সকল মেনু

কমলগঞ্জে সাঙ্গো হলো মণিপুরী মহারাসলীলা

 মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে বর্ণময় শিল্প সমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধানতম ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা উৎসব শুক্রবার ঊষা লগ্নে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পরিসমাপ্তি ঘটে। উৎসাহ-উদ্দীপনা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্য ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাস উৎসবে প্রতিবারের মত এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। উপজেলার মাধবপুর জোড়ামন্ডপে ১৭২ তম ‘মহারাসলীলা উৎসব’ এবং আদমপুর তেতইগাঁও উন্মুক্ত মঞ্চে ২৯ তম রাসোৎসব উদযাপিত হয়। মণিপুরী সম্প্রদায়ের এ বৃহত্তম উৎসব উপলক্ষে উভয় স্থানে বসেছিল রকমারি আয়োজনে বিশাল মেলা। রাসোৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হয়েছিল কমলগঞ্জের দুটি এলাকার মণিপুরী অঞ্চলগুলো। মাধবপুর ও আদমপুরের উন্মুক্ত মঞ্চে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনুষ্ঠিতহয়েছে রাখাল নৃত্য। রাখাল নৃত্যের বিভিন্ন ধাপে রাধাকৃষ্ণের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকালের বিভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। নিজস্ব পোশাকে সজ্জিত হয়ে মণিপুরী তরুণ-তরুণীরা এতে অংশ নেন। সন্ধ্যায় গুণীজন সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এরপর রাত ১২টা থেকে শুরু হয় মণিপুরী নৃত্যের ধ্রুপদ ভঙ্গিমায় রাধাকৃষ্ণের রাসনৃত্য।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শৈশব এবং শ্রীমতি রাধিকার সঙ্গে প্রেমের কাহিনী নিয়ে রাসোৎসবের আয়োজন। মাধবপুরের শিববাড়ি থেকে শুরু করে গ্রামের তিনটি মন্ডসহ পুরো এলাকা সেজেছে বর্ণিল সাজে। রাসলীলা উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় খৈ, মুড়ি, বাতাসা, ছোটদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মণিপুরী পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ ও প্রসাধনী, শ্রীকৃষ্ণের ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির ছবিসহ বাহারি পণ্য শোভা পায়। এ ছাড়া মাধবপুর ললিতকলা একাডেমির সামনে বসেছে মণিপুরী সম্প্রদায়ের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে বইপত্রের কয়েকটি স্টল। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় মাধবপুর জোড়ামন্ডপে গুণীজন সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী এমপি। মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সভাপতি এ্যাড. চাঁদ মুরারী সিংহ স্বপনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নৃপেন্দ্র কুমার সিংহ ও মণিপুরী ললিতকলা একাডেমীর গবেষণা কর্মকর্তা প্রভাস সিংহের সঞ্চালনে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন এমপি, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, জনতা ব্যাংক লিঃ পরিচালনা পর্ষদ এর পরিচালক সৈয়দ বজলুল করিম, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার শহীদ মোহাম্মদ ছাইদুল হক ও স্বদেশ লাইফ ইন্সুরেন্স কো: লি. এর চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক লুবনা মরিয়ম, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নিহির কান্তি দেব মিন্টু, কমলগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মুনিম তরফদার, বাংলাদেশ মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপতি সুজিত কুমার সিংহ। গুণীজন সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন-বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ণ কুমার সিংহ, শিক্ষক ও সফল পিতা বসন্ত কুমার সিংহ, রাসধারী অজা চন্দ্রমোহন সিংহ।
অন্যদিকে আদমপুর সানা ঠাকুর মন্ডপে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উৎসবমূখর পরিবেশে উদযাপিত হয় মৈ তৈ মণিপুরীদের ২৯তম রাসোৎসব।
আলাপকালে সংস্কৃতিকর্মী শাব্বির এলাহী বলেন, বংশ পরম্পরায় নান্দনিকতার পূজারী মণিপুরীদের মেলবন্ধন এই রাস উৎসব। এটি এখন জাতিধর্ম নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। এটি সিলেট বিভাগের মধ্যে ব্যতিক্রমী আয়োজন। এখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের আগমন ঘটে। বর্ণময় শিল্প সমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবে সবার মহামিলন ঘটেছিল।
বাংলাদেশ মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, এখানে সব ধরনের সুবিধা বিদ্যমান থাকায় এটি উৎসবে রূপ নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসবে যোগ দিতে হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী এখানে এসেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top