সকল মেনু

ব্যক্তিমালিকানাধীন বন্ধ শিল্পকারখানা উদ্ধার করা হবে

 স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,হটনিউজ২৪বিডি.কম, ঢাকা: ব্যক্তিমালিকানায় থাকা বন্ধ শিল্পকারখানাগুলো তাদের হাত থেকে উদ্ধার করে ফের চালুর ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সচিবালয়ে বস্ত্র ও  পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে  এসে এ ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শিল্পকারখানাগুলোকে ব্যক্তিমালিকানায় বিক্রির পদক্ষেপ নেবো না। বরং যেসব শিল্পকারখানা চালু করবে বলে সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তিমালিকানায় কিনে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যারা চালু করেনি, তাদের হাত থেকে কারখানাগুলোকে উদ্ধার করতে হবে। তারপর সেগুলো চালুর ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা কারখানাগুলো চালু করবে, তাদের হাতে দিতে হবে। শিল্পকারখানাগুলোর পাশে থাকা জায়গাগুলো কাজে লাগানোর ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ব্যক্তিমালিকানায় থাকা কলকারখানাগুলো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে কলকারখানাগুলো  প্রাইভেটাইজেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর ফলে আমরা দেখেছি, অনেকেই শিল্প-কারখানাগুলো কিনেছেন পানির দামে। কেনার পর এর কাঁচামাল, কেমিক্যাল, মেশিনারিজ টুকটাক এগুলো বিক্রি করলে কেনার পয়সা উঠে যায়; এরপর তারা আর কারখানা চালু করেনি। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, নাবিস্কো বিক্রি হয় তখন মাত্র ৪ লাখ টাকায়। এর কেমিক্যাল, মেশিনারিজ বিক্রি করে কেনার টাকা উঠে যায়। পরে তারা আর শিল্প চালু করেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল বন্ধ শিল্প-কারখানাগুলো চালু করা। আমরা ৯টি বন্ধ টেক্সটাইল মিল শ্রমিক ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে যৌথভাবে চালু করি। দুর্ভাগ্য, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের সুযোগও বন্ধ হয়ে যায়। কারখানাগুলোর অনেকগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এগুলো আবার চালুর ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শিল্পায়নে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, তখন বাঙালিদের তেমন কোনো ইন্ডাস্ট্রি ছিল না, কিছু শেয়ারে ছিল। বেশির ভাগই ছিল পাকিস্তানের মালিকানায়। স্বাধীনতার পর এগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সেই অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শিল্প-কারখানাগুলোকে বাঁচিয়ে তুলতে সেগুলোকে জাতীয়করণ করে জনগণের মালিকানায় কারখানাগুলো চালু করেন।

কলকারখানা বন্ধ হওয়া ও ব্যক্তিমালিকানায় চলে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ’৭৫ পর কলকারখানাগুলো আর ভালোভাবে চলেনি। বরং সারা বাংলাদেশে অনেক কারখানা ব্যক্তিমালিকানায় দেওয়ায় অনেকগুলোই পরিত্যক্ত পড়ে থাকে।

পাটশিল্প ধ্বংসে ’৯১ সালের বিএনপি সরকার ও ২০০১-এর বিএনপি-জামায়াত সরকারকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯১ সালে আমরা তখন অপজিশনে (বিরোধীদল) ছিলাম। আমি প্রত্যক্ষদর্শী। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে তখনকার সরকার একটা মেমোরেন্ডাম করে আসে বাংলাদেশের পাটকলগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বিশ্বব্যাংক ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্বব্যাংক তাদের দেশে পাটকল স্থাপনে সহায়তা দেবে। তারা পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে এটা এখনো বোধগম্য নয়, একটা দেশের সরকার কীভাবে এ ধরনের একটা সমঝোতা স্মারক সই করে আসে! আমি তখন পার্লামেন্টে বলেছিলাম, যে বাজার বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে, সে বাজার কীভাবে আমরা আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে অন্যদেশকে দেই!

তিনি বলেন, এতে গেল ’৯১ থেকে ’৯৬-এর কথা। শুধু তাই-ই নয়, তারা ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয়। তারা একে একে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলো বন্ধ করে দেয়।

আদমজী জুট মিল প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এটা ছিল একটা শিল্পনগরী। এটা বন্ধ করে দেওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যায়। সেখানে স্কুল ছিল, মসজিদ ছিল; সেগুলো সব বন্ধ হয়ে যায়।

এ সময় দেশে পাটের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনে জোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পাট নিয়ে চীন উন্নত কাপড় উৎপাদন করছে। এছাড়াও আমাদের পাট দিয়ে বিভিন্ন বিশ্বের দেশ নান ধরনের পণ্য তৈরি করছে। আমরা সে অবস্থায় কেন এখনও পৌঁছাতে পারিনি! আমাদের সেই ভাবে কাজ করতে হবে; যাতে করে আমরা দ্রুতই তাদের অবস্থায় পৌঁছাতে পারি।

আন্তর্জাতিক পাটের বাজার উদ্ধার করতে নির্দেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন দেশে কোন ধরনের পাটজাত পণ্য রফতানি করা যায়, তা খুঁজে বের করতে হবে। পাটের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে আমাদের।

লেডি ডায়নার বিয়ের কাপড় তৈরি হয়েছিল রাজশাহী সিল্ক দিয়ে, এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকেই হয়তো বিষয়টি জানেন না। সে সময় আমাদের বস্ত্র শিল্প আরো সমৃদ্ধ ছিল। পূর্বের মতো আমাদের এ বস্ত্র শিল্পকে আরো বিকশিত করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ এখন অনেক পরিবেশ সচেতন। পরিবেশবান্ধব পণ্য চায় তারা। আর এ জন্য পাটের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এক সময় পাটের সুতার শাড়িছাড়া গ্রামে বিয়েই হতো না। এখন সিনথেটিকের যুগে আমরা সব হারিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট বন্ধ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যা হতে দেওয়া যাবে না। আমরা এটাকে নিজেদের গবেষণা কেন্দ্রে দাঁড় করাতে চাই।

এ সময় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ও প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top