জয়পুরহাট প্রতিনিধি,হটনিউজ২৪বিডি.কম: পাঁচবিবিতে তেলবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পেছনের চলন্ত কয়েকটি বগির ধাক্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত ২৫ জনের মধ্যে অধিকাংশের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে হাসপাতল সূত্র। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খোরশেদ আলমকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহত পাঁচ জনের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- জেলার সদর উপজেলার পুরানাপৈল এলাকার সাদেকুল, খঞ্জনপুর এলাকার আজাহার, দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি এলাকার হৃদয় ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মানিকের ছেলে জুয়েল (১৪)।

তাদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই ১জন, জেলা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জন ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে আরও ১ জন মারা যায়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার শিমুলতলী শহীদ রেলগেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে আশঙ্কজনক অবস্থায় ৪ জনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে একজনের মৃত্যু হয়।

আহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন- সাদেক, রবিউল, আব্দুল মজিদ, সেকেন্দার, হৃদয়, আজাহার শেখ, ইমরান, রাজিয়া, বাবু, বাদল, সোহেল, বাচ্চু, সাদেকুল, খালেক, আবুজার শেখ। বাকিদের নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি। আহতদের অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কাজন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এর আগে সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট ও পুলিশ নিহত-আহতদের উদ্ধার করে জেলা আধুনিক হাসপাতালে নেয়।

সূত্র জানায়, বিকেল ৫টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা পার্বতীপুরগামী তেলবাহী ট্রেন জয়পুরহাট রেল স্টেশন ছেড়ে জেলার পাঁচবিবি উপজেলার খাসবাগুড়ি এলাকায় পৌঁছলে হঠাৎ পেছনের ৫-৬টি বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে গার্ড মোবাইল ফোনে ট্রেন চলককে জানালে তিনি খাসবাগড়ির মীরশহিদ রেল গেটে ট্রেন থামান।

এদিকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পেছনের চলন্ত বগিগুলো সামনে দাঁড়ানো বগিসহ ইঞ্জিনের অংশে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রেনের ইঞ্জিনের বাইরের ফাঁকে বসে থাকা লোকজন ছিটকে পড়ে ব্যাপক হতাহত হয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই জুয়েল (১৪) নামের একজন কাটাপড়ে মারা যায়।

ঘটনাস্থল খাসবাগুড়ি গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী শুভ হোসেন জানান, সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করেই মালবাহী ট্রেনের পেছনের ৫-৬টি বগি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ইঞ্জিন থেকে আলাদা হয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই সামনের ট্রেনটি দাঁড়ানো মাত্র পেছনের বগিগুলি এসে সজোরে ধাক্কা দিলে বগি থেকে লোকজন ছিটকে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

তবে ওই ট্রেনের যাত্রীদের অভিযোগ, দ্রুত গতিতে যাওয়া ট্রেনটিতে ড্রাইভার হঠাৎ ব্রেক করায় ওই ট্রেনের কয়েকটি বগি মূল ট্রেন থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল।

জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়াছিন ও পুলিশ সুপার আবু কালাম সিদ্দিক এ ঘটনায় ৫ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

তবে এ ব্যাপারে সান্তাহার রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাঈদ ইকবাল সন্ধ্যার পরে জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন বলে তারা জেনেছেন। ঘটনার পর সান্তাহার রেলওয়ে থানার (জিআরপি) এসআই আব্দুর রাজ্জাকসহ চারজন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন।

এ বিষয়ে এখনো কোন মামলা হয়নি বলে জানান ওসি।