সকল মেনু

আড্ডায় ফোটে রাজনৈতিক খই

 সিমলা জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা : দিনের শুরুতে হকারের হাকডাক, ঘোরাফেরা, ক্রেতা আর সাধারণ জনতার স্রোতে মনেই হয়না ক্ষত বিক্ষত কতগুলো লোকের আর্ত চিৎকার আর বাঁচার আকুতি কিংবা ছিন্ন ভিন্ন মৃত দেহের পাশুমুখগুলো থুবড়ে পড়েছিল এখানে। ২১ আগস্টের সেই ছোপ ছোপ রক্তের দাগগুলোও নেই, নেই গ্রেনেড-বারুদের গন্ধ। এখানে সেখানে পড়ে নেই স্প্লিন্টার কিংবা অবিষ্ফোরিত তাজা গ্রেনেড। বিকেল গড়াতেই এখানকার চিত্রপট পাল্টে যেতে থাকে। নেতাকর্মী সমর্থকদের পদভারে রাজনৈতিক গাম্ভীর্যে অন্যরূপ নেয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের  কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে পাল্টে যেতে থাকে সন্ধ্যা-রাতের চিত্রও। জমে ওঠে জম্পেস আড্ডা। রাজনৈতিক চাল চিত্রের খই ফোটে সেই আড্ডার বহুমুখী আলোচনায়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাটার দোকানের পশ্চিম পাশের দেওয়াল ঘেঁষেই ২৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচতলা ভবনটি। এই ভবনেই ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতেই দোতালায় সেই ঐতিহ্যের গন্ধ পাওয়া যায়। গ্যাবডিং কাপড়ের প্যান্টের ওপর নীল-সাদার বুটিকে তৈরি একটি সাদা পাঞ্জাবি পরে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন এক মধ্য বয়সী ভদ্রলোক। রাস্তার পাশের বিশাল আকৃতির ব্যানারে এই লোকটিকে প্রায় দেখা যায়। তাই সহজেই চেনা যায়, ইনি ইসমাইল হোসেন সম্রাট। যুবলীগের মহানগর দক্ষিণের সভাপতি তিনি। দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলেন। বোঝা গেল ব্যস্ততা আছে। দোতালার বাম দিকে যুবলীগের অফিস। মহানগর যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী বসে আছেন।এলাকার রাজনীতি, সমস্যা নিয়ে চলছে আলোচনা। তিন তলায় আওয়ামী লীগের অফিসে তেমন কোন লোকজন নেই। অনেকটা ফাঁকা। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী এই অফিসে এলে যে চেয়ারটিতে বসেন সেটা যথারীতি ফাঁকাই আছে। সেই যে তিনি প্রায় এক বছর আগে শীত বস্ত্র বিতরণ করতে এসেছিলেন তখন তিনি এই চেয়ারটিতে বসেছিলেন। তারপর আর এই চেয়ারটিতে বসা হয়নি শেখ হাসিনার। অফিস কর্মচারী হাফিজের কন্ঠে তাই প্রধানমন্ত্রী আসার প্রতিক্ষা। সন্ধ্যায় এই এভিনিউটায় যেন হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগের অফিস। পূর্ব থেকে পশ্চিম, রাস্তার সবখানেই জমে ওঠে নেতাকর্মীদের আড্ডা। চা আর ফুসকার দোকানের চেয়ারগুলো যেন এক একটি গোল বৈঠকের আয়োজক। ৫ থেকে ১০ জনেরও দলও রয়েছে যারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক আলোচনায় মশগুল। পশ্চিমের অংশটা জুড়ে তিন চারটি গ্রুপে আড্ডা জমে ছাত্রলীগের। পূর্ব প্রান্তের অনেকটা অংশ থাকে যুবলীগের দখলে। আর অফিসের সোজাসুজি নিচের জায়গা জুড়ে আড্ডা জমে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। তবে বেশিরভাগই মধ্যম সারির নেতা-কর্মী থাকে এ সব আড্ডায়। শীর্ষ নেতাদের অনেককেই আর দেখা যায়না এখানে, আগে অহরহ দেখা যেত যাদের। গত এক মাসে বেশ কিছু দলীয় অনুষ্ঠানে হাতে গোনা কয়েকজন মন্ত্রী আর শীর্ষ নেতা আসলেও বেশিরভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যাতায়াত কমেছে বলে জানিয়েছেন নিয়মিত যাতায়াতকারী নেতা-কর্মীরা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ অফিসের প্রাণ ভোমরা যাকে বলা হয়, সেই মায়াও আগের মতো আর আসেননা। নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে ও মেয়ের জামাইয়ের নাম উঠে আসায় বেকায়দায় পড়ে যান মন্ত্রী। এরপর থেকে তিনি এখানে আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন।

ওয়ারির তাজুল ইসলাম যুবলীগের একজন কর্মী, কোন পদ নেই দলে। তারপরও সপ্তাহের তিন চার দিন তার সময় কাটে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের এই সেন্ট্রাল অফিসে। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত আড্ডা দেন তিনি।

২১ আগস্ট গ্রেনেড চার্জের স্থানটিতে যেখানে আইভি রহমানের অস্থায়ী স্মৃতি ফলক রয়েছে সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো তাজুল। কথায় কথায় সে জানালো, আগের মতো নেতা কর্মীরা আর আসেননা। আগে এই এভিনিউয়ের প্রায় পুরাটা জুড়ে আড্ডা জমে উঠতো। শুধু রাজধানী নয় , ঢাকার বাইরে থেকেও যারা আসেন তারাও সময় সুযোগ পেলেই বিকেলে একবার ঢু মেরে যান আওয়ামী লীগ অফিসে। কেন্দ্রীয় নেতারাও আসতো মাঝে মধ্যে। কিন্তু এখন ততটা দেখা যায় না।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ দলীয় কোন অনুষ্ঠান থাকলেই শুধু আসেন দলের কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে। সৈয়দ আশারফ রয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর দায়িত্বে। রাষ্ট্রীয় কাজে বেশি ব্যস্ত থাকায় দলীয় কার্যালয়ে খুব একটা আসার সময় হয় না তার। এমন কথাই বলছিলেন কোতয়ালী থানা যুবলীগের সহসভাপতি স্বপন আহমেদ।
তিনি বলেন, নেতারা আসেন শুধু দলীয় কার্যক্রমগুলোর সময়। এছাড়াও আসেন, তবে তা নিজস্ব অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে। তবে সেই আসা-যাওয়ার সংখ্যাটা খুবই কম। তার ভাষায়, এখানে মুলত: প্রতিদিন যারা আসেন, তাদের অধিকাংশই ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের মাঝারি পর্যায়ের নেতা।

মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ মোহাম্মদ আব্দুল জলিল জানালেন, তিনি অকেক্ষণ ধরে তার এলাকার নেতাকর্মীদের খুঁজছেন কিন্তু কাউকেই দেখছেন না। কারন, নেতা কর্মীরা আগের মতো আর আসেন না।

বাচ্চু এই এভিনিউয়ের ভাসমান বাসিন্দা। এখানে পান সিগারেট বিক্রি করে বেচেঁ আছে বাচ্চু। রাস্তার এমাথা থেকে ওমাথা ঘুরে ঘুওে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে পান সিগারেট বিক্রি করে সে। বাচ্চুর ভাষ্য, গত সংসদ নির্বাচনের আগে এই অফিসে যত দলীয় নেতা-কর্মী আসতো এখন তার থেকে অনেক কম আসে। সে গাড়ীতে পতাকা দেখে বুঝতে পারে মন্ত্রীরা এসেছে কিনা। কিন্তু এখন পতাকাবাহী গাড়ী খুবই কম দেখে বাচ্চু।

আওয়ামীলীগ অফিসের ঠিক নিচে দক্ষিন পাশে রাস্তার ওপর চায়ের দোকান নিয়ে বসে আছে আল আমীন। চা বানাতে বানাতে কথা বলছিল অনর্গল। তার আপসোস, নেতাকর্মীদের জমজমাট আড্ডা না থাকায় বেচাবিক্রিও কম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top