সকল মেনু

অনিশ্চয়তা এইডস রোগীদের চিকিৎসায়

হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এইডস প্রতিরোধে নানা প্রচার-প্রচারণা চলে আসছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশে এর চিত্রপট একেবারেই ভিন্ন। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এইচআইভি পজেটিভ রোগীদের সংখ্যা এবং তাদের মৃত্যু হার বেড়ে চলেছে। এই অবস্থার মধ্যে দেশে এইচআইভি পজেটিভ রোগীদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এই রোগে আক্রান্ত রোগীদেরকে আর কোনো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না।

তবে এ আশঙ্কার সৃষ্টি ২০১২ সাল থেকেই। সে সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক ঘোষণায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে বিদেশি সহায়তাকারী ( ডোনার) প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিতে বলা হয়।

ইউএসএআইডি’সহ বেশ কিছু সংস্থা বাংলাদেশের এইডস ও এইচআইভি পজেটিভ রোগীদের জন্য এ অর্থ অনুদান দিয়ে আসছিল। এই অর্থ বিভিন্ন এনজিওকে ( নন-গভর্ণমেন্ট অর্গানাইজেশন) বন্টণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রোগীদের চিকিৎসায় ব্যয় করা হয়। তবে বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করে সরকারি সহায়তা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নন এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

এইচআইভি পজেটিভ শিশু ও নারী-পুরুষদের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আশার আলো সোসাইটির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সানোয়ার হোসেন বাংলামেইলকে বলেন, দেশে প্রতিবছরই এইচআইভি পজেটিভ ও এইডস রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। এ রোগে আক্রান্ত নারী-পুরুষেরা সামাজিকভাবে অবহেলিত ও বঞ্চিত। কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে ভাড়া বাসা পর্যন্ত তারা সর্বত্রই বৈষম্যের শিকার। এরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেলেও জীবন-জীবীকার অভাবে তারা সমাজে ভালোভাবে টিকে থাকতে পারছেনা। ফলে একরকম কোণঠাসা হয়েই তাদেরকে জীবন চালাতে হচ্ছে। বিদেশ থেকে পাওয়া অর্থে এসব রোগী ও তাদের এইচআইভি পজেটিভ শিশুদের চিকিৎসা ও শিশুটির ভরন- পোষণ করানো সম্ভব নয়। এমনকি তাদের চিকিৎসার জন্য এখনো কোনো আবাসিক সুবিধা সৃষ্টি করা হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০১২ সালের একটি ঘোষণায় বিদেশি দাতব্য সংস্থাগুলোকে ২০১৫ সাল থেকে তাদের আর্থিক অনুদান বন্ধ করতে বলা হয়।

বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে রোগীদেরকে চিকিৎসার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। কিন্তু গত ২ বছরে সরকারিভাবে এসব এনজিওর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করা হয়নি। এদিকে দাতব্য সংস্থাগুলোও তাদের অনুদান জানুয়ারি থেকে বন্ধ করে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় সরকার চুপ করে থাকলে দেশে এইডস রোগীদের চিকিৎসা একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

এদিকে জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩ হাজার ২৪১ জন এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ২৯৯ জন এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৭২ জনের। অথচ ১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইডস আক্রান্ত একজন রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে বিগত পঁচিশ বছরে এইচআইভি-এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪১ জন।

সার্বিকভাবে এইডস আক্রান্তদের সংখ্যা প্রতি বছরই বেড়েছে। তবে এর মাঝেও উদ্বেগ হয়ে দেখা দিয়েছে শিশুদের এইচআইভি-এইডসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা। ২০১৩ সালে দেশে নতুন করে আক্রান্ত ৩৭০ জনের মধ্যে ১ থেকে ৫ বছরের ১২ জন, ৬ থেকে ৯ বছরের ৩ জন এ রোগে আক্রান্ত। যা মোট আক্রান্তের ৪ শতাংশ। ১০ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে ৩৩০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন, যা মোট আক্রান্তের ৮৯.২ শতাংশ।

এসব শিশু কোনো দৈহিক সম্পর্ক বা নেশা দ্রব্যের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়নি। বাবা-মায়ের সচেতনতার অভাবে জন্মগতভাবেই তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে দিন দিন বাড়তে থাকা রোগীর পাশাপাশি নতুন করে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া না গেলে দেশে এই রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যার কারণে দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

২০১২ সালে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া ঘোষণা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এইডস রোগীদেরকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করছি। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা। এর পাশেই রয়েছি ভারত ও মায়ানমার। সে কারণেই আমাদের দেশে এইডস রোগীরা প্রবেশ করছে।’

এনজিও’র বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশে এইডস রোগীদের চিকিৎসায় কয়েকটি এনজিও কাজ করছে। কিন্তু আমি তাদের কাজে কখনোই সন্তুষ্ট না। তারা মোটেই তেমন ভালো কাজ করছে না। বিদেশীরা তাদেরকে টাকা দিচ্ছে, কিন্তু তারা কাজ করছে একেবারেই নিম্নমানের। সে কারণেই আমরা চিন্তা করেছি, যেহেতু এইডস রোগীদের চিকিৎসা আমরাই করেছি সেহেতু এনজিও দরকার নেই।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এইডস রোগী সনাক্তকরণের সিডি- ফোর মেশিনটি আদৌ চালু করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন মেশিন আছে কিনা আমার জানা নেই।

এইচআইভি ও এইডস সনাক্তকরণের আটটি সিডি-ফোর মেশিন বাংলাদেশে বেশ আগে আমদানি করা হয়েছে। এর একটি মেশিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মেশিনটি পরিচালনার জন্য কোনো দক্ষ কর্মী না পাওয়ায় মেশিনটি অকেজ হয়ে পড়ে আছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইস চ্যান্সেলর ডা. প্রাণ গোপাল দত্তকে বারবার ফোনে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top