সকল মেনু

নেপাল জলবিদ্যুত পিছিয়ে চার কারণে

 হটনিউজ ডেস্ক : ভু-রাজনীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশ এবং আন্তদেশীয় গ্রিড নির্মাণের জটিলতায় জলবিদ্যুতে পিছিয়ে পড়েছে নেপাল। এ খাতের বিশেষজ্ঞরা হটনিউজ২৪বিডি.কমকে জানান, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক সম্ভাবনার দেশ নেপাল। অথচ দেশটির ভু-রাজনীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা, নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি রিজার্ভেশনে পরিবেশ হুমকিতে পড়বে এমন আশঙ্কা এবং আন্তদেশীয় গ্রিড নির্মাণের জটিলতায় প্রতিনিয়তই তারা পিছিয়ে পড়ছে। তারা বলেন, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও জলবিদ্যুতে নেপালের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে সে দেশেরর ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলো। পঞ্চাশ দশকের দিকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো এখনও ঠিক একই পরিমাণ উৎপাদন করছে দেশটি।  আর এ খাতে সফলতা না মেলার মূলে রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিত এবং প্রতিবেশি দেশের নানান চাপ।

এখাতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) এর জন্য বিপুল পরিমাণ লাইসেন্স দিয়েও কোন কাজে আসছে  না। সবারই একই কথা বিনিয়োগ আসবে তখনই যখন এর রির্টান আসবে। আর দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার ও পাঞ্চাযানিয়া হাইড্রো পাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক গোবিন্দ শর্মা পোখারেল হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘নেপালে জলবিদ্যুতে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি সমাধানে না হওয়া পর্যন্ত এ খাতে তেমন কোন সফলতা আসবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে প্রতিবেশি দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেপাল সফরের পর এ খাতের বিস্তার খানিকটা ঘটতে পারে।

পরিবেশের হুমকি প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তা মূলত হিমালয়ের নেপাল অংশে রানওয়ে নদী থেকে। এসব নদীতে বর্ষাকালে পানি হয়। আবার শীতকালে দেখা দেয় পানির ঘাটতি।

এ কারণে সাধারণত দুই ধরণের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়ে থাকে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে রানওয়ে প্লান্ট যেখানে ড্যাম বা পন্ডিংয়ের প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ পানি রিজার্ভ করার দরকার হয় না। আরেকটি হচ্ছে রিজার্ভ করা প্লান্ট। অর্থাৎ যেখানে পানির স্রোত কম থাকে সেখানে ড্যাম দিয়ে পানি পন্ডিং করতে হয়।

এতে নদীর গতিপথে বাধা আসে। ফলে পরিবর্তন আসে স্রোতের গতিতে। আর এতে দেখা দেয় পরিবেশগত নানা সমস্যা। ফলে সে দেশের পরিবেশবাদীরা এসব জায়গায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বাধা দিয়ে থাকেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রসঙ্গে আইসিআই মুডের (ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউনটেইন ডেভলপমেন্ট) সিনিয়র হাইড্রোলজিস্ট ড. এস এম ওয়াহিদ হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অতীতে ভারতের উত্তরা খানে সাতটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনাও আছে।

তিনি বলেন, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখানে বিনিয়োগের একটি ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে কেউ যখন বিনিয়োগ করতে যাবে তখন তাদের প্রয়োজন হয় বীমার। তবে এই সব বীমার ক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণ তেমন একটা জানা থাকে না। এ কারণে বিনিয়োগও এতো সহজ না। এ জন্য এসব কারিগরি দিকগুলো মাথায় রেখেই বিনিয়োগ করতে হয়।

ড. এস এম ওয়াহিদ আরো বলেন, আমরা শুধু এনার্জিকে এনার্জি দিয়ে চিন্তা করি। এ থেকে  বেরিয়ে আসতে হবে। এটা বৃহৎ আঙ্গিকে ভাবতে হবে। শুধু এনার্জি নয়, কৃষি, পানি, পর্যটনসহ নানান খাত নিয়ে ভাবতে হবে। প্রতিটি সেক্টর নিয়ে প্লানিং করতে হবে। সবগুলো পরিকল্পনা এক সঙ্গে করে একটি বেসিনে নিয়ে বাংলাদেশকে নেপালে আসতে হবে। যা উন্নত দেশগুলো করে থাকে। আর এজন্য তথ্য উপাত্ত নিয়ে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। যেন সুযোগ আসা মাত্র কাজে লাগানো যায়।

আন্তদেশীয় গ্রিড নির্মাণের বিষয়ে নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘নেপাল ও ভারতের মধ্যে এখনো গ্রিড কানেক্টিভিটি গড়ে ওঠেনি। নেপালের ডালকে বাঁধ ও ভারতের মোজাফফরাবাদ পর্যন্ত কানেক্টিভিটি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। যখন কানেক্টিভিটি হবে তখন এ গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারবে।’
তিনি বলেন, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি অতো সহজ নয়। এটি এখনো বোঝাপড়ার পর্যায়ে রয়েছে, যা এখনো অনেক সময়ের ব্যাপার।

নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) সূত্রে জানা গেছে,  দেশটিতে বর্তমানে মোট বিদ্যুতের চাহিদা তিন হাজার মেগাওয়াট, এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৭০৩ মেগাওয়াট। তবে শীতকালে উৎপাদন আরো কমে যায়। এসময় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ মেগাওয়াট। মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৯৪.৩৭ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে গৃহস্থালির কাজে, অবাণিজ্যিক কাজে ০.৫৮ শতাংশ, বাণিজ্যিক কাজে ০.৫৪, শিল্পে ১.৪৭ ও অন্যান্য কাজে ৩.০১ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, হিমালয় থেকে উৎসারিত নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে হিমালয় থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদীর ওপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে ভারত, পাকিস্তান, চীন, ভুটান ও  নেপাল।

এ জন্য বিভিন্ন নদীর ওপর মোট ৫৫৩টি বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ভারত নির্মাণ করবে ৪২৯টি, পাকিস্তান ৪৮টি, ভুটান ২১টি, নেপাল ৫৪টি ও চীন একটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top