সকল মেনু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

ঢাকা :: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত প্রাথমিক যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে পারেননি—এমন প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর—সব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকাই হয়নি।
নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকা এই বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী নিজেই বলেছেন, নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় বেশ অনিয়ম হয়েছে। সিলেকশন বোর্ড অবশ্য তাঁর কথা গ্রাহ্য করেনি।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ঘোষণা অনুযায়ী উর্দু বিভাগে দুজন প্রভাষক নিয়োগের কথা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমতি ছাড়াই তিনজন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তাঁদের নিয়োগ চূড়ান্ত করার কথা।
বঞ্চিত প্রার্থীরা গত সোমবার উপাচার্য, সহ-উপাচার্য বরাবর লিখিত দিয়ে অনিয়মের প্রতিকার চেয়েছেন। এই নিয়োগ বাতিল করে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ করার দাবি করেছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জানান, তিনি নিয়োগবঞ্চিতদের আবেদন পেয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে এই প্রতিবেদককে নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নাসরীন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, তিনি ব্যস্ত আছেন। পরে কথা বলবেন।
গত ১২ জুন একটি দৈনিক পত্রিকায় উর্দু বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়, এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রথম শ্রেণি/জিপিএ ৪.২৫ পেতে হবে। এ ছাড়া অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণি/সিজিপিএ ৩.৫০ নির্ধারণ করা হয়। তবে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদনে নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীরা দাবি করেন, ১৯ জন আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র পাঁচজন শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণ করেন। পরে বিভাগের নিয়োগ-সংক্রান্ত সিএনডি কমিটির সিদ্ধান্তে সব প্রার্থী যোগ্য বিবেচনা করে মৌখিক পরীক্ষার জন্য সবাইকে ডাকার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তকেও উপেক্ষা করে সবাইকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য কার্ড দেওয়া হয়নি। ৯ নভেম্বর কর্তৃপক্ষ সাক্ষাৎকার নেয় প্রার্থীদের।
ছায়েবা জেরিন নামের নির্বাচিত প্রার্থী এসএসসিতে পেয়েছেন ৩.৫০, অর্থাৎ তিনি বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ করেননি। তিনি মাস্টার্সে পঞ্চম স্থান লাভ করেছেন। আরেক প্রার্থী মাসুম শেখ চলতি বছরে মাস্টার্স পাস করেন। বিশেষ যোগ্যতাও নেই। তাঁর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছে। আরেক প্রার্থী হাফসা আক্তার ২০১২ সালে মাস্টার্স পাস করেছেন। তিনিও এমফিল বা পিএইচডি গবেষক নন। কোনো জার্নালে লেখাও প্রকাশিত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ. সালাম নামের একজন প্রার্থী এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণি পেয়েছেন। ভালো ফলের জন্য দুটি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। এমফিল সমাপ্ত করেছেন। পিএইচডি গবেষক সালামের তিনটি জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। জানা গেছে, সালাম মৌখিক পরীক্ষার জন্য কার্ডই পাননি।
আরেকজন প্রার্থী আলমগীর হোসেনেরও মাস্টার্সসহ মোট চারটি প্রথম শ্রেণি। দুটি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। পিএইচডি করছেন। তিনি মৌখিক পরীক্ষা দিলেও নির্বাচিত হননি।
অন্য বঞ্চিতদেরও এ ধরনের ফলাফল এবং বিশেষ যোগ্যতা থাকার পরও তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বলছেন নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির যথেষ্ট প্রমাণ মিলবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রার্থী বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী। তিনি সম্প্রতি চেয়ারম্যান পদ হস্তান্তর করেছেন। চেয়ারম্যান থাকার কারণে পদাধিকার বলে এর আগে এই নিয়োগ-প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘তিনজন প্রার্থীর মধ্যে একজনের বেলায় কিছুটা নিয়ম মানা হলেও অন্য দুজনের বেলায় কোনো নিয়মই মানা হয়নি। যারা যোগ্য ছিল তাদের বিভিন্ন কায়দা করে বাদ দেওয়া হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকলেও যোগ্য প্রার্থীদের কথা বলারই সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ মৌখিক পরীক্ষা ভালো দেয়নি বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমি বারবার এসব অনিয়মের কথা বলেছি। তবে সিলেকশন বোর্ডের অন্য সদস্যরা আমার কথা শোনেননি।’
নির্বাচিত প্রার্থী হাফসা আক্তার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি নির্বাচিত কি না, এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নই। আমি আমার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত আছি। তবে আমি যদি নির্বাচিত হয়ে থাকি তা যোগ্য বলেই হয়েছি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শর্ত পূরণ করেছি।’
আরেকজন নির্বাচিত প্রার্থী সম্প্রতি মাস্টার্স পাস করা মাসুম শেখ বলেন, ‘যোগ্য বলেই তো ভাইভা কার্ড পেয়েছি। অনার্সে ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। মাস্টার্সে সর্বোচ্চ সিজিপিএ পাওয়ায় ডিনস অ্যাওয়ার্ডস অন এক্সিলেন্টের জন্য মনোনীত হয়েছি। স্বর্ণপদক পেতে যাচ্ছি।’
তবে বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী এসএসসি এবং এইচএসসি এই দুই পরীক্ষায় জিপিএ ৪.২৫ পাওয়ার কথা থাকলেও মাসুম শেখ ও হাফসা আক্তার তা পূরণ করেননি। একই অবস্থা আরেক প্রার্থী ছায়েবা জেরিনের বেলায়ও প্রযোজ্য।
জেরিনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top