সকল মেনু

চাঁদপুরে বছরের পর বছর রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মেলন হয় না

শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর,হটনিউজ২৪বিডি.কম :: চাঁদপুরে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রায় সবগুলোরই কার্যকরী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়েই চলছে দলগুলো। আর আহŸায়ক কমিটির মেয়াদ যেনো শেষ হয় না। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে জেলা পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্র একই অবস্থা। আহŸায়ক কমিটি দেয়ার সময় বলা হয় তিন মাসের মেয়াদে এবং এই সময়ের মধ্যে অধীনস্থ ইউনিটের সম্মেলন শেষ করে নিজ কমিটির জন্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, বছরের পর বছর চলে গেলেও ওই তিন মাস শেষ হয় না। আর কার্যকরী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও সম্মেলন করার কোনো খবর থাকে না। ফরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নেতাদের ভেতর পদ-পদবি ধরে রাখার অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। এর ফলে দুর্নীতি বিকশিত হচ্ছে এবং দলের ভেতর উপদলীয় দ্ব›দ্ব ও কোন্দল বাড়ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চাঁদপুর জেলায় আহŸায়ক কমিটি দিয়ে চলছে আওয়ামী যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। আর ছাত্র সংগঠনের মধ্যে রয়েছে জেলা ছাত্রদল। এর মধ্যে জেলা ছাত্রদলের আহŸায়ক কমিটি হয়েছে স¤প্রতি। গত আগস্টে জেলা ছাত্রদলের আহŸায়ক কমিটি করে দেয়া হয়। তবে এ আহŸায়ক কমিটির কোনো সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি বলে জানান জেলা ছাত্রদলের আহŸায়ক ফয়সাল আহমেদ বাহার গাজী। আর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ এবং জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহŸায়ক কমিটি কত বছর যাবৎ চলছে তা হয়তো কমিটির নেতারাও সঠিকভাবে বলতে পারবেন না। অর্থাৎ বছরের পর বছর চলছে এ দুটি সংগঠনের আহŸায়ক কমিটি। জেলা মহিলা লীগের আহŸায়ক অ্যাডঃ নূরজাহান বেগম মুক্তা চাঁদপুর থেকে চলে গেছেন বেশ ক’ বছর হয়। তিনি এখন ঢাকায় স্থায়ীভাবে থাকছেন। তাছাড়া তিনি এখন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। সদস্য সচিব অধ্যাপিকা মাসুদা নূর খানকেই শুধু হাতে গোণা কয়েকজনকে নিয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের নামমাত্র কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়। এই কমিটির বয়স হবে প্রায় ১৩ বছর। অধ্যাপিকা মাসুদা নূরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বেশ ক’বার সম্মেলন করার উদ্যোগ নিয়েছি, কিন্তু নানা কারণে হয়ে উঠেনি। তবে আগামী ২ মাসের মধ্যে সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।
জেলা যুবলীগের বর্তমান আহŸায়ক কমিটি দেয়া হয় ২০১৩ সালের ফেব্রæয়ারিতে। তিন মাসের জন্য এ কমিটি দেয়া হলেও ইতিমধ্যে দেড় বছর পার করে ফেলেছে। তবে সহসা সম্মেলন হবে বলে জানান বর্তমান কমিটির কয়েকজন নেতা। জনৈক যুগ্ম আহŸায়ক জানান, কোনো সমস্যা না থাকলে আহŸায়ক কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চালাতে অসুবিধা তো নেই। তিনি পাল্টা অভিযোগের সুরে বলেন, কার্যকরী কমিটিওতো করা হয় তিন বছরের জন্য, কিন্তু সে কমিটিই তো ৮/১০ বছর চলে যায়।
আর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের অবস্থা আছে লেজেগোবরে। আহŸায়ক কমিটি যে কতো বছর যাবৎ চলছে তা হয়তো এ কমিটির অনেকেই বলতে পারবেন না। আহŸায়ক ও যুগ্ম আহŸায়কদের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ দিনের দ্ব›দ্ব। তবে মূল দলের ক’জন নেতা মনে হয় এদের নিয়ে খেলছেন। আহŸায়ক এসএম জয়নাল আবেদীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সম্ভবত ২০০৬ সালে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান আহŸায়ক কমিটি গঠন হয়। তিনি বলেন, সম্মেলন করার চিন্তা ভাবনা আমার অনেক আগ থেকেই। নানা প্রতিকূলতার কারণে হচ্ছে না। যুগ্ম আহŸায়ক জাফর ইকবাল মুন্নার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অবশ্যই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হওয়া খুবই প্রয়োজন। সম্মেলন করার জন্য কেন্দ্রে একাধিকবার আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। কেন্দ্র চাইলেই আমরা সম্মেলন করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, চাঁদপুরের মূল দলের ক’জন নেতা চাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগকে তাদের নিজস্ব পকেট কমিটি হিসেবে রাখতে। মূলতঃ তাদের কারণেই সম্মেলন হচ্ছে না। আমরা চাচ্ছি সাবেক ছাত্র নেতাদের দিয়েই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হোক। এ ক্ষেত্রে যদি আমি বাদও যাই তাতেও আমার কোনো আপত্তি নেই।
মূল দলের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির বয়স দশ বছর চলছে। অথচ এ কমিটির মেয়াদ তিন বছর। ২০০৫ সালের ২৬ এপ্রিল জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে সম্মেলন হবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। আর জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির বয়স পাঁচ বছর শেষ হওয়ার পথে। এ কমিটিও তিন বছরের জন্য করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ জানুয়ারি জেলা বিএনপির সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়। কয়েক মাসের মধ্যে এ দলটিরও সম্মেলন হবে বলে দায়িত্বশীল ক’জন নেতা জানান। এ ছাড়া জেলা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদের কমিটির বয়স চলছে চার বছর। ২০১১ সালের জুনে জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি দেয়া হয়। এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ মোতালেব জানান, বিভিন্ন ইউনিট কমিটি সম্পন্ন করতে দেরি হওয়ায় সময়মতো সম্মেলন করা যাচ্ছে না। এখনো কয়েকটি উপজেলা সম্মেলন করা বাকি আছে। সেগুলো করেই আমরা জেলা সম্মেলন করবো।
এ দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে পদ ধরে রাখায় নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না এবং গণতন্ত্রও চর্চা হচ্ছে না বলে মনে করছেন দলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদি দলগুলো পরিচালিত হতো তাহলে মেধা সম্পন্ন নেতৃত্ব আসতো এবং নেতৃত্বে আসতে প্রতিযোগিতাও সৃষ্টি হতো। তা না করে বছরের পর বছর ক্ষমতা বা পদ কুক্ষিগত করে রাখায় নেতাদের মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব সৃষ্টি হয় এবং তারা অনেকটা দুর্নীতিপরায়ন হয়ে পড়েন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top