সকল মেনু

লতিফ সিদ্দীকির যোগসাজসে বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতি

  আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম : দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে যেখানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান সেখানে তাঁর মন্ত্রী পরিষদের সদস্যই দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত। তিনি বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেও তাদের লাগাম টেনে ধরতে পারেননি। এবার সদ্য দল ও মন্ত্রীপরিষদ থেকে বহিষ্কৃত বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে টেক্সটাইল মেশিনারিজ ক্রয়ে নানা অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, লতিফ সিদ্দীকির যোগসাজসে বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং  দুর্নীতির মাধ্যমে কলেজে ৫০ কোটি টাকা বিভিন্ন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মেশিনারিজ বিনা টেন্ডারে ক্রয় করা হয়েছে।  কলেজে দীর্ঘদিন ধরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ বস্ত্র দপ্তরের বিভিন্ন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং টেক্সটাইল মেশিনারিজ বিনা টেন্ডারে ক্রয় করা হয়েছে। মানা হয়নি কোন নিয়ম-নীতি। ফলে গচ্ছা গেছে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা। পছন্দসই প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ মূল্যে কাজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কতিপয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে অন্যতম প্রকল্প কর্মকর্তা আ. ছাত্তার শিকদার।
এ ক্ষেত্রে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরিকে (বি.এম.টি.এফ)। বঞ্চিত করেন প্রকৃত ঠিকাদারদের। এ কারণে বস্ত্র দপ্তর ঠিকাদার সমিতির পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবুও থেমে নেই দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার দুর্নীতি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ বিভিন্ন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বিনা দরপত্রে ও উচ্চ মূল্যে কেনা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এতে রাষ্ট্রের প্রায় ৪০ কোটি টাকা গচ্ছা গেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সবকিছুর নাটের গুরু হিসেবে কাজ করেছেন বস্ত্র দপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান ও ছাত্তার শিকদার। টাঙ্গাইলের কালিহাতি এলাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামানুসারে বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে পুঁজি করে কতিপয় দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তারা দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। তাদের জন্য বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পরিণত হয়েছে একটি দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানে। কলঙ্কিত করেছে জাতির জনকের নামে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটি।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রকল্প পরিচালক মো. মনছুরুল আলম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিনা টেন্ডারে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরীর (বি.এম.টি.এফ) মাধ্যমে নিয়মবর্হিভূতভাবে মেশিন ক্রয় করে আসছেন। মেশিন টুলস ফ্যাক্টরীর (বি.এম.টি.এফ) মালিকানায় রয়েছেন তার ভাগ্নে আমিনুল।
প্রকল্প পরিচালক মো. মনছুরুল আলম শুধু উচ্চ মূল্যে টেক্সটাইল মেশিন ক্রয় করেন না, তিনি তার ভাগ্নে আমিনুল ও তার স্ত্রী সুমাইয়া ইসলাম এর মাধ্যমে নিম্নমানের টেক্সটাইল মেশিন ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রকল্প পরিচালকের প্রেরিত আইটেম ও প্রাক্কলিত মূল্য তালিকায় সরবরাহকৃত মেশিনের ব্রান্ড, মডেল ও কান্ট্রি উল্লেখ না থাকায়। ইতালি ও জার্মানীর তৈরি মেশিনারিজ এর দাম আর চায়না ও ইন্ডিয়ার মেশিনারিজ এর দামে পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু ইতালি ও জার্মানীর তৈরি মেশিনারিজ এর দামে চায়না বা ইন্ডিয়ার মেশিনারিজ ক্রয় করা হয়েছে। রহস্যজনক কারণে সুবিধা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে।
অভিযোগে জানা যায়, দুর্নীতিপরায়ণ প্রকল্প পরিচালক মো. মনছুরুল আলম ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বিনা দরপত্রে ও অধিকতর উচ্চমূল্যে ৩০ কোটি টাকার মেশিনারিজ ক্রয় করেছেন। এক্ষেত্রে তিনিসহ সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পকেটে গেছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। সূত্র দাবি করে ৩০ কোটি টাকার মেশিনারিজ ৬ কোটি টাকায় ক্রয় করা যেত। তিনি এটিআই করপোরেশন, এম রহমান এন্ড কোম্পানির হুমায়ুন, চয়ন, আমিনুল, মিজানের মাধ্যমে একের পর এক বিনা টেন্ডারে তার আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছে বলে অভিযোগ করেছে সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রকল্প পরিচালক ছাত্তার শিকদার ডিপিপি’র খুব কাছাকাছি মূল্যে ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকা মূল্যের মেশিনারিজ ক্রয়ের কার্যাদেশ দিয়েছেন। বিনা টেন্ডারে এসব মেশিনারিজ ক্রয় করলে এতেও রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাবে। ১০টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল স্কুলের পিডি রিজভীও বিনা টেন্ডারে মেশিন ক্রয় করার নামে প্রায় কোটি টাকা লুট করে নিয়েছেন। জানা যায়, প্রকল্প পরিচালক আ. ছাত্তার শিকদার, এস.এম শোয়েব আহমেদ, অধ্যক্ষ আ. মান্নান (পাবনা) ও প্রকল্প পরিচালক খুরশিদ ইকবাল রিজভীর পাতানো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওভারসিস মার্কেটিং কোম্পানি, এটিআই করপোরেশন, গ্লোবাল এন্টারপ্রাইজ ও বিপ্লব এন্টারপ্রাইজ এর মালিক বিএনপি নেতা নোয়াখালীর মান্নানকে দিয়ে সাবকন্ট্রাকের মাধ্যমে মেশিন ক্রয়ের কার্যাদেশ প্রদান করে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়েছে।
অতীতে টেন্ডার ছাড়া যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ফেরত নেওয়া এবং এ ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ঠিকাদার সমিতি। ঠিকাদারদের দাবি ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি ক্রয় করলে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা অপচয় রোধ হবে এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top