সকল মেনু

চরের ভূমিহীন কৃষকদের সংবাদ সম্মেলন

 ভোলা প্রতিনিধি: ভূমিদস্যু মালেক ও তার সহযোগিদের হামলা-মামলা, জাল-জালিয়াতি ও চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পেতে সরকারের কাছে ৫টি দাবি উত্থাপন করেছেন ভোলার চরফ্যাশনের মুজিব নগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শিকদারের চরের কৃষকরা। ২৭ অক্টোবর সোমবার ভোলা প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ কিষাণী সভার যৌথভাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবী উপস্থাপনা করেন। লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ আইচা থানার অন্তরগত মুজিব নগর ইউনিয়নের শিকদারের চরে স্থানীয় ভূমিহীন মানুষ বসবাস করে আসছে। সরকারী খাস জমির নীতিমালা অনুযায়ী তাদের মাঝে ওই জমি বন্দোবস্তের দাবী জানিয়েছেন তারা। কিন্তু বর্তমানে ওই চরের ভূমিহীন কৃষকদের মূর্তিমান আতঙ্ক ভূমিদস্যু মালেক ও তার সহযোগীরা। জমি বন্দোবস্ত দেয়ার নাম করে কৃষকদের কাছ থেকে নানাভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শিকদারের চরের ভূক্তভোগী কিষাণী নাজমা বেগম অভিযোগে বলেন, দেড় একর জমির জন্য তার কাছ থেকে মালেক ১ লাখেরও বেশী টাকা নিয়েছে। অপর কিষাণী খাদিজা বেগম এরও কাছ থেকে ২ একর জমির জন্য ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়াও মোঃ মোশারেফ এর কাছ থেকে ৪ একর জমির কথা বলে ৬০ হাজার টাকা দাবী করে মালেক গংরা। বর্তমানে মোশারেফ নিরুপায় হয়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ওই জমিতে চাষাবাদ করছে। আঃ মান্নান জানান, তার কাছ থেকেও ৭ হাজার টাকা নিয়েছে ওই মালেক গংরা। কৃষক মোঃ নূরুল ইসলাম জানান, ২ একর জমি বন্দোবস্ত দেয়ার নাম করে ৬০ হাজার টাকা দাবী করে মালেক গংরা। এই বছর ধান চাষের জন্য তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ওই চরের জমি বন্দোবস্তের কোন কার্যক্রম বর্তমান সরকারের নেই। অথচ মালেক গংরা ভূমিহীন ওই কৃষকদের কাছ থেকে জমি বন্দোবস্ত দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অপরদিকে ভূমিদস্যু মালেক সরকারী কিল্লার উপর ঘর নির্মাণ করে মহিলা বাহিনী নিয়ে বসবাস করে আসছে। যদি কোন কৃষক তার কথার বাহিরে যায় তখন তার উপর নেমে আসে মহিলা বাহিনীর নির্যাতন। বর্তমান এহেন পরিস্থিতে স্থানীয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। না কি ভূমিদস্যু মালেক গংদের কাছে প্রশাসন ম্যানেজ হয়ে গেছে। তাদের এই নীরব ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা আরো অভিযোগ করেন, বর্তমান ধান কাটার মৌসূমে ওই চরের কৃষকদের কাছ থেকে ধান কাটার বিনিময়ে প্রতি একরে মালেক গংদের দাবী ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। তা না হলে ধান মালেক গংরা কেটে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। ভয় দেখিয়ে ইতিমধ্যেই মালেক গংদের কাছে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চাষকৃত ধান যাতে করে নির্ভয়ে কেটে ঘরে তুলতে পারেন এমন দাবী করছেন কৃষকরা। এছাড়া তারা সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে খাস জমি বন্দোবস্তের দাবী জানান। সংবাদ সম্মেলনে শিকদারের চরের কৃষকরা যে ৫টি দাবী উত্থাপন করেন তা হলো, শিকদারের চরের সকল ভূয়া ও জাল দলিল বাতিল করে ভূমিদস্যু মালেক গংদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করে এই জালিয়াতদেরকে আইনের আওতায় আনা, আসন্ন ধান টাকা মৌসূমে সন্ত্রাসী মালেখ গংরা যাতে  শিকদারের চরে কোন রকম অস্থিরতা তৈরী করতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনে শিকদারের চরে স্থায়ী পুলিশ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, চাষকৃত ধানই ভূমিহীনদের বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। আর সেক্ষেত্রে ভূমিহীনদের উপর সন্ত্রাসী মালেক গংদের হামলাও প্রায় নিশ্চিত। তাই মালেক গংদের হাত থেকে ভূমিহীনদের চাষকৃত ধান রক্ষায় এবং সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনকে কার্যকরী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা, সমস্যার স্থায়ী সমাধানে শিকদারের চরের সকল খাসজমি সরকারী ভূমি নীতিমালা অনুযায়ী চরে অবস্থানরত প্রকৃত ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে বন্দোবস্ত করা এবং শিকদারের চরে মালেক গংদের চাঁদাবাজী বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ভোলা সদর উপজেলার বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ কিষাণী শাখার সভাপতি শাহ নেওয়াজ মিলন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top