সকল মেনু

পথচলা শিল্পসারথি রুমেলের

 বিনোদন প্রতিবেদক : মোবাইলে বার বার নাম্বার ডায়াল করছি। কয়েক দফা চেষ্টা করেও সাড়া মিলল না। বেশ কিছুক্ষণ পর সংযোগ মিলল নির্মাতা ইশতিয়াক আহমেদ রুমেলেরে। তিনি বললেন, ‘আমি তো, গ্রীণ রোডের সেন্ট্রাল হসপিটালে। আপনি পারলে এখানে চলে আসেন।’ কথা ছিল নিউমার্কেটে দেখা হবে। তাহলে হাসপাতালে কেন! না বুঝেই রওনা দেই সেন্ট্রাল হসপিটালের উদ্দেশ্যে। সময় তখন প্রায় সন্ধ্যা সাতটা। গন্তব্যে পৌঁছে জানতে পারি, কলেজ পড়ুয়া এক ছেলে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ছেলেটি এ নির্মাতার খুব কাছের। তাকে দেখতেই নির্মাতা রুমেল এখানে। হসপাতালের পাশে টং দোকানে বসি আমরা। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কথা হয় আমাদের। আড্ডাবাজ মানুষটি মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত। তবুও কিছুটা সময় চেয়ে নিয়ে কথা শুরু হয় তার সঙ্গে। ২০০১-০২ সালের কথা। তখন অভিনয় কিংবা নাটক পরিচালনার পরিকল্পনা ছিল না তার। স্বপ্ন ছিল কণ্ঠশিল্পী হবেন। নিজেদের একটা ব্যান্ডদল হবে। তখন তার এ স্বপ্নসঙ্গী বর্তমানের জনপ্রিয় অভিনেতা গীতিকার মারজুক রাসেল। কিন্তু একটা সময় কণ্ঠশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন কিছুটা থেমে যায়। ঘটনাক্রমে রুমেল প্রথম পরিচালনায় আসেন আলী ফিদা একরাম তোজোর ‘চলছে চলবে’ শিরোনামের একটি নাটকের সহকারি পরিচালক হিসেবে। কিছুদিন চলে এ পরিচালকের সঙ্গে নাটক পরিচালনার কাজ।
রুমেলে গ্রামের বাড়ি সিলেটে হওয়ার সুবাদে পরিচয় হয় জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে। তিনিই প্রথম রুমেলকে দায়িত্ব দেন সিলেটে নাটকের শুটিংয়ের লোকেশন দেখার। তারপর থেকেই নির্মাতা ফারুকীর সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন রুমেল। তার সঙ্গে নির্মাণ করেছেন ৪২০ মতো জনপ্রিয় সব নাটক। তারপর অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছেন। সেই গল্প অল্প বিম্তর অনেকেরই জানা।

এত দীর্ঘ সময় কেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে রয়েছেন? এর উত্তরে রুমেল বলেন, ফারুকী ভাই আমার গুরু। তিনি অসাধারণ একজন মানুষ। তার মধ্যে এমন কিছু গুণ আছে, যাতে আমি মুগ্ধ। তিনি যেমন শাসন করেন তেমনি আদরও করেন।

গুরুর সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ‘ধরুণ কখনো কোনো কারণে তিনি আমাকে বকেছেন এতে আমার ভীষণ মন খারাপ হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি এসে যখন বলেন, ‘খেতে আয়।’ আমি তখন আর রাগ করে থাকতে পারি না। মুর্হুতেই সব রাগ অভিমান হাওয়ায় মিশে যায়। মোট কথা, আমি আর ফারুকী ভাই দুজনেই যদি বোবা হতাম তবুও আমরা একে অন্যের ভাষা বুঝতাম।’

চলছে গল্প। এ গল্প যেন শেষ হওয়ার নয়। বলছেন তার নিজের কথা, কাজের কথা। থেমে নেই আমিও। একর পর এক প্রশ্ন করছি। তবে তাতে তিনি মোটেও বিরক্ত নন। হাসি মুখেই উত্তর দিয়ে চলেছেন। এ পর্যন্ত তার নাটক বা টেলিফিল্ম নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, আনুমানিক প্রায় দুইশত নাটক নির্মাণ করেছেন।
তার পরিচালনায় প্রথম নাটক ‘কবুতর’। এ নাটকের গল্পে কোন নায়ক কিংবা নায়িকা ছিল না। এমন গল্পের নাটক নির্মাণ করে তিনি বেশ বিপাকেও পরেছিলেন। কারণ এ নাটকের প্রযোজক ধরেই নিয়েছিলেন, কোনো চ্যানেলই এ নাটক কিনবে না। তাই পরিচালককেই সমস্ত টাকা ফেরত দিতে হবে। কিন্তু তৎকালীন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ওয়ান (বর্তমানে বন্ধ) এ নাটকটি নির্মাণ খরচের তিন গুণ টাকা দিয়ে সেটি কিনে নেয়। পরবর্তীতে নাটকটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। জানা যায় এ সফলতা শুধু তার নির্মাণশৈলীর জন্যে।

ইশতিয়াক আহমেদ রুমেল পরিচালিত সব নাটকই তার লেখা। তিনি কেন অন্যের লেখা স্ক্রিপ্টে নাটক নির্মাণ করছেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অন্যের স্ক্রিপ্ট নিতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে নেওয়া হয় না তার আর আমার রসায়ন না মেলার ভয়ে। আমি ঠিক যা ভাবছি তা আমি যতটা আমার মতো করে দিতে পারব অন্যজন সেটা নাও দিতে পারেন।

আপনার নাটকের গল্পে ভিন্ন রকমের স্বাদ পাওয়া যায়। এমনটাই বলেন দর্শকরা। এই ভিন্ন স্বাদের ভাবনাগুলো কোথা থেকে পান? এর জবাবে তিনি বলেন, আমার প্রত্যেকটি নাটকের গল্পই বাস্তবতা থেকে নেওয়া। বাস্তব কে ক্যামেরায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। তা ছাড়া প্রতিটা নাটকেই আমি কোনো না কোন ম্যাসেজ দিয়ে থাকি। যেমন- ঠোয়া, জীবন থেকে নেওয়া এসবই বাস্তবতারই বর্হিপ্রকাশ।

এ নির্মাতা শুধু নাটকই নির্মাণ করেননি। ৬৯, ৪২০, হাউসফুল, এফএনএফ, উড়োজাহাজের মতো জনপ্রিয় প্রায় দশটি নাটকের মাধ্যমে ক্যামেরার সামনেও এসেছেন। কিন্তু এসব নাটকে অভিনয় করেছেন অন্যের অনুরোধে। তবে অভিনয় নয় নির্মাতা হিসেবেই ক্যামেরার পিছেনে থাকতে চান রুমেল।

স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। তেমনি একজন স্বপ্নবাজ মানুষ রুমেল। এ স্বপ্নবাজ মানুষটির ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার চলচ্চিত্র নির্মাণ করব। তিনি মনে করেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গেলেই বড় বড় লাইট ক্যামেরা লাগে না। আমি মনে করি, ডিএসএলআর দিয়েও তা সম্ভব। আমি আলিশান আয়োজন ছাড়াও শিল্প নির্মাণ করে দেখাতে চাই।
তিনি আরো বলেন, ক’দিন আগে উত্তম কুমারের সাদা-কালো একটি সিনেমা দেখলাম। সে সিনেমাটি দেখে মন ভরে গেল। কই সেখানে তো আধুনিক এত প্রযুক্তি ছিল না। তবুও প্রতিটি দৃশ্য শিল্প গুণে সমৃদ্ধ। এটা তাহলে কীভাবে সম্ভব হয়েছে।

ইশতিয়াক আহমেদ রুমেল পরিচালিত উল্লেখযোগ্য নাটক-টেলিফিল্মগুলো হলো- কবুতর, ঠোয়া, জীবন থেকে নেওয়া, প্রিয় মা, প্যাভিলিয়ন, ওল্ড ভার্সেস নিউ, যাহা বলিব সত্য বলিব, কবিতা না ভালোবাসা, আমি কিছু বলতে চাই প্রভৃতি।

আড্ডার ফাঁকে কখন যে ঘড়ির কাটা দশটায় তা ঠিক বুঝতেই পারিনি। তাই নিজে থেকেই থামতে হলো। ইচ্ছে ছিল আরো কিছুক্ষণ থাকব। কিন্তু হলো না। কারণ এবার যে বাড়ি ফেরার পালা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top