সকল মেনু

দিনাজপুরে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সংবাদ সম্মেলন

জিন্নাত হোসেন, দিনাজপুর :: নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারী নির্যাতন বিরোধী চেতনা এবং সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সাংবাদ সম্মেলনে বলা হয় ১৯৬১ সালের ২৫ নভেম্বর ডোমিনিক প্রজাতন্ত্রে, সেদেশের স্বৈরশাসক তিনবোনকে নিমর্মভাবে হত্যা করে। সেই তিন বোনের আত্মত্যাগের স্মরণে ২৫ নভেম্বরকে আর্ন্তজাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তীতে জাতিসংঘ ১৯৯৯ সালে ২৫ নভেম্বরকে আর্ন্তজাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস এবং ১০ ডিসেম্বর বিশ্বমানবাধিকার দিবস ঘোষণার মধ্য দিয়ে ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পক্ষকালীন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্বমানবাধিকার দিবস পালন করে আসছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
২৪ নভেম্বর সোমবার দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মারুফা বেগম স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তৎকালীন সমাজে প্রচলিত অমানবিক সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠলে নানা বাধা- বিপত্তি সত্তে¡ও সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীকালে তৎকালীন সমাজে বিধবাদের করুণ
অবস্থা অনুধাবন করে বিধবা বিয়ে শুরু হয়। নারী নির্যাতনের ঘটনা এখানেই শেষ নয়। স্ত্রী পেটানো,শারিিিরক বা মানষিক নির্যাতনকে পুরুষেরা অতি সাধারণ ঘটনা বলে মনে করে। যদিও এটা কোন সাধারণ ঘটনা নয়। এরপরে আসে তালাকের বিষয়টি। মুখে তালাক বললেই তালাক হয় না। কিন্তু
এক শ্রেণীর ধর্মান্ধ মানুষ গ্রাম্য মুসলিম নারীর জীবনে নিয়ে আসে এক ধরনের অত্যাচার। হিল­া বিয়ের ফতোয়া জারি করে তারা এটা মেয়ের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়।পারিবারিক বিরোধের সুযোগ নিয়ে মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচার করা হয়। কিন্তু যে পাশবিক অত্যাচার করে তার কোন বিচার হয় না, বিচার হয় মেয়েটির। তাকে ফতোয়া দিয়ে দোররা মেরে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। সমাজের চোখে হেয় করা হয। এই দুর্বিসহ জীবন নিয়ে আমাদের মেয়েরা জীবনযাপন করছে। এছাড়াও ধর্ষণ,গণধর্ষণের পর
হত্যা,অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ, যৌতুকের কারণে পুড়িয়ে হত্যা,নারী-শিশু পাচার,পর্ণোগ্রাফির মত জঘন্য নারী নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। এই সকল ঘটনার শিকার যারা অধিকাংশ সময় তারা
আইনের আশ্রয় নিতে পারে না, কখনও বা আইনের আশ্রয় নিলেও বিভিন্ন উদ্ভুত কারণে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। বিদ্যমান আর্থ- সমাজিক অবস্থাসহ নারীর প্রতি পুরুষের অধ:স্তন দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা ক্রমবর্ধমানহারে বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে কন্যা শিশুর বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৬ করার প্রস্তাব আমাদের স্তম্ভিত করেছে। জাতিসংঘ ঘোষিত ১৮ বছর বয়সের পূর্বে কন্যাশিশু পূর্ণ বয়স্ক হিসেবে বিবাহযোগ্য বলে না হওয়ায় এ বিষয়ে আমরা পূর্বের আইনটি বহাল রাখার দাবি জানাই তাছাড়াও নারী নির্যাতন অবসানের কাজ কেবল নারীর মানবাধিকার রক্ষা, নারীর জীবনের অধিকারের স্বীকৃতি রক্ষা করাই নয়- সকল প্রকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও বিলোপের সংগ্রাম,সকল মানুষের জীবনের অধিকার রক্ষার সংগ্রাম। এই সংগ্রাম সকল মানুষের মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রাম।
আর্ন্তজাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ”১৪ সামনে রেখে মহিলা পরিষদ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারী নির্যাতন বিরোধী সংস্কৃতি, পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে গড়ে তোলার জন্য পুরুষ সমাজ ও তরুণ-তরুণীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহŸান জানাচ্ছে। নির্যাতনের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সমস্যা চিহ্নিত করে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা সাপেক্ষে আইন সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহনের প্রয়োজন। মহিলা পরিষদ তথা দেশের নারী সমাজ বিশ্বাস করে হত্যাকারী, নারী নির্যাতনকারীসহ সকল ধরণের অপরাধীদের বিচার না হলে দেশে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। সমাজে অপরাধ দমনে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে আইন প্রণয়ন ও সংস্কার বা সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে রাজনৈতিক সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতন হ্রাস পাবে।
আসুন আমরা সকলে জেগে উঠি নতুন এক মুক্তিযুদ্ধের অসীম প্রেরণায়। এই যুদ্ধ মানবিকতার জন্য উন্নততর মনুষ্যত্ববোধের জন্য, উন্নততর জীবন চর্চার জন্য। এ যুদ্ধে মহিলা পরিষদ তথা নারী আন্দোলন থাকবে সব সময়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top