সকল মেনু

আড়াই হাজার কোটি টাকা লোপাট ঘোড়াশালে ! দুদক অনুসন্ধানে

 মনিরুল ইসলাম: বিদ্যুতে ওভারহোলিং, মেরামত ও ভাড়াভিত্তিক রেন্টাল-কুইক রেন্টালের নামে অতিরিক্ত খরচের অভিযোগ বেশ আগে থেকেই বিদ্যমান। কিন্তু এবার ঘোড়াশালসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে রি-পাওয়ারিং বা পুন:ক্ষমতায়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। যা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।সম্প্রতি ঘোড়াশাল ৬ নম্বর ইউনিট রি-পাওয়ারিংয়ের নামে প্রায় দুই হাজার ৬ শত কোটি টাকা লুটপাটের এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে দুদকের একজন উপপরিচালককে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ওই কর্মকর্তা  হটনিউজ২৪বিডি.কমকে  বলেন, ইতোমধ্যে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকন্দ্র সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা  করা হয়েছে। খুব শিগগিরই বিদ্যুৎ বিভাগের উর্ধ্বতনদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে।  দুদক সূত্রে ওই অভিযোগর বিষয়ে জানা যায়, নতুন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, এর চেয়েও বেশি ব্যয়ে পুরনো কেন্দ্র সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা স্রেফ লুটপাটের মহাপরিকল্পনা। ইতোমধ্যে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পর রি-পাওয়ারিং প্রকল্পের উদ্যোগ নতুন করে এ খাতে হরিলুটেরই আয়োজন। দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, ঘোড়াশাল ৬ নম্বর ইউনিট রি-পাওয়ারিংয়ের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬শ কোটি টাকা। যেখানে ভূমি অধিগ্রহণ ও কেন্দ্র নির্মাণ থেকে শুরু করে উৎপাদনে যাওয়া পর্যন্ত মেগাওয়াটপ্রতি ব্যয় হয় প্রায় ৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ১শ মেগাওয়াট উৎপাদন-ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র স্থাপনে খরচ হয় ৬শ কোটি টাকা, ৫শ মেগাওয়াটে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন, বেজমেন্ট নির্মাণ- এসব খাতে কোনও ব্যয় না থাকার পরও ৪শ মেগাওয়াট উৎপাদন-ক্ষমতাসম্পন্ন ঘোড়াশাল ৬ নম্বর ইউনিটের রি-পাওয়ারিং ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৬শ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দুদক সূত্রে জানা গেছে, ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওই ইউনিটটি অত্যন্ত পুরনো। এর সনাতন প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি মেরামত কঠিন ও খুচরা যন্ত্রাংশ দুষ্প্রাপ্য। ফলে রি-পাওয়ারিং না করে সম্পূর্ণ নতুন কেন্দ্র স্থাপনে খরচ অনেক কম হওয়ার কথা। অন্যদিকে নতুন কেন্দ্রটির মেয়াদও অনেক বেশি হবে। ফলে দেশ দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ-সুবিধা পেত। কিন্তু পুরাতন কেন্দ্র রি-পাওয়ারিং করলে ওই সুবিধা পাওয়া যাবে না। দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, ঘোড়াশাল ৬ নম্বর ইউনিট ছাড়া ঘোড়াশাল ইউনিট ৩ ও চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২টি ইউনিটও একইভাবে রি-পাওয়ারিং এর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। যার মধ্যে ঘোড়াশাল ৩ নম্বর ইউনিটে রি-পাওয়ারিং এর মাধ্যমে ক্ষমতা বাড়ানো হবে ২২০ মেগাওয়াট। আর এর পেছনে সুদাসলে খরচ হবে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ২০১২ সালে ইপিসি কনট্রাক্টের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করার শর্তে দরপত্র আহ্বান করা হয়। তখন একটিমাত্র দরপত্র জমা পড়ায় সেটি অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ফের দরপত্র আহ্বান করার মাধ্যমে কনসোর্টিয়াম অব অ্যালোসথাম (সুইজারল্যান্ড) লিমিটেড ও সিএমসি চায়নাকে কাজ দেওয়া হয়। দরপত্রে এমন সব শর্ত রাখা হয়েছিল যেন এই বিশেষ দুটি কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউ অংশ না নিতে পারে। এক শত মেগাওয়াটের একটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হলে জমি ক্রয়, সঞ্চালন লাইন স্থাপন করার পরও সর্বোচ্চ ৬শ কোটি টাকা খরচ হবে। ঘোড়াশালের কেন্দ্রে এসব কিছুই আছে। সে ক্ষেত্রে ১শ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মাণে সর্বোচ্চ ৪শ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। সেখানে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হওয়াটা এক কথায় লুটপাটের আয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top