সকল মেনু

আজ ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবস

শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর প্রতিনিধি: আজ ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে চাঁদপুর পাক হানাদার বাহিনীর বলয় থেকে মুক্তি পেয়েছিল। চাঁদপুর থানার সামনে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম চাঁদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ২০ বছর চাঁদপুর মুক্ত দিবস পালনের কানো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ১৯৯২ সাল হতে আনুষ্ঠাানিকভাবে মাসব্যাপী বিজয় মেলা শুরুর মাধ্যমে ৮ ডিসেম্বর পালন শুরু ।
১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে দখলদার বাহিনী দুটি বিমান থেকে সেলিং এর মাধ্যমে প্রথম আক্রমনের সূচনা করে। প্রথম দিনের হামলায় চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারের একজন নারী পথচারী নিহত হন। পরদিন ৮ এপ্রিল বিকেলে প্রায় ৫’শ পাকসেনা বোঝাই ৯৬ টি সামরিক যানের একটি বহর চাঁদপুর আসে। শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে। ওই রাতে চাঁদপুরে অবস্থানরত ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালায়। হামলা দেখে পাক হানাদার বাহিনী এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এর ফলে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক আহত হন। চাঁদপুর বড়ষ্টেশন মোলহেড এলাকায় হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের ধরে এনে বেয়নেট চার্জ করে মৃতদেহ মেঘনা নদীতে ফেলে দিতো। এভাবেই চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে বর্বরতম হত্যাকান্ড, লুটপাট, ভাংচুর অগ্নিকান্ড চালায় পাকহানাদার বাহিনী। মোলহেড এলাকায় চাঁদপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘ রক্তধারা’। তৈরি হয় চাঁদপুরের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুশীল, শংকর ও খালেক স্মৃতিসৌধ এবং তৈরি করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ অঙ্গীকার।
এপ্রিল থেকে হানাদারবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের চলে দফায় দফায় চলে গুলি বিনিময়। পরে গঠন করা হয় শান্তিবাহিনী। তারপর নতুন কায়দায় শান্তিবাহিনী ও পাকহানাদার বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় চালাতে থাকে বর্বরোচিত অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ। ৩৬ ঘন্টা যুদ্ধের পর পলায়ন করে । এভাবে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের দোষররা কত লোককে হত্যা করেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা জেলায় সর্বশেষ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর লাকসাম ও মুদাফ্ফরগঞ্জ মুক্ত হবার পর। যৌথ বাহিনী হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে মুক্তিসেনা কর্তৃক হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ভারতের মাউন্ট্নে ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পলায়নরত পাকসেনাদের উপর যৌথ আক্রমন চালায় । দিশে না পেয়ে পাকিস্তান ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খান চাঁদপুর থেকে পলায়ন করেন। ৩৬ ঘন্টা তীব্র লড়াইয়ের পর ৮ডিসেম্বর জেলার হাজীগঞ্জ এবং বিনা প্রতিরোধেই চাঁদপুর শহর মুক্ত হয়।
১৯৯২ সাল থেকে চাঁদপুরে মাস ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার পাশাপাশি চাঁদপুর মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিজয় মেলা মঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দেশবরেণ্য মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, সংস্কৃতিক, সাংবাদিক এবং স্থানীয় নেতৃবৃৃন্দের ‘৭১-এর পটভূমি নিয়ে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান থেকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top