সকল মেনু

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের আম্বিয়া খাতুন বিশ্বের সবচাইতে বয়স্ক নারী

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: হাজীগঞ্জের আম্বিয়া খাতুন। জন্ম ১৮৮০ সালে। জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী বর্তমানে তার বয়স ১শ’ ৩৪ বছর। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক দেয়া জন্ম সনদে আম্বিয়ার জন্ম তারিখ ২/২/১৮৮০ খ্রিঃ। তবে পরিবারের অন্য সদস্যদের দাবি তার বয়স হবে দেড়শ’ বছর। মান্ধাতার আমলের এ নারী ডিজিটাল যুগে এসে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন। যিনি নিজ চোখে দেখেছেন ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তান আমলের শাসন আর এখন দেখছেন ৪২ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশের শাসন। এসব কিছু দেখার জন্যে মনে হচ্ছে বেঁচে আছেন আম্বিয়া খাতুন। বিধবা হয়েছেন বহু বছর আগে। এতো বয়স হওয়ার পরও তিনি পাননি বয়স্ক ভাতা আর বিধবা হয়েও পাননি বিধবা ভাতা কিংবা অন্য কোনো ধরনের ভাতা। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, তাদের গ্রামের আম্বিয়া বিশ্বে সবচে’ বয়স্ক নারী।
আম্বিয়া খাতুনের বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের দোয়ালীয়া মিজি বাড়ি। স্বামী জিতু মুন্সী ঠিক কবে, কতো সালে মারা গেছেন তার তারিখ মনে নেই। বাড়ির উঠোনে  বয়স্ক একমাত্র পুত্রবধূর সামনে কথা হয় আম্বিয়ার। তিনি বলেন, বাবা পায়ে হেঁটে হজ্বে যান। সেখানে মারা যান। জানতে পারেন লোক মাধ্যমে। আর সেখানেই বাবাকে মাটি দেয়া হয়। বাবা মারা যাবার পার ব্রিটিশ আমলে কয়েক বছর বিয়ে হবে না বলে সরকারিভাবে একটি কথা উঠে। তখন আপন চাচা দায়িত্ব নিয়ে একই বাড়ির সম্পর্কীয় চাচাতো ভাই জিতু মুন্সীর সাথে বিয়ে দেন। সেই তারিখটি খেয়াল না থাকলেও ধারণা করছেন সালটি সম্ভবত ঊনবিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষ বেলায় কিংবা বরাবর বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। ৮ সন্তানের জননী আম্বিয়ার স্বামী-ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনি অনেকেই  অনেক আগে মারা গেছেন। ভাষাগত দিক দিয়ে কয়েক প্রজন্ম বলা হয়ে হলেও আম্বিয়ার ভাষায় নাতি-নাতনির ঘরে পুন্তি আবার পুন্তির ঘরের অনেকেই ইতিমধ্যে বয়স হয়ে মারা গেছেন। নুরুল ইসলাম নামের একটি ছেলে আর তিনি রয়ে গেছেন এখনো এ ধরণীতে। ছেলে বৃদ্ধ বয়সে এবারে হজ করেছেন।
জীবনের এতোগুলো বছর পার হবার পরেও আম্বিয়া এখনো চোখে দেখেন। দাঁত পড়েনি। সামনের পাটির দাঁত আঘাত পেয়ে হারিয়েছেন। গোসল করতে গিয়ে নিজের কাপড় নিজেই কাচেন। নিজের খাবার নিজ হাতেই খেতে পারেন।
নিজের পুত্রবধূ ও নাত বৌদের সহযোগিতায় কথা বলতে গেলে আম্বিয়া বলেন, অতীতের স্মৃতি তেমন একটা মনে নেই। তবে ছোট বেলায় বাড়ির সামনের মাঠে মাছ ধরতেন। সেই মাছগুলো এখন আর দেখা যায় না। ইয়া সাইজের কৈ, পুঁটি, শোল, বোয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের দেশী মাছ। স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে আরো বলেন, আমাদের সময় আম গাছে উঠে আম পাড়তাম, শৈশবের খেলার কথা অনেক কিছুই মনে নেই। ব্রিটিশ আমলে হরতালের সময় হরতালের ঠিক আগে বা পরে বিয়ে হয়েছে এটা মনে পড়ে। আবার এদেশে যখন কাবুলিওয়ালা এসেছে সেই কথাও মনে আছে। আর তেমন একটা কিছু মনে নেই।
পুত্রবধূ নুরুল ইসলামের স্ত্রী সামছুন্নাহার (৭০) বলেন, আমরা শ্বশুর বাড়িতে এসে উনাকে যেমন দেখছি এখনো তিনি তেমনই আছেন। আমরা শুনে আসছি উনার বয়স কমপক্ষে দেড়শ’ হবে। ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা হলে সামছুন্নাহার বলেন, তিনি কোনো ধরনের সরকারি ভাতা পাননি। এতো বয়স হলেও পাননি বয়স্ক ভাতা।
আম্বিয়ার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান মজুমদার বলেন, আমরা শুনেছি উনার ১শ’ ৩৫ বছর হয়েছে। আর ভাতার বিষয়ে আগে কেউ জানায়নি। তবে এবারে যে ভাতা আগে আসবে সেটাই উনাকে দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top