নিজস্ব প্রতিবেদক : ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এ নিয়ে সংগঠনের নেতাদের কারো মধ্যে উচ্ছ্বাস আবার মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন জয়।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, দুই বছরের জন্য গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ দুই বছর। কিন্তু চার বছরে পদার্পণ করলেও এখন পর্যন্ত নতুন কমিটি হয়নি।কবে নাগাদ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হবে তারও কোনো তারিখ নির্ধারণ হয়নি। নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগও।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১১ সালের ১০ ও ১১ জুলাই।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১ (খ) ধারায় বলা আছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। এর মধ্যে সম্মেলনের আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা লোপ পাবে।
নেতারা জানান, ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার জন্য বয়স নির্ধারণ করা আছে ২৯। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হয় না বলে প্রায় সময়ই দেখা যায়, সংগঠনে যারা পরবর্তী সময়ে নেতা হওয়ার জন্য যোগ্য, তাদের অনেকেই বয়সের কারণে নেতা হতে পারছেন না। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন ইউনিটে ছাত্রলীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এবং অস্থিরতা বেড়ে গেছে।এসব অস্থিরতা কমাতে আগামীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পরবর্তী কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরোক্ষ কোনো নির্দেশ বা নির্দেশনা আসে কি না এ নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো কোনো নেতা শঙ্কায় আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘এর আগে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছাত্রসমাবেশে ছাত্রলীগকে ‘ভোগের নয়, ত্যাগের রাজনীতি করতে হবে’ এমন উপদেশ দিয়ে পরোক্ষভাবে কাউন্সিলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।এখন ছাত্রলীগ নিয়ে জয় কী বলেন সেটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
গত ৩১ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনীতিতে কী পেলাম বা পেলাম না, সেটি বড় কথা নয়। দেশ ও দেশের মানুষকে কী দিতে পারলাম সেটিই বড় কথা। সবাইকে মনে রাখতে হবে- ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রাপ্তি। যারা সম্পদ গড়তে রাজনীতিতে এসেছে, তারা রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছে, ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এখনও যারা আছে তারাও রাজনীতি থেকে একদিন হারিয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, যারা ত্যাগের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে, তারাই দেশকে কিছু দিতে পারে। আর যারা ভোগ ও সম্পদ গড়ার জন্য রাজনীতি করে, তাদের থেকে জনগণ কিছু পায় না, বরং বঞ্চিত হয়।’
গত শনিবার দেশে আসেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এ দফায় তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। ইতিমধ্যে ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন তথ্যসেবা বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। এরপর ১৪ নভেম্বর রাজধানীতে একটি সুধী সমাবেশ এবং ১৫ নভেম্বর জনসচেতনতামূলক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন জয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘আমরা আগামী দিনের কাণ্ডারি সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঢাবি ছাত্রলীগও অংশ নেবে। আমরা আমাদের ইউনিটের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তার কাছে তুলে ধরব।এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায় আগামী দিনে জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ছাত্রলীগের ভূমিকার কথা বলব।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর মেয়াদ এক বছর। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির মতো এই কমিটিও চার বছরে পা দিয়েছে।
বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা যখনই কোনো সুযোগ্য কারো বায়োডাটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাই, তিনি জিজ্ঞেস করেন, ওরা কি ছাত্রলীগ করেছে? কোন পদে ছিল? যে ভা্বেই হোক, ওদের জন্য ব্যবস্থা কর। মেধাবীরাই ছাত্র রাজনীতি করে এবং তারাই দেশকে নেতৃত্ব দেয়। তোমাদের হাতেই দেশের ভবিষ্যত। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে তোমাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের উচিত।’
প্রসঙ্গত, এই প্রথম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাবি ছাত্রলীগ এবং ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।