সকল মেনু

লাশের সাথেই যার জীবন গাথা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :: লাশ নিয়ে যার কারবার। লাশ নিয়েই যার কাটে দিন। খুন হলেই যার হাতে টাকার উল­াস। ভয় যাকে ভয় পায়। এমন একটি নাম জোয়াহের। বয়স ৬০। বাড়ি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাদারকোল গ্রামে। ভয় পাবার কিছু নেই কারণ তিনি কোন সিরিয়াল কিলার নন। আট দশজনের মতোই তিনি একজন সাধারণ মানুষ।

বেওয়ারিশ, আত্মহত্যা, ও বিভিন্ন কারণে খুন হওয়া লাশ গুলো তার নিজের ভ্যান গাড়ী দিয়ে বহন করে যে টাকা পান তাই দিয়ে তার অভাবের সংসার চলে। ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায়, থানা থেকে মর্গে আবার মর্গে থেকে থানার মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির পরিবারের কাছে পৌছে দেয়া নিয়েই তার ছুটছুটি। স¤প্রতি দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের সন্নিকটে একটি চায়ের দোকানে কথা হয় তার সাথে; তিনি বলেন, ২৭ বছর ধরে লাশ আনা নেয়ার কাজ করছি। অন্য পেশায় এক মাস কাজ করে পাওয়া যায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর এ পেশায় একটি লাশ বহন করেই পাচ্ছি ৫ হাজার টাকা। আবার অনেক সময় কবর থেকে লাশ তুললেই মিলছে ১০ হাজার টাকা। জোয়াহের বলেন,এ পর্যন্ত প্রায় এক থেকে দেড় হাজার লাশ বহন করেছি। কোনদিন একসাথে ১০ থেকে ১২টি লাশও বহন করতে হয়েছে আমাকে। রাতের বেলায় কাজ করতে গিয়ে কোন ব্যতিক্রমি ঘটনা ঘটেছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, খোদাকে শুধু ভয় পাই। এছাড়া অন্য কাউকে ভয় পাইনা। রাতের বেলায় লাশ নেয়ার আগে ও পরে বোতল (মদ) সেবন করি। অনেক সময় ভূত পিশাচ মাঝ রাতে লাশ নেয়ার সময় বিড়ালের রুপ ও সাদা কাপড় পরে বউ সেজে চিৎকার চেঁচামেচি করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি ভয় পাইনি অরাই ভয় পায়।লাশ পরিবহনের কাজ করে তার সংসার চলে কিনা এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ কাজ ছাড়াও আমাকে পেট চালাতে মাঝে মধ্যেই ভ্যান চালাতে হয়। দুটি ছেলে আছে আমার তারা অন্যের বাড়িতে তাঁতের কাজ করে। হঠাৎ উত্তেজিত কন্ঠে তিনি বলেন, এ কাজ আর করবনা। ওসি দারোগারা সব খাইয়া ফালাই, দশটা মরে বাদিরা কয়েকটার পোস্টমর্টেম করে আর বাকি সব ওসিরা মিটাইয়া ফালাই। পরে লাশ আবার কব্বর থেকে টাইনা উঠাইতে হয়। আগে বিভিন্ন জায়গায় লাশ পড়ে থাকতো। এখন দেলদুয়ারে খুন খারাবি কম হয় যার ফলে আমার আয় কমে গেছে। কবর থেকে বেওয়ারিশ লাশ উত্তোলনের ক্ষেত্রে তার আয় একেবারেই কম। তিনি একটি লাশ উত্তোলন করে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা গ্রহন করে থাকেন। সনাক্ত হওয়া এ লাশের খরচ বহন করে মৃত ব্যক্তির পরিবার। যদিও এ ক্ষেত্রে দুপেকে ১২শ’ টাকা, টাঙ্গাইল আঞ্জুমানে ১৪শ’ মদ ও গাড়ী ভাড়া খরচ বাবদ তার লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে। তারপরও এভাবেই চলছে তার জীবন লীলা। রাত কি দিন; যখনি অস্বাভাবিক কারোও মৃত্যু হচ্ছে ডাক পড়ছে জোয়াহেরের। আর তখনি তার ছুটে চলা। লাশের ভাড়ের পাশাপাশি এখন তাকে বইতে হচ্ছে তার নিজের বয়সের ভার। জীবনে হাজরো মানুষের মৃত্যুর সাক্ষি হওয়া এই জোয়াহেরের এখন একটাই স্বপ্ন খুন বা বেওয়ারিশ হয়ে নয় তার মৃত্যু যেনো অন্য সবার মতো স্বাভাবিক ভাবেই ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top