সকল মেনু

ফিলিপাইনে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের ‘গর্হিত অপরাধ’

 ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট,হটনিউজ২৪বিডি.কম, ঢাকা: ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ। তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। সেসব অমান্য করেই ইসরাইলের একজন রাষ্ট্রদূতকে নিজ বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়ে নৈশভোজ করালেন ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) জন গোমেজ।
রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে করা তার এহেন এ-কাজকে ‘গর্হিত অপরাধ’ বলে মন্তব্য করেছেন কূটনীতিকরা। এটা স্পষ্টত বিদেশনীতির লঙ্ঘন। পেশাদার কূটনীতিক না হওয়ায় কূটনৈতিক অজ্ঞতা থেকেই তিনি এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলেও মন্তব্য অনেকের। রাষ্ট্রদূত গোমেজের কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে তাকে দেশে ফেরত আসার নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন।

ফিলিপাইনে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ম্যানাসে বারকে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজ বাসায় নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশি এই কূটনীতিক। সেখানে অন্যান্য দেশের মোট ১৮ জন কূটনীতিক অংশ নেন। নৈশভোজটি ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে, নিজ খরচেই আয়োজন করা হয় বলে জানিয়েছেন জন গোমেজ। তিনি জানান, ম্যানাসে বারকে একজন সিনিয়র কূটনীতিক। ম্যানিলা থেকে অবসর নিয়ে চলে যাওয়ার আগে তাই তাকে ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

বিভিন্ন কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে সাক্ষাতের মাধ্যমে তাদের মধ্যে সখ্য হয় বলে জানা গেছে। এমনই  এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত গোমেজের স্ত্রীর কাছে ভারতীয় উপমহাদেশীয় খাবার খাওয়ার দাবি জানান কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতগণ। সেখানে ইসরাইলের এ রাষ্ট্রদূতও উপস্থিত ছিলেন। এরপরেই বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত তার বাসায় ওই নৈশভোজের আয়োজন করেন।

এ নৈশভোজ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ার-উল-আলম বলেন, একজন রাষ্ট্রদূত দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তার দেশের কূটনৈতিক নীতি অনুযায়ীই তাকে চলতে হবে। সে হিসেবে বাংলাদেশের কোনো কূটনীতিক ইসরাইলের কোনো কূটনীতিককে নিমন্ত্রণ করা দূরে থাক, তার সাথে মেলামেশাও করতে পারেন না। এটা গর্হিত কাজ।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব মোফাজ্জল করিম হটনিউজ২৪বিডি.কমকে  বলেন, এদেশের কোনো রাষ্ট্রদূত ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারেন না। তিনিও একে ‘গর্হিত অপরাধ’ বলেই মনে করেন। সাবেক এ-পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা নীতিগতভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে আসছি। ইসরাইলের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান বলেন, এসব ক্ষেত্রে কোনো রাষ্ট্রদূতেরই ব্যক্তিগত অবস্থান বলে কিছু নেই। তিনি তার নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। আমাদের দেশের কোনো রাষ্ট্রদূত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূতকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন না। সেই রাষ্ট্রদূত (ইসরাইলের) ভালো মানুষ হলেও তাকেও এড়িয়ে চলাটাই উচিত ছিল। কোথাও দেখা হয়ে গেলেও হাত মেলানোর আগে একবার ভেবে নেওয়া উচিত।

এ-প্রসঙ্গে বিদেশ মিশনে কর্মরত একজন কূটনীতিক বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, এটা প্রত্যেক কূটনীতিকেরই জানা থাকা উচিত।পেশাদার কূটনীতিক নিয়োগের পরিবর্তে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ বাড়তে থাকায় এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা যারা বিদেশে দায়িত্ব পালন করছি দেশের স্বার্থে অনেক ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা বিসর্জন দিতে হয়। এটাই নিয়ম। কিন্তু সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার কাছে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দেশের স্বার্থকে ছাপিয়ে গেছে।

তবে খানিকটা দ্বিমত পোষণ করেছেন আরেকজন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর। তিনি হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এমন অনেকের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক থাকে। সামাজিক বা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে যোগাযোগ থাকাটা অন্যায় হিসেবে দেখি না। সকলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার একটা ‘অপশন’ আমরা ব্যক্তিগতভাবে রাখতেই পারি।

জন গোমেজ ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ২০০৮ সালে মেজর জেনারেল হিসেবে অবসর নেন। ২০১২ সালে তিনি ম্যানিলোতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান।

ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ এখনও ইসরাইলকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top