো নিয়ন্ত্রণও নেই। ফলে ভাড়াটিয়াদের ফি বছর অস্বাভাবিক বাড়তি ভাড়ার অঙ্ক গুনতে হচ্ছে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা যায়, কী নিুবিত্তদের বস্তি, কী অভিজাত এলাকার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট- সব জায়গাতেই বাড়িভাড়া বাড়ছে। আর ক্ষেত্রবিশেষে ঘরভাড়া বাড়ছে হাজার থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। যদিও আইন অনুযায়ী ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে এক মাসের অগ্রিম টাকার বেশি নেওয়ার নিয়ম নেই। অথচ এখন বাড়ির মালিকরা ২ থেকে ৩ মাসের অগ্রিম ভাড়া না নিয়ে ঘর ভাড়া দেন না। এমনকি বাড়িভাড়ার সঙ্গে নতুন অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে ‘সার্ভিস চার্জ’-এর নামে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ভাড়াটিয়াদের। ক্ষেত্রবিশেষে এ জন্য তাদের বাড়িভাড়া ও গ্যাস-বিদ্যুতের পাশাপাশি ২ থেকে ৪ হাজার টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর পুরান ঢাকা, কমলাপুর, মগবাজার, মালিবাগ, বাড্ডা, মৌচাক, ইস্কাটন, মহাখালী, কাঁঠালবাগান, কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া, ইন্দিরা রোড, গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই বাড়িভাড়া বৃদ্ধির জন্য ভাড়াটিয়াদের আগাম নোটিস পাঠানো হয়েছে। ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে মালিকরা কোনো নিয়মনীতি মানছেন না।

প্রসঙ্গত, নগরীর বাড়িভাড়া নির্ধারণের জন্য ২০০৭ সালে ১৬ জুলাই ঢাকাকে ১০টি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করা হয়। প্রতিটি অঞ্চলের আবাসিক এলাকাকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে তার ভাড়া নির্ধারণ হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে বাড়িভাড়ার জন্য একটি তালিকা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এমনকি এ বিষয়ে জানেন না অধিকাংশ বাড়িয়ালা ও ভাড়াটিয়া। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবে)-এর তথ্যানুযায়ী, গত ২২ বছরে (১৯৯০-২০১১) সালে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩৫০ শতাংশ।

সরেজমিন ঘুরে আরও জানা যায়, মোহাম্মদপুরের একটি তিন রুমের বাড়ির ভাড়া এখন ২০ হাজার টাকার উপরে। অথচ আজ থেকে তিন বছর আগেও মোহাম্মদপুরে সমআয়তনের একটি বাড়ির ভাড়া ছিল ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ তিন বছরেই ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। ভাড়া বাড়ছে মিরপুরের অন্য এলাকাগুলোতেও। এখানকার কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া ও পল্লবী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন রুমের বাসা ভাড়া আগে ছিল ১৫ হাজার টাকা, নতুন বছরে তা এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১৬ থেকে সাড়ে ১৬ হাজার টাকা। ধানমন্ডি এলাকার ৪০ হাজার টাকার তিন রুমের বাড়িভাড়া হয়েছে ৪৫ হাজার টাকার বেশি।

রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোর মধ্যে গুলশান ও বানানীতে ২ হাজার স্কয়ার ফিটের ওপর সব বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের ভাড়া এক লাখ টাকার উপরে। নিুআয়ের মানুষদের বস্তির ঘরভাড়াও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই বছর আগেও যেখানে বস্তির একটি ঘুপচি ঘরের ভাড়া ছিল ২ হাজার টাকা, আসছে বছর থেকে এ ঘরের জন্য ভাড়াটিয়াদের গুনতে হবে তিন হাজার টাকা। বস্তির বিভিন্ন গার্মেন্ট শ্রমিক জানান, বছরে দুই-তিনবার তাদের ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে ঘরভাড়া বৃদ্ধি করা হয়।

এদিকে নগরীর বেশ কয়েকজন ভাড়াটিয়া এ প্রতিবেদকের কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবারই বছর শেষে তাদের ঘরভাড়া বৃদ্ধির আতঙ্কে থাকতে হয়। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা। তারা আরও বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির বিল আমরা নিজেরাই পরিশোধ করি। তাহলে আলাদা করে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির যৌক্তিকতা কী! আমরা যারা চাকরিজীবী তাদের বেতন তো প্রতি বছর বাড়ছে না। তাহলে বাড়তি ভাড়ার টাকা জোগাতে গেলে পরিবারের ব্যয়ভার চালাতে হিমশিম খেতে হবে। ভাড়াটিয়ারা জানান, সরকার বাড়ির মালিকদের সুবিধা দেখলেও ভাড়াটিয়াদের কথা ভাবেন না।

এ দুর্মূল্যের বাজারে তাদের দেখার কেউ নেই। জানা গেছে, বাড়ির মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা রোধে চলতি বছর ২৫ হাজার টাকার বেশি ভাড়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকে শোধ করার নিয়ম করা হয়েছিল। কিন্তু এ বিধিটি কার্যকরের এক মাস হওয়ার আগেই রাজস্ব বোর্ড তার নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ জন্য সংশোধনী দেয় যে, ভাড়ার টাকা ব্যাংকে জমা না দিলেও চলবে। সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে জানানো হয় বাড়িওয়ালাদের চাপে বিধিটি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থপতি মোবাশ্বের হাসান প্রতিবেদককে বলেন, বাড়িভাড়া সংক্রান্ত আইনটি যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিষয়টির নজরদারি ও তদারকির জন্য একটি কার্যকর কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির সংশ্লিষ্টদের আইন ভঙ্গকারীদের স্বল্প সময়ের মধ্যে শাস্তি কার্যকর করার জন্য বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সরকারি সংস্থার মধ্যে খোদ সিটি করপোরেশনের লোকজনই নিজেদের বিভিন্ন অফিস ও দোকান ভাড়া দেওয়ার আগে ‘সালামি’ বা অগ্রিম টাকা নিচ্ছেন। অথচ আইনে ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম টাকা গ্রহণের নিয়ম নেই। ফলে সরকারি লোকদেরও নিজেদের ভুল শুধরে নেওয়া প্রয়োজন। প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লক্ষ্য করা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিকদের মধ্যে ঘরভাড়া নেওয়ার সময় কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় না। এমনকি বাড়িমালিকরা ভাড়া আদায়ের সময় ভাড়াটিয়াদের রশিদ দেন না।

এরই সুযোগে নিয়ম ছাড়াই বছরে একাধিকবারও ভাড়া বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার অধিক হার বৃদ্ধি করা হলে সেক্ষেত্রে অধিক ভাড়া গ্রহণ বে আইনি হবে। মূলত একটি এলাকায় প্রচলিত উপযুক্ত ভাড়াই সে এলাকার মানসম্মত ভাড়া। বাড়িভাড়া নির্ধারণ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার বাড়িভাড়া নির্ধারণে সিটি করপোরেশনকে ক্ষমতা দেয়নি। ডিসিসি কর্তৃপক্ষ শুধু হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের জন্য বাড়িভাড়া নির্ধারণে সম্ভাব্য একটি মূল্য তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ হচ্ছে কিনা- তা মনিটর করার দায়িত্ব আমাদের নয়।

###নূরে আলম জীবন### 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top