সকল মেনু

বর্ণাঢ্য আয়োজনে মণিপুরী মহারাসলীলা শুরু

  এম শাহজাহান আহমদ,মৌলভীবাজার: কার্তিকের পূর্ণিমা তিথিতে তুমুল হৈ চৈ আনন্দ উল্লাস, বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা, ঢাকঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে বৃহষ্পতিবার (৬ নভেম্বর) শুরু হয়েছে মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে বর্ণময় শিল্পকলা সমৃদ্ধ মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধানতম ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা। শুক্রবার ঊষা লগ্নে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটবে। বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাস উৎসবে প্রতিবারের মত এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। মণিপুরী সম্প্রদায়ের এ বৃহত্তম উৎসব উপলক্ষে উভয় স্থানে বসেছিল রকমারি আয়োজনে বিশাল মেলা। রাসোৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হয়েছিল কমলগঞ্জের মণিপুরী অঞ্চলগুলো। ভিড় সামলাতে পুলিশ-র‌্যাব সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। দামোদর মাস খ্যাত কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে গৌড়িয় বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মণিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ।     মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশী-বিদেশী পর্যটক, বরণ্যে জ্ঞানী-গুনী লোকজনসহ বিভিন্ন শ্রেণীর উর্দ্ধতন নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল উৎসব প্রাঙ্গন। কমলগঞ্জে মণিপুরী সম্প্রদায়ের রাসোৎসব উপলক্ষে জামায়াতের ডাতা বৃহষ্পতিবারের হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছিল। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়া মন্ডপ প্রাঙ্গনে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী সম্প্রদায়ের ১৭২তম শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরন উৎসব উপলক্ষে বৃহষ্পতিবার দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়েছে রাখাল নৃত্য (গোষ্ঠলীলা)।  অপরদিকে রাসোৎসব ২০১৪ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আদমপুর তেতইগাঁও উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয়েছে মৈতৈ মণিপুরী সম্প্রদায়ের ২৯তম রাস উৎসব। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল দুপুর ২টায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠলীলানুকরণে রাখাল নৃত্য শুরু হয়েছে। শুক্রবার ভোরের সূর্যোদয়ের পর অনুষ্টানের পরিসমাপ্তি  ঘটবে এই মহামিলন অনুষ্টানের ;তারপর সবাই ফিরে যাবে যার যার নিজ গন্তব্যে। মণিপুরী গৌরবময় ঐতিহ্যের শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহা রাসলীলানুকরণ উপলক্ষে মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক পূণ্যস্থান হিসেবে বিবেচিত কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে রাসোৎসবের জন্য তৈরী মন্ডপগুলো বৃহষ্পতিবার একটি রাত্রের জন্য হয়ে উঠছে হাজার হাজার মানুষের মিলনকেন্দ্র। সাদা কাগজের নকশায় সজ্জিত মন্ডপগুলোতে মণিপুরী শিশু নৃত্য শিল্পীদের সুনিপুন। ঐতিহ্যবাহী তাঁতের তৈরী চাদর, শাড়ি ও অন্যান্য কাপড়সহ কৃষি সরঞ্জাম, মাটির তৈরী সামগ্রী, ঘর সাজানোর সামগ্রী সহ লোক জীবনের সঙ্গে যুক্ত নানা দ্রব্য সাজিয়ে বসেছিল দোকানীরা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব পেশার মানুষের মিলনমেলা ঘটেছে এ রাসোৎসবে। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৭৭৯ সালে  মনিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্রস্বপ্নদৃষ্ট হয়ে যে নৃত্যগীতের প্রর্বতন করেছিলেন  তাহাই রাসোৎসব। ভাগ্যচন্দ্রের পরবর্তী রাজাগনের বেশরিভাগই ছিলেন নৃত্যগীতে পারদর্শী এবং তারা নিজেরাও রাসনৃত্যে  অংশগ্রহন করতেন। এর ফলে মনিপুরী সম্প্রদায়ের মধ্যে এ কৃষ্টির ধারাবাহিকতায় কোন ছেদ পড়েনি। অতীতের সেই ধারাবাহিকতার সূত্র ধরেই  কোন রুপ বিকৃতি ছাড়াই কমলগঞ্জে উদযাপিত হয়ে আসছে মনিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের মহা রাসলীলা। তুমুল হৈ-চৈ, আনন্দ-উৎসাহ, ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, করতাল এবং শঙ্খ ধ্বনির মধ্যদিয়ে রাধা-কৃষ্ণের লীলাকে  ঘিরেই আজকের দিনটি বছরের অন্য সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে  কমলগঞ্জ উপজেলাবাসীর জীবনে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top